শিতাংশু গুহ
মুক্তমনা প্রকাশক শাহাজাহান বাচচু’র খুনিদের সনাক্ত করা যায়নি। তার লাশ দাফনে স্থানীয় ইমাম ও অন্যরা বাধা দিচ্ছেন। শহীদ পরিবারের সন্তান সুমন জাহিদের গলাকাটা লাশ উদ্ধার হয়েছে। সেদিক থেকে ভাগ্যবান ড. জাফর ইকবাল। চাপাতির কোপ খেয়েও তিনি বেঁচে গেছেন। হুমায়ুন আযাদও বেঁচে গিয়েছিলেন, কিন্তু শেষরক্ষা হয়নি। এসব সন্ত্রাসের বিচার হয়না, হলেই বা কি? কিন্তু ভয় থেকেই যায়, এরপর কে?
একজন সম্পাদক ক’দিন আগে বলেছিলেন, আমরা বেঁচে আছি একারণে যে, ওরা আমাদের মারছেনা। কারা মারে? দেশে তো আইসিস নাই! এরআগে ধৃত প্রায় সব সন্ত্রাসী জামিনে মুক্ত। অনেকে পলাতক। সদ্য মুক্তি পেলেন জেএমবি নারী শাখা প্রধান হুমাইয়ারা ওরফে নাবিলা, তার ঈদ ভালোই গেছে। দেশে এত ক্রস ফায়ারের পরও একশ্রেণীর সন্ত্রাসীর দিনকাল ভালোই যাচ্ছে। শুধু প্রাণভয়ে ভাগছেন ‘মুক্তমনা’ মানুষজন।
এদিকে শেষ রোজার দিন জুম্মার নামাজ শেষে মসজিদের সামনেই খুন হয়েছেন বাড্ডা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ আলী। একই দিন পুলিশ জানিয়েছে, শাহাজাহান বাচচু’র খুনি আনসার-আল ইসলাম। সুমন জাহিদের মৃত্যু নিয়ে চলছে টানাহেঁচড়া, হত্যা না আত্মহত্যা? আত্মহত্যা প্রমানে শিশুর জবানবন্দী সুন্দরভাবে উপস্থাপন করা হচ্ছে।
সুমন আত্মহত্যা করলে কার লাভ, ক্ষতি কার? শুধু মুক্তমনারা নিহত হচ্ছেন কেন? সব বোমা শুধু প্রগতিবাদীদের মাথার ওপর পরে কেন? অর্থাৎ, যারা মারে তাঁরা উল্টো পথের পথিক, মৌলবাদী। দেশে তাদের এত রমরমা কেন? মুক্তমনারা নিরাপদ আশ্রয় পাচ্ছেন না কেন? কার জানি একটি কবিতা পড়েছিলাম, ‘মাথায় অনেক প্রশ্ন আসে, দিচ্ছেনা কেউ জবাব তার’?
মিডিয়ায় দেখলাম, সুমনকে নাকি পুলিশ লাইসেন্স নিয়ে পিস্তল কিনতে বলেছিলো? কলামিস্ট নির্মল সেন অনেকদিন আগে লিখেছিলেন, ‘স্বাভাবিক মৃত্যু’র গ্যারান্টি চাই’। বাংলাদেশের মুক্তমনারা কি স্বাভাবিক মৃত্যুর গ্যারান্টি পেতে পারেন না? নবাব সিরাজদৌল্লা নাটকের একটি ডায়লগ ব্যঙ্গ করে বলা হয়, ‘কেডা দেবে তারে আশা, কেডা দেবে ভরসা’? আসলে একের পর এক খুন বা আক্রমণে মুক্তমনাদের ভরসা’র জায়গাটি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে!
সুমন যদি সত্যিকার অর্থেই আত্মহত্যা করে থাকেন তবে বুঝতে হবে যে, দেশের রাজনীতি সত্যিই নিষ্ঠুর হয়ে গেছে, যেখানে শহীদ মুক্তিযোদ্ধার সন্তানকে জীবনের যুদ্ধক্ষেত্র থেকে পালাতে হয়? এরই মধ্যে খবর এলো, বগুড়া শহরের প্রবেশ মুখে বনানী মোড়ে মুক্তিযুদ্ধের ভাস্কর্য আবার ভেঙ্গেছে দুর্বৃত্তরা? ‘আবার’ একারণে যে, ২০১৬-তেও এটি ভাঙা হয়েছিলো। এই দুর্বৃত্তরা কারা? সবাই জানে, কিন্তু বলতে মানা! এদের সাথে শাহাজাহান বাচচু বা অভিজিতের হত্যাকারীদের কি কোন যোগসূত্র আছে?
সামাজিক মাধ্যমে হতাহত মুক্তমনাদের একটি লম্বা তালিকা প্রায়শ: প্রচারিত হয়। অর্থাৎ সবাইকে মনে করিয়ে দেয়া হয়, যাতে আমরা তাদের না ভুলি? সমস্যা হচ্ছে, এই তালিকা তো দিনকে দিন লম্বা থেকে আরো লম্বা হচ্ছে, কতদিন বা কতজনকে মনে রাখা যাবে? সামনে নির্বাচন, কারো কারো আশঙ্কা, আরো আঘাত আসবে? সত্যিই ভয়ের কারণ। এটি কি কোনভাবেই বন্ধ করা যায় না?
কলাম লেখক।
১৭ জুন ২০১৮। নিউইয়র্ক।