নিজস্ব প্রতিনিধি : নির্বাচন কমিশন (ইসি) গত ৩ এপ্রিল পাঁচ সিটি করপোরেশন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছে। সে অনুযায়ী গাজীপুর সিটি করপোরেশনে ভোট হবে আগামী ২৫ মে, খুলনা ও বরিশাল সিটি করপোরেশনে ভোট হবে ১২ জুন এবং রাজশাহী ও সিলেট সিটি করপোরেশনে ভোট হবে ২১ জুন।
আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন কেমন হবে, নির্বাচন কমিশন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানে কতটা সক্ষম হবে, বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো কমিশনের ওপর কতটা আস্থা রাখতে পারবে, ক্ষমতায় থেকে নির্বাচন দিলে সরকারের আচরণ কেমন থাকবে-এমন নানা প্রশ্নের উত্তর মিলবে পাঁচ সিটি নির্বাচনে। নির্বাচন বিশেষজ্ঞ ও রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা মনে করেন, পাঁচ সিটিতে নির্বাচন পরিস্থিতি বিদেশিরাও লক্ষ রাখছেন। নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে না এমন রাজনৈতিক দল, বিদেশি উন্নয়ন সহযোগী, ব্যবসায়ীসহ নানাভাবে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক পরিস্থিতি সম্পর্কে যারা সব সময় সতর্ক দৃষ্টি রাখেন, তারাও সিটি করপোরেশন নির্বাচনের দিকে চোখ রাখছেন।
বিএনপিসহ রাজপথে থাকা বিরোধী দলগুলো নির্বাচনে অংশ না নেওয়ায় জয়ের ব্যাপারে ক্ষমতাসীন দল মনোনীত প্রার্থীর বিজয় অনেকটাই নিশ্চিত। স্থানীয় সরকারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এই সিটি নির্বাচনগুলোতে প্রধান বিরোধী দল অংশ না নেওয়ায় নির্বাচন যে তীব্র প্রতিযোগিতাপূর্ণ হচ্ছে না, তা-ও স্পষ্ট। তবে দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলে কিছুটা হলেও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ভোট হতে পারে। একইভাবে বিএনপি নির্বাচনে না যাওয়ার কারণে দলটির কোনো জনপ্রিয় নেতা ভোটের মাঠে এলে কিছুটা প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ভোট হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হবে। সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্নভাবে নির্বাচনে আসতে বিএনপিসহ রাজপথে থাকা বিরোধী দলগুলোকে উৎসাহিত করা হচ্ছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মতো উকিল আবদুস সাত্তার স্টাইলে বিএনপির জনপ্রিয় কোনো প্রার্থীকে নির্বাচনে নিয়ে আসার চেষ্টা চলছে বলেও রাজনৈতিক মহলে আলোচনা রয়েছে। বিএনপি নির্বাচনে না গেলে ভুল করবে, রাজনীতির মূলধারা থেকে হারিয়ে যাবে, এমন বক্তব্যও দিচ্ছেন সরকার ও আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল নেতারা।
এদিকে সিটি নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্ত নিয়ে বিএনপির ভেতর দ্বিমত রয়েছে। দলের তৃণমূলের নেতাকর্মীরা এ নির্বাচন বর্জনের বিপক্ষে। একই সঙ্গে কেন্দ্রীয় নেতাদের একাংশ তাদের সঙ্গে একমত। তবে দলের হাইকমান্ড আন্দোলনের অংশ হিসেবে এই সরকার ও নির্বাচন কমিশনের অধীনে আর কোনো ভোটে না যাওয়ার সিদ্ধান্তে অনড়। এ পরিস্থিতিতে দলের সর্বোচ্চ ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির সভায় কেউ নির্বাচনে অংশ নিলে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত হয়। তবে এ কঠোর হুঁশিয়ারির মধ্যেও পাঁচ সিটিতেই মেয়র ও কাউন্সিলর পদে অনেকেই প্রার্থী হচ্ছেন। এ অবস্থায় নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্ত কার্যকর করতে নেতাকর্মীদের ভোটে বিরত রাখাই বিএনপির জন্য কঠিন চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিএনপির কয়েকজন নেতা জানান, বিপুলসংখ্যক নেতাকে বহিষ্কার করা দলটির জন্য কঠিন হতে পারে। আবার নির্বাচনের আগে দলের ‘চেইন অব কমান্ড’ বজায় রাখতে না পারলে আগামী নির্বাচনেও এর প্রভাব পড়তে পারে।
নির্বাচন বিশ্লেষকেরা বলছেন, ১৯৮৬ সালে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে রাজপথে সোচ্চার হয় আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল। তারা এরশাদের অধীনে নির্বাচনে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় কিন্তু একপর্যায়ে আওয়ামী লীগ ও জামায়াতে ইসলামী এরশাদের অধীনে ভোটে যায়। নির্বাচনে না যাওয়ার কারণে তখন বিএনপিকে নিয়ে নানা বিশ্লেষণ হয়েছে, রাজনীতিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা তখন বলাবলি করছিলেন-নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার কারণে বিএনপি রাজনীতির মূল কক্ষপথ থেকে হারিয়ে যাবে। রাজনীতির মূলধারা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে ঘটেছে এর উল্টো ঘটনা। ১৯৮৬ সালে নির্বাচন বর্জনকারী দল বিএনপি ১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি নির্বাচনে অংশ নিয়ে সরকার গঠন করে। ফলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, নির্বাচনে অংশ নেওয়া বা না নেওয়া সব সময় এক রকম ফল বলে আনে না।
এ বিষয়ে সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, সিটি করপোরেশন নির্বাচনগুলোতে বিএনপিসহ বড় রাজনৈতিক দলগুলোর প্রার্থী না থাকায় এ নির্বাচনগুলোও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হচ্ছে না। তবে এই নির্বাচন থেকে সরকার তাদের মাঠ পর্যবেক্ষণ ও কৌশল নির্ধারণ করতে পারে।