স্পোর্টস ডেস্ক : জহুরী জহর চিনতে ভুল করেন না। বহুকালের পুরনো এই প্রবাদকে আবারো সত্যি বলে প্রমাণ করলেন শচীন টেন্ডুলকার। কয়েক বছর আগে যখন লিটল মাস্টার প্রথমবারের মতো পৃথ্বী শ’কে দেখেছিলেন, সেদিনই বলে দিয়েছিলেন এই ছেলে এক দিন জাতীয় দলের হয়ে খেলবে।
শচীনের সেই ভবিষ্যদ্বাণীকে সত্যি বলেই প্রমাণ করলেন পৃথ্বী। আর শুধু প্রমাণই নয়, তিনি যে শীর্ষ পর্যায়ে খেলার জন্য যথেষ্ট যোগ্য, সেটাও প্রমাণ হয়ে গেল প্রথম দিনেই। রাজকোটে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে তার করা ১৩৪ রান নিয়ে নিজেকে কেবল প্রমাণই করলেন না পৃথ্বী, এক গাদা মাইলফলকও নিজের করে নিলেন।
৯৯ বলে অভিষেক ম্যাচে টেস্ট সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন পৃথ্বী। অভিষেকের ম্যাচে দ্রুত সেঞ্চুরি করার তালিকায় তৃতীয় স্থানে নাম তুলেন তিনি। এই তালিকায় সবার উপরে আছেন ভারতের ওপেনার শিখর ধাওয়ান। ২০১২-১৩ মৌসুমে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে নিজের অভিষেক টেস্টে ৮৫ বলে সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন ধাওয়ান।
সবচেয়ে কম বয়সে অভিষেকেই সেঞ্চুরি করার তালিকায় চতুর্থ স্থানে পৃথ্বী। ১৮ বছর ৩২৯ দিনে সেঞ্চুরি করলেন তিনি। তবে ১৫তম ভারতীয় খেলোয়াড় হিসেবে এই কীর্তি গড়লেন পৃথ্বী। সবচেয়ে কম বয়সে অভিষেক টেস্টে সেঞ্চুরির রেকর্ড বাংলাদেশের মোহাম্মদ আশরাফুলের। ১৭ বছর ৬১ দিনে অভিষেক টেস্টেই সেঞ্চুরি করেছিলেন আশরাফুল।
ভারতের মধ্যে সবচেয়ে কম বয়সে সেঞ্চুরি করা দ্বিতীয় খেলোয়াড় হলেন পৃথ্বী। এই তালিকায় সবার উপরে আছেন দেশটির মাস্টার ব্লাস্টার ব্যাটসম্যান শচীন টেন্ডুলকার। ১৭ বছর ১০৭ দিনে সেঞ্চুরি করেছিলেন টেন্ডুলকার।
কম বয়সে ভারতের পক্ষে অভিষেকে সেঞ্চুরি করার তালিকায় সবার উপরে নাম লিখিয়েছেন পৃথ্বী। ১৮ বছর ৩২৯ দিনে সেঞ্চুরি করেন তিনি। এত দিন এই তালিকায় সবার উপরে ছিলেন আব্বাস আলী বেগ। ১৯৫৯ সালে ম্যানচেস্টারে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ২০ বছর ১২৬তম দিনে নিজের অভিষেক টেস্টে সেঞ্চুরি করেন বেগ।
শচীন স্মৃতিচারণা করে টাইমস অব ইন্ডিয়াকে বলেন, ‘জগদীশ চাভান নামে আমার এক বন্ধু এক দিন পৃথ্বীকে দেখতে বলেছিল। ও জানায় ছেলেটি আমার সঙ্গে দেখা করতে চায়। তখন ও খুব ছোট। এক দিন দেখা হয় পৃথ্বীর সঙ্গে। প্রথম দর্শনেই জগদীশকে বলেছিলাম, এই ছেলে এক দিন ভারতের হয়ে খেলবে। আমার এখনো মনে আছে ওকে সেদিন বলেছিলাম, তোমাকে দেখে ভবিষ্যতের ভারতীয় ক্রিকেটার মনে হচ্ছে। আমার কথা মনে রেখ, এক দিন তুমি ভারতের হয়ে খেলবে।’
জাতীয় দলের হয়ে পৃথ্বীর একমাত্র ইনিংস দেখে অনেকেই তার মধ্যে শচীন টেন্ডুলকারের ছায়া দেখতে শুরু করেছিলেন। প্রথম দিনের দেখায় শচীন কি দেখেছিলেন তার মধ্যে? কিংবদন্তিতুল্য এই ব্যাটসম্যান বলেন, ‘যেভাবে সে বলের সঙ্গে চোখের সমন্বয় করে সেটি সত্যি অসাধারণ। লাইন, লেংথ ধরতে পারে দারুণভাবে। ওই বয়সে ব্যাটিংয়ে কেউ শক্তি প্রয়োগ করতে পারে না। বয়সের সঙ্গে চলে আসে। কিন্তু টেকনিক ক’জনের ঠিক থাকে? তখনই বলেছিলাম, পৃথ্বী প্রাকৃতিকভাবে গড়ে ওঠা এক প্রতিভা। ও ভারতীয় ক্রিকেটের জন্য একটা বিশেষ উপহার। আমার মনে হয়েছিল, সবার ভেতর এই গুণ থাকে না, যা ওর মধ্যে আছে। টেকনিকে পৃথ্বী প্রায় নিখুঁত হলেও তার গ্রিপ নিয়ে অনেক কোচই খুশি নন। কিন্তু টেন্ডুলকার গ্রিপ না বদলানোরই পরামর্শ দিয়েছিলেন, ‘যদি কেউ তোমাকে ব্যাটিং গ্রিপ পরিবর্তন করতে বলে, তাহলে তাকে আমার সঙ্গে কথা বলতে বলবে।’
শচিন মনে করেন, ক্যারিয়ারের শুরুতে পৃথ্বীর খুঁত না ধরে তাকে নিজের খেলা খেলতে দেওয়াটা জরুরি। তিনি বলেন, ‘পরিবর্তন আসবেই। এই পর্যায়ের ক্রিকেটে নিয়মিত খেলতে থাকলে পরিবর্তনকে কেউ আটকাতে পারবে না। তবে, এই মুহূর্তে ওর সহজাত ক্রিকেট খেলাটা জরুরি। এখন ওর খুঁত তাই না বের করাই ভালো।’