সবাইকে কাঁদিয়ে চলে গেলেন মাহবুব আলী বুলু

ঠিকানা রিপোর্ট: প্রবাস বন্ধু, জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান, যুক্তরাষ্ট্র জাতীয় পার্টির সভাপতি এবং প্রবাসের অত্যন্ত জনপ্রিয় মুখ মাহবুব আলী বুলু সবাইকে কাঁদিয়ে চলে গেলেন না ফেরার দেশে। গত গত ২৮ এপ্রিল দুপুর ১২টা ১০ মিনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় লং আইল্যান্ডের জুইস হাসপাতালে তিনি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন (ইন্নালিল্লাহে…. রাজেউন)। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিলো ৬৪ বছর। মৃত্যুকালে তিনি মা, স্ত্রী, দুই ছেলে, ৪ ভাই, আত্মীয় স্বজনসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। সদালাপি মাহবুব আলী বুলুর মৃত্যুতে পুরো প্রবাস কম্যুনিটিতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। গত ২৯ এপ্রিল বাদ জোহর জ্যামাইকা মুসলিম সেন্টারে জামাজে জানাজা শেষে ঐ দিন রাতে বুলুর মরদেহ বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেয়া হয়। মরদেহের সাথে স্ত্রী কুলসুম বেগম, ছেলে মোহাম্মদ রাজা, মোহাম্মদ নোমান বাংলাদেশে গেছেন। সেখানে আরেকটি জানাজা শেষে তাকে নীলফামারির ডোমারে পারিবারিক গোরস্থানে দাফন করা হবে বাংলাদেশ সময় ২ মে। ঢাকায় নেয়ার পর জাতীয় পার্টির বনানী কার্যালয়ে মাহবুব আলী বুলুর দ্বিতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজা শেষে তার লাশ নীলফামারির পথে রাওয়ানা হয়েছে বলে জানিয়েছেন হাসানুজ্জামান হাসান।
মাহবুব আলী বুলু গত কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশেই থাকতেন। তার স্ত্রী এবং সন্তানরা নিউইয়র্কে বসবাস করতেন। বাংলাদেশে থাকা অবস্থায় গত ২১ মার্চ সকালে ঢাকার নাজিম উদ্দিন রোডস্থ নিজ বাসায় নাস্তা করার পর তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। মাথায় প্রচন্ড ব্যথা শুরু হলে তাকে সাথে সাথে ঢাকার এ্যাপলো হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এ খবর নিউইয়র্কে পৌঁছলে বুলুর স্ত্রী এবং বড় ছেলে বাংলাদেশে চলে যান। বাংলাদেশে গিয়ে তারা মাহবুবল আলী বুলুকে গত ২৮ মার্চ নিউইয়র্ক নিয়ে আসেন। নিউইয়র্কে এনেই তাকে কনিআইল্যান্ড হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। পরীক্ষা-নিরীক্ষায় মাহবুব আলী বুলুর লাঙ ক্যান্সার ধরা পড়ে এবং ক্যান্সার মাথায় ছড়িয়ে পড়েছে বলে ডাক্তারগণ নিশ্চিত হন। তার মাথায় ছিলো অসংখ্য টিউমার। হাসপাতালে ডাক্তাররা বার বার বৈঠক করেও কোন সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারেননি। অগত্যা তাকে ২ এপ্রিল লংআইল্যান্ডের জুইস হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। জুইস হাসাপাতালে ডাক্তাররা তাকে প্রথমে কেমো দেয়ার সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু দুটো কেমো দেয়ার পরই তার অবস্থার আরো অবনতি হতে থাকে। এক পর্যায়ে তিনি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। অবশেষে কয়েক সপ্তাহ ডাক্তারদের নিবিড় পর্যবেক্ষণে থেকে গত ২৮ এপ্রিল মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন।
মাহবুবর রহমান বুলু নব্বইর দশকে আমেরিকায় এসেছিলেন। আমেরিকায় এসে নিউইয়র্কেই বসতি স্থাপন করেন। অত্যন্ত বিনয়ী মাহবুব আলী বুলু প্রবাসে বিভিন্ন কর্মকান্ডের সাথে জড়িত ছিলেন। বিশেষ করে নর্থ বেঙ্গলের মানুষের তিনি ছিলেন অকৃত্রিম বন্ধু। নিউইয়র্কেই তিনি বহু সংগঠনের জন্ম দিয়েছিলেন। প্রতিষ্ঠা করেছিলেন যুক্তরাষ্ট্র জাতীয় পার্টি। এ ছাড়াও তিনি প্রবাসের সকল আন্দোলন এবং সংগ্রামে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন।
তিনি স্বদেশে ও প্রবাসে একাধিক সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা। বৃহত্তর রংপুর জনকল্যাণ সমিতি, ডাউন-টাউন বাংলাদেশী বিজনেস এসোসিয়েশন, আন্তর্জাতিক লোক-সঙ্গীত সম্মেলন ইত্যাদি তার হাতে গড়া। জনাব বুলুর আকস্মিক প্রয়াণে বিভিন্ন সংগঠন ও শুভানুধ্যায়ী গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। বিশাল শোক-সভার আয়োজন করছে যুক্তরাষ্ট্র জাতীয় পার্টি। ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হাজ্বী আব্দুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক আবু তালেব চৌধুরী চান্দু বিবৃতি দিয়েছেন। জানাজায় উপস্থিত ছিলেন উপদেষ্টা লিয়াকত আলী, সৈয়দ শওকত আলী, গোলাম মেহরাজ, গিয়াস মজমুদার, সাব্বির লস্কর ছাড়াও জাতীয় পার্টি নেতৃবৃন্দের মধ্যে জসিম চৌধুরী, আব্দুল হাই জিয়া, তোফায়েল আহমেদ চৌধুরী, মাহবুবুর রহমান অনিক, আব্দুল করিম, লুৎফুর রহমান, ওসমান চৌধুরী, আব্দুর নূর, আব্দুল কাদের লিপু, মাহবুবুর রহমান চৌধুরী, ফিরোজ হাসান মিলন, সামছুল আলম চৌধুরী, ওয়াহিদ ফেরদৌস, শফিকুল আলম, মশিউর রহমান, মোস্তফা মহসিন, আলতাফ হোসেন, ইসমাঈল আনসারী প্রমুখ। এক বিবৃতিতে জাতীয় পার্টির নেতৃবৃন্দ বলেছেন, এই দেহাবসান দলের জন্যে অপূরণীয় ক্ষতি। দলীয় প্রধান এইচ এম এরশাদ থেকে তৃণমূলের সকলেই আজ শোকাহত। আমরা তার বিদেহী আত্মার চিরপ্রশান্তি কামনা করি। শোকার্ত পরিবারের প্রতি জানাই গভীর সমবেদনা। স্বদেশে ও প্রবাসে জাতীয় পার্টির বিকাশে জনাব বুলুর অবদান অনস্বীকার্য। দল ও জনগণ তাঁর ভূমিকা শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে যাবে। তিন বাংলার গ্লোবাল প্রেসিডেন্ট কবি-কথাকার সালেম সুলেরীও শোক প্রকাশ করেন। বলেন, প্রবাসে লোকসংস্কৃতিকে উজ্জীবিত রাখতে তিনি সচেষ্ট ছিলেন। সমাজে জনাব বুলুর মতো হিতকারী মানুষ পাওয়া আজ ভাগ্যের ব্যাপার।
তার জানাজায় অংশগ্রহণ করেন ঠিকানার সম্পাদকমন্ডলীর সভাপতি এবং সাবেক এমপি এম এম শাহীন, নিউইয়র্কস্থ বাংলাদেশ কন্স্যুলেটের কন্সাল ভাইস কন্সাল সাহেদুল ইসলাম, নর্থ বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের প্রধান উপদেষ্টা নাসির আলী খান পল, সাবেক সভাপতি হাসানুজ্জামান হাসান, নর্থ বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের সভাপতি আতোয়ারুল আলম, সাবেক সভাপতি হাসানুজ্জামান হাসান, সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম, জেবিবিএর যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ফাহাদ সোলায়মান, জ্যামাইকা মুসলিম সেন্টারের সাধারণ সম্পাদক মঞ্জুর আহমেদ চৌধুরী, জ্যামাইকা বাংলাদেশ ফ্রেন্ডস সোসাইটির প্রতিষ্ঠাতা ফখরুল ইসলাম দেলোয়ার, বাংলাদেশ সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক ফখরুল আলম, ভাইস কন্সাল সাহেদুল ইসলাম, গোলাম মেরাজ, নর্থ বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের আশরাফুজ্জামান, লতিফ সিদ্দিকী, তনু, বাদলুজ্জামান, তারেকুল হায়দার চৌধুরী, বাংলাদেশ সোসাইটির ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য কাজী আজহারুল হক মিলন, বাংলাদেশ সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক রুহুল আমিন সিদ্দিকী, সাইফুল্লাহ ভূইয়া প্রমুখ। জানাজায় ইমামতি করেন জ্যামাইকা মুসলিম সেন্টারের ইমাম মির্জা আবু জাফর বেগ।
এদিকে সদ্য প্রয়াত মাহবুব আলী বুলুকে পিতা হিসেবে দাবি করেছেন আতাউজ্জামান রকি নামের আরেক সন্তান। তিনি জ্যামাইকা মুসলিম সেন্টারে জানাজার পূর্বে বক্তব্য রাখেন এবং বলেন, আমি এবং আমার মাকে বঞ্চিত করা হলো। বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, মরহুম মাহবুবল আলী বুলু নিউইয়র্কে আরেকটি বিয়ে করেছিলেন। ফরিদা বেগম নাহিদ নামে ঐ স্ত্রী ব্রুকলীনে থাকেন। তারই সন্তান রকি। জানা গেছে, মাহবুব আলী বুলু নিউইয়র্কে থাকা অবস্থায়ই এই বিয়ে করেন। ঐ সময় তার প্রথম স্ত্রী বাংলাদেশে ছিলেন। ১৯৯৮ সালে তার স্ত্রী আমেরিকায় আসার পর সমস্যার তৈরি হয় এবং তিনি জানতে পারেন যে, মাহবুব আলী বুলু আরেকটি বিয়ে করেছেন। ঐ সময় মাহবুব আলী বুলুকে তার প্রথম স্ত্রী অফশন দিয়েছিলেন যে কোন একজনকে গ্রহণ করতে। ঐ সময় তার প্রথম স্ত্রী সন্তানদের নিয়ে নিউজার্সি চলে গিয়েছিলেন। পরে দ্বিতীয় স্ত্রীর সাথেও সমস্যা তৈরি হয়। দ্বিতীয় স্ত্রীকে দোকান বিক্রি করে অর্থও দিয়েছিলেন এবং ছেলে রকির ভরণ পোষণের দায়িত্ব নিয়েছিলেন। কিন্তু রকি সিক্স গ্রেডে ওঠার পর অর্থ দেয়া বন্ধ করে দেয়া হয়। নাহিদ ঠিকানাকে জানান, আমাদের বিয়ে হয়েছিলো প্রায় ২৩ বছর আগে এবং তিন বছর পর রকির জন্ম। জানা গেছে, শেষ দিকে প্রথম স্ত্রীর সাথেই ছিলেন। যদিও নাহিদ বলেন, জনাব বুলু নিউইয়র্ক আসলে তাদের বাসায় যেতেন। মাহবুব আলী বুলুর মৃত্যুর পর জানাজায় পুত্র রকির বক্তব্যে দ্বিতীয় স্ত্রীর বিষয়টি চলে আসে।