শিতাংশু গুহ
দৈনিক ভোরের কাগজ লিখেছে, ঢাকার চাপে কার্লাইলকে ফেরত পাঠায় ভারত। খবরটি আনন্দদায়ক, তাহলে ‘ঢাকাও চাপ দেয়’? এতকাল শুনে এসেছি, ভারতের চাপের কাছে বাংলাদেশের নতিস্বীকার; অন্তত: ভারত বিরোধী বা মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী শক্তি বারবার তাই বলে থাকে। এই প্রথম শুনলাম উল্টোকথা। সাধুবাদ জানাতে হয়। এটাও এক ধরনের উন্নতি। আসলে পকেটে পয়সা থাকলে মাজায় জোর থাকে। এই থিওরী এখানেও প্রযোজ্য। অর্থনৈতিক ভিত্তি শক্ত হলে, ‘বড়দা’র সাথেও দর কষাকষি করা যায়?
শব্দটি ‘চাপ’ বা ‘ডিপ্লোমেসী’ যাই বলা হোক না কেন, বাংলাদেশ খেলেছে ভালো। বিবিসির শুভজিৎ ঘোষ এক নিবন্ধে লিখেছেন, লর্ড আলেকজান্ডার কার্লাইল দিল্লি আসছেন বেগম খালেদা জিয়ার পক্ষে সাংবাদিক সম্মেলন করতে। এ খবর জানাজানি হলে ঢাকা তখনি দিল্লিকে বলল, এমনটা হলে সেটা হবে দিল্লির মাটিতে দাঁড়িয়ে ‘পেইড পলিটিক্যাল ক্যাম্পেইন’ বা ‘ অর্থ দিয়ে রাজনৈতিক প্রচারণা’। বাংলাদেশ সাফ বলেছে, ‘ভারতের মাটি বাংলাদেশ বিরোধী প্রচার কাজে লাগাতে দিরে পারেনা’।
কার্লাইল লর্ড সভার সদস্য। নামিদামি এটর্নী। খালেদা জিয়ার উকিল। তিনি ঢাকা যেতে চেয়েছেন। তার ভিসার আবেদন ঝুলে আছে। অগত্যা তিনি দিল্লিতে তার মক্কেলের পক্ষে ওকালতি করবেন, তেমনটা আশা ছিলো। সেই আশায় গুড়ে বালি। নামার ঘন্টা তিনেকের মধ্যেই তাঁকে আর একটি বিমানে উঠিয়ে দেয়া হয়। লন্ডন নেমে বললেন, ভারতের গণতন্ত্রের প্রতি তার শ্রদ্ধা উঠে গেছে! এও জানালেন, বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব ঢাকায় নিযুক্ত ভারতের ভারপ্রাপ্ত হাইকমিশনারকে তলব করে এ ব্যাপারে তাদের তীব্র আপত্তির কথা জানিয়েছেন।
বাংলাদেশ সরকার এ ব্যাপারে মুখ খোলেনি। তবে রাষ্ট্রদূতকে ডেকে এনে কথা বলা ডিপ্লোমেটিক নর্ম, অস্বাভাবিক কিছু নয়? মন্ত্রীরা অবশ্য বসে নেই, তারা কথা বলছেন। আওয়ামী লীগ খুশি। বিএনপি নাখোশ হয়ে বলেছে, বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্রের কাছে তারা এমন আচরণ আশা করেন নি। কে কি আশা করেছেন সেটা বড় বিষয় নয়! দেখার বিষয় হচ্ছে, বাংলাদেশের অনুরোধে ভারত একদা প্রভু ইংল্যান্ডের একজন নামিদামি শ্বেতাঙ্গকে পত্রপাঠ বিদায় করেছে।
এটি বিশাল অর্জন। যারা বলেন, ভারত শুধু নেয়, তাঁদের বোঝা উচিত, ভারত বাংলাদেশের সাথে বন্ধুত্বের গুরুত্ব দেয়। কেন ভারত এটা করলো? সঠিক উত্তর শুধু ভারতই জানে। তবে আমরা জল্পনা করতে পারি যে, বাংলাদেশের মাটি ভারত বিরোধীদের ব্যবহার করতে দিচ্ছেনা, ভারত কি এর প্রতিদান দিলো? নাকি, শুধুই শুভেচ্ছা? এর মধ্যে ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং ঢাকা এসেছেন, তিনি কি আরো বড় ‘শুভেচ্ছার ডালি’ নিয়ে এসেছেন?
এ সময়ে অনেকেই সবকিছুর সাথে বাংলাদেশে আসন্ন নির্বাচনের সম্পর্ক খোঁজার চেষ্টা করেন। কার্লাইলের বিদায় ও রাজনাথের আগমনের সাথে আদৌ কি নির্বাচনের কোন সম্পর্ক আছে? হয়তো আছে, হয়তো নাই? তবে কার্লাইল নাটকে একটি জিনিস পরিষ্কার। খালেদা জিয়ার ব্যাপারে সরকারের অবস্থান কঠোর। সরকার সজাগ। বিষয়টি বাংলাদেশের অভ্যন্তরিণ। কারো কিছু বলার নেই?
নইলে দিল্লি এয়ারপোর্টে কোন কার্লাইল ঢুকলো বা বের হলো তা নিয়ে বাংলাদেশের কোন মাথ্যব্যথা থাকতো না। যেহেতু কার্লাইল বেগম জিয়ার আইনজীবী, আসছেন লন্ডন থেকে, তারেকের সাথে তার নিশ্চিত যোগাযোগ আছে, তাই এ তৎপরতা। দিল্লিতে কথা বললে এর বাতাস কিছুটা ঢাকায় লাগে বটে, সরকার ঝামেলা চাননা, তাই এ সতর্কতা।
আপাততঃ সবদিক রক্ষা হয়েছে। তবে বিডিনিউজ ২৪ডটকম: বলেছে, কার্লাইলের উদ্দেশ্য ছিলো ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে একটা ঝামেলা পাকানো। কথা হয়তো সত্য। নির্বাচনের আগে সবকিছু নির্ঝঞ্ঝাট থাকবে, এমনটা ভাবা কি বোকামি নয়?
কলাম লেখক; নিউইয়র্ক।