সমকালীন: সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম আপনি সুস্থ হয়ে ফিরে আসুন

শিতাংশু গুহ

বাংলাদেশের রাজনীতি ও রাজনীতিকদের চেহারাটা যথেষ্ট ঘোলাটে। এরমাঝে উজ্জ্বল নক্ষত্র সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। তিনি এখন সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন। কেউ বলছেন, সময় আর বেশি নেই, কেউ বলছেন, অন্তিম শয্যা। প্রার্থনা করি, তিনি সুস্থ হয়ে উঠুন। ঈশ্বর তার মঙ্গল করুন। তারমত সৎ, নম্রভদ্র, শালীন, অসাম্প্রদায়িক নেতার দেশে ও দলে এখন বেশ প্রয়োজন। বঙ্গবন্ধু সোনার মানুষ চেয়েছিলেন, সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম সেই সোনার মানুষ। তারমত মানুষের সংখ্যা বিশেষত: রাজনীতিক যদি দেশে আরো বেশি কিছু থাকতেন তাহলে দেশটা আসলেই বঙ্গবন্ধু’র সোনার বাংলা হয়ে যেতো।
তিনি চলে যাচ্ছেন, বড় কষ্ট হচ্ছে। তিনি আমার কেউ নন, তার সাথে আমার তেমন সম্পর্ক কখনো গড়ে ওঠেনি। একজন ভালোমানুষকে মানুষ যেমন ভালোবাসে, এটি তাই। প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা কিছুদিন আগে বলেছিলেন, তাকে ছাড়া বাকি সবাইকে কেনা যায়? তিনি ঠিকই বলেছেন। প্রধানমন্ত্রী তার সাথে সৈয়দ আশরাফুল ইসলামকে মিলিয়ে নিয়েছিলেন। সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের সাথে প্রধানমন্ত্রীর চমৎকার শ্রদ্ধাপূর্ণ সম্পর্ক দেশবাসীর অজানা নয়? সৈয়দ আশরাফুল ইসলামকেও কেনা যায়না, বা যায়নি। বাংলাদেশের প্রথম অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলামের পুত্র ‘বাপ্ কা বেটা’ সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম আপনাকে নমস্কার।
বঙ্গবন্ধু’র সাথে জাতীয় চার নেতা ছিলেন। বঙ্গবন্ধু নিহত হলে এরা আপোষ করেননি। দেশ ও নেতার জন্যে প্রাণ দিয়েছেন। সৈয়দ আশরাফুল ইসলামও তাই, পিতার মতোই আদর্শবান, দেশবরেণ্য। আচ্ছা, শেখ হাসিনার পাশে ‘জাতীয় চার নেতা’ নেই কেন? সংখ্যা যাই হোক, জাতীয় নেতা সৃষ্টি হচ্ছেনা কেন? সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের মত চারিত্রিক গুণাবলী থাকলে হয়তো হতো? হয়না, এর কারণ হচ্ছে, বঙ্গবন্ধুর আমলে রাজনীতি ছিলো আদর্শভিত্তিক, এখন আর সেইদিন নেই! বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা শুধু ভাষণে সীমাবদ্ধ। দেশের উন্নতির সাথে সাথে নেতাদের ‘বিকট’ অর্থনৈতিক উন্নয়নের আকাঙ্খা হয়তো এর অন্তরায়?
দেশের রাজনীতিতে আমরা শুধু বিভেদের কথা শুনি। আমাদের শক্তি-সামর্থ্য ধ্বংস হচ্ছে বিভেদের কারণে। নেতানেত্রীদের আক্রমণ, পাল্টা-আক্রমণ শুনতে শুনতে আমরা অভ্যস্থ হয়ে গেছি। কখনো সখনো এইসব আক্রমণ বেশ দৃষ্টিকটু বটে। কিন্তু সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম ছিলেন ব্যতিক্রম। রাজনীতি করেছেন, কিন্তু ‘পঙ্কিল’ রাজনীতিতে নিজেকে জড়িত করেননি। পঙ্কে গোলাপের মত ‘কলুষতা’ তাকে স্পর্শ করেনি। তাই এমনকি বিরোধী রাজনৌতিক নেতারা পর্যন্ত তাকে শ্রদ্ধা করেন। আমার মনে পড়েনা, বিরোধী কোন নেতা কখনো তাকে অসম্মানজনকভাবে আক্রমণ করেছেন।
এ সম্মান তিনি নিজে অর্জন করেছেন। ১/১১’র পর তার রাজনৈতিক দূরদর্শিতার পরিচয় মেলে। সম্ভবত: বর্তমান ‘তোষামোদীর’ রাজনীতির সাথে তিনি আর নিজেকে মানিয়ে নিতে পারছিলেন না? তদুপরি বছর খানেক আগে স্ত্রী শীলা ঠাকুরের বিয়োগের পর তিনি হয়তো ভেঙে পড়েন। স্ত্রী শীলা ও কন্যা রিমাকে কখনো বাংলাদেশের রাজনীতির মঞ্চে দেখা যায়নি। উদার রাজনৈতিক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম না থাকলে বাংলাদেশের রাজনীতিতে তার অভাব স্পষ্ট হবে। দেশের এখনো সৎ রাজনীতিকরা একজন পূর্বসূরীকে হারাবেন। আমাদের এখনো আশা তিনি সুস্থ হয়ে ফিরে আসুন। আসন্ন নির্বাচনে তার ব্যাপক ভূমিকাও প্রয়োজন আছে।
সদ্য বিশ্ব শিক্ষক দিবস পেরিয়ে গেলো। আমার একজন প্রিয় শিক্ষকের কথা মনে এলো। সেটা অনেকদিন আগের কথা, তখন একবারে নীচু ক্লাশে পড়ি, সম্ভবত: ক্লাশ থ্রী-ফোর? একজন সৌমকান্তি শিক্ষক, নাম পুরোটা জানিনা, শুধু জানি, জামান স্যার। স্যার একটি কথা সর্বদা বলতেন, তা হলো: “হাত-পা থাকলেই মানুষ হয়না, মানুষ হতে গেলে ‘মান ও হুশ’ দুটোই থাকতে হয়”। শিক্ষায় দেশ পিছিয়ে যাচ্ছে। .’মান ও হুশ’ সম্পন্ন মানুষের সংখ্যা কমে যাচ্ছে। কিন্তু অনেকদিন পরে জামান স্যারের কথার সাথে মিল খুঁজে একজন মানুষ পেলাম, তিনি হচ্ছেন, সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম।
কলাম লেখক।
০৭ অক্টবর ২০১৮। নিউইয়র্ক।