সবকিছু বাইডেনের অনুকূলে কোর্টে গেলে ট্রাম্পের

আলী রীয়াজের বিশ্লেষণ


ঠিকানা রিপোর্ট : আগামী ৩ নভেম্বর আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। বিশ্বব্যাপী আলোচিত এই নির্বাচনের আর মাত্র এক সপ্তাহ বাকি। নির্বাচন নিয়ে আগাম কথা বলা কঠিন। অনেক সময় বিস্ময়কর অনেক কিছু অপেক্ষা করে। আগাম কি ঘটবে তা বলা কঠিন। তবে এখন পর্যন্ত সামগ্রিকভাবে যা দেখতে পাচ্ছি, তাতে করে এখনো পর্যন্ত সব কিছু ডেমোক্র্যাটিক প্রার্থী, সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের অনুকূলে রয়েছে। অন্য দিকে রিপাবলিকান পার্টি চেষ্টা করবে সুইং স্টেটগুলোর ফলাফল নিয়ে বিতর্ক সৃষ্ট করে সেটিকে সুপ্রিম কোর্টে নিয়ে যেতে। আর সুপ্রিম কোর্টে গেলেই ফলাফল প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অনুকূলে যাবে- এই কথাগুলো বলেছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষক এবং ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সির প্রফেসর ড. আলী রীয়াজ। আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচন নিয়ে ড. আলী রীয়াজের বিশ্লেষণ হচ্ছে- সামগ্রিকভাবে এখনো সব কিছু সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের অনুকূলেই রয়েছে। তবে জো বাইডেনের জয়লাভ করার ক্ষেত্রে দুটো বিপদ রয়েছে। প্রথমত, শেষ পর্যন্ত তিনি সুইং স্টেট পেনসিলভেনিয়ায় জয়লাভ করতে পারবেন কি না।

পেনসিলভেনিয়ায় জয়লাভ করলে জো বাইডেনের জন্য বড় ভূমিকা পালন করবে। দ্বিতীয়ত, মেইলিং ভোটগুলোর গণনার জন্য আমাদের শেষ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে কি না। জো বাইডেনকে জয়লাভ করতে হলে ২০১৬ সালের নির্বাচনে হিলারি ক্লিনটন যেসব স্টেটগুলো জয়লাভ করেছেন, সেইসব স্টেটগুলো জো বাইডেনকে জয়লাভ করতে হবে। সেই সাথে পেনসিলভেনিয়া, মিশিগান এবং উইনসকনসিন পুনরুদ্ধার করতে হবে। তবে আপত দৃষ্টিতে যা দেখা যাচ্ছে, তাতে করে পেনসিলভেনিয়ায় জো বাইডেনকে অবশ্যই জয়ী হতে হবে। যদিও এখনো পর্যন্ত জরিপে জো বাইডেন সুইং স্টেট পেনসিলভেনিয়া, মিশিগান, ফ্লোরিডা, নর্থ ক্যারোলিনা এবং ওহাইও এগিয়ে রয়েছে। তবে পেনসিলভেনিয়ায় জয়লাভ করলে সব কিছুই সহজ হবে। মোর্দ্দা কথা জো বাইডেনের হোয়াইট হাউজে যাওয়ার একমাত্র সহজ পথ হচ্ছে পেনসিলভেনিয়ায় জয়লাভ করা। অন্য সুইং স্টেটগুলোতে হারলেও কোনো অসুবিধা নেই। অন্য দিকে এবারের নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের পুনরায় জয়লাভ করা কঠিন হবে। কারণ তিনি নিজ দলের মধ্যেই যুদ্ধে লিপ্ত রয়েছেন। আরেক প্রশ্নের জবাবে ড. আলী রীয়াজ বলেন, মানুষের মধ্যে এবার যে পরিমাণ আগাম ভোট দেয়ার প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। তাতে বলা যায় আমেরিকার মানুষ পরিবর্তন চায়। আমি আশাবাদী এবারের নির্বাচনে রেকর্ড পরিমাণ ভোট পড়বে। তিনি বলেন, যখনই পরিবর্তন হয় তখনই মানুষ ব্যাপাক হারে ভোট দেন। ২০০৮ সালেও বেশি ভোট পড়েছিল, যা দেখা যায়নি ২০১২ ও ২০১৬ সালে। তিনি বলেন, মানুষ পরিবর্তনের আশাতেই দীর্ঘলাইনে দাঁড়িয়ে কষ্ট করে ভোট দিচ্ছেন। আর বেশি ভোট দেয়ার মানেই হচ্ছে পরিবর্তন। এটা ভালো লক্ষণ। আর যা যাবে জো বাইডেনের অনুকূলেই। কি কারণে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প পরাজিত হতে পারেন- এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মহামারী করোনা নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতাই প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের পরাজয়ের অন্যতম কারণ হতে পারে। করোনা মহামারীতে আমেরিকার প্রতিটি পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে কেউ করোনায় আক্রান্ত হয়ে কেউ মৃত্যুবরণ করেছেন, কেউবা অসুস্থ হয়েছেন, কেউবা চিকিৎসাও পাননি। অন্য দিকে অর্থনৈতিক মন্দার বিষয়টিও রয়েছে। একটি পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হলে ফেডারেল সরকার যেভাবে সহযোগিতা করা দরকার, ট্রাম্প প্রশাসন তা করেনি। সহযোগিতা নিয়ে আবার তারা রাজনীতি করেছেন। যে কারণে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার ফেডারেল অর্থ পাচ্ছেন না। যার প্রত্যক্ষ এবং পরক্ষো প্রভাব পড়বে নির্বাচনের উপর। এটাই ট্রাম্পের জন্য বিপদ। ২০১৬ সালের নির্বাচনেও জনমত জরিপে হিলারি এগিয়ে ছিলেন, শেষ পর্যন্ত তিনি পরাজিত হয়েছেন, এই রকম একটি ভীতি মানুষের মধ্যে এবার লক্ষ্য করা যাচ্ছে- এই প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, এটা সত্যি যে এই রকম একটি ভীতি মানুষের মধ্যে রয়েছে। তবে আমি বলতে পারি ন্যাশনাল জরিপ ২০১৬ সালে ভুল প্রমাণিত হয়নি। ন্যাশনাল জরিপে দেখানো হয়েছে হিলারি ২ শতাংশ এগিয়ে ছিলেন। নির্বাচনে তা প্রমাণিত হয়েছে। তবে পদ্ধতিগত সমস্যা ছিল, যে করণে হিলারি ইলেকট্রোরাল ভোটে পরাজিত হয়েছিলেন। বড় কথা হচ্ছে মানুষ ভোট দেয়ার আগে যা বলে অনেক ক্ষেত্রে ভোট দিতে গিয়ে তা রক্ষা করেন না। সেটি অবশ্য আরেকটি সমস্যা। তবে যে প্রেসিডেন্ট দিনে প্রায় ৫০টি মিথ্যা কথা বলেন, তার ক্ষেত্রে এবার তা কাজ নাও করতে পারে। নির্বাচন নিয়ে মামলার প্রশ্নের তিনি বলেন, এবারের নির্বাচনে রিপাবলিকান পার্টি সুইং স্টেটের ভোট নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টির চেষ্টা করবে এবং তারা তা সুপ্রীম কোর্টে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করবে। আর ফলাফল যদি রিপাবলিকানরা সুপ্রিম কোর্টে নিয়ে যেতে পারে সে ক্ষেত্রে ফলাফল ট্রাম্পের অনুকূলে যাবে। কারণ বর্তমান সুপ্রিম কোর্টে বিচারপতির অবস্থান হচ্ছে ৬-৩।