চোখ ধাঁধানো সমাপনীতে পর্দা নামল যুব গেমসের

যুব গেমসের সমাপনী অনুষ্ঠান। ছবি: বিওএ

শামস রহমান: বর্ণাঢ্য আয়োজনের মধ্য দিয়ে গত ২ জানুয়ারি প্রায় ৬০ হাজার ক্রীড়াবিদ, কোচ, টেকনিক্যাল অফিসিয়াল ও ক্রীড়া সংগঠকের অংশগ্রহণে শেখ কামাল ২য় যুব বাংলাদেশ গেমস শুরু হয়েছিল। ৪ মার্চ (শনিবার) আর্মি স্টেডিয়ামে হয়েছে তার সফল সমাপ্তি।

ট্র্যাক এন্ড ফিল্ডের গতির ঝলক, আতশবাজির রশ্মি, মনোমুগ্ধকর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের সঙ্গে চোখ ধাঁধানো সমাপনীতে পর্দা নামল শেখ কামাল ২য় বাংলাদেশ যুব গেমসের।

চূড়ান্ত পর্বে ৪ হাজার অ্যাথলেটের ক্রীড়াশৈলীতে সাত দিন ধরে বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনে ছিল উৎসবের আবহ। সেই উৎসবের সমাপ্তি ঘোষণা করেন বাংলাদেশ অলিম্পিক এসোসিয়েশনের (বিওএ) সভাপতি ও সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে প্রায় তিন ঘণ্টার সমাপনী অনুষ্ঠানটি উপভোগ করেন বিওএ সভাপতি। এ সময় বিওএ মহাসচিব সৈয়দ শাহেদ রেজা, বিওএ’র অন্যান্য কর্মকর্তাগণ, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ, বিভিন্ন ফেডারেশন কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।

সমাপনী অনুষ্ঠানটিকে দুটি ভাগে ভাগ করা হয়। প্রথম পর্বে প্রধান অতিথি সেনাপ্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদের আগমন, অ্যাথলেটিকসের ১০০ ও ৮০০ মিটার দৌড় ইভেন্ট, শেখ কামাল ২য় বাংলাদেশ যুব গেমসের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত অডিওভিজ্যয়াল প্রদর্শন, স্পন্সরদের ক্রেস্ট প্রদান, প্রধান অতিথির বক্তব্য এবং সমাপনী ঘোষণা।

দ্বিতীয় পর্বকে সাজানো হয় ১ ঘণ্টা ৩০ মিনিটের মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান দিয়ে। যেখানে সুরের তালে সবাইকে মাতিয়ে তোলেন শিল্পীরা। শনিবার আর্মি স্টেডিয়ামের গ্যালারি ছিল পরিপূর্ণ। স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নানান শ্রেণি-পেশার মানুষের উপস্থিতিতে শেখ কামাল ২য় বাংলাদেশ যুব গেমসের সমাপনী অনুষ্ঠানটি অন্য মাত্র পায়। অ্যাথলেটিকস শুরুর আগে দেশের নানান উন্নয়ন চিত্র নিয়ে কয়েক মিনিটের অডিও ভিজ্যুয়াল প্রদর্শন করা হয়। সেখানে যুব গেমসের কিছু খণ্ডচিত্র দেখানো হয়। এ্যাথলেটিকসের জনপ্রিয় ইভেন্ট ১০০ মিটার স্প্রিন্টের সময় তরুণ-তরুণীদের গতির সঙ্গে স্টেডিয়ামে উপস্থিত দর্শকদের গর্জনে ভিন্ন এক আবহ তৈরি হয়।

স্প্রিন্টের পর ২৫ মিনিটের বিরতি। এরপর শুরু হয় সমাপনীর আনুষ্ঠানিকতা। শুরুতে শেখ কামাল ২য় বাংলাদেশ যুব গেমসের ওপরে সংক্ষিপ্ত একটি অডিও-ভিজ্যুয়াল প্রদর্শন করা হয়। সেখানে তুলে ধরা হয় জেলা, উপজেলা, বিভাগীয় পর্যায় থেকে শুরু করে গেমসের মশাল প্রজ্বলন। এরপর যুব গেমসের স্পন্সরদের হাতে সম্মানসূচক ক্রেস্ট তুলে দেয়া হয়। বিভিন্ন পৃষ্ঠপোষকদের সঙ্গে ফটোসেশন করেন বিওএ সভাপতি সেনাপ্রধান এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ ও বিওএ মহাসচিব সৈয়দ শাহেদ রেজা।

ক্রেস্ট প্রদান অনুষ্ঠানের পর ৮০০ মিটার এবং ১০০ মিটার স্প্রিন্টের তরুণ ও তরুণী বিভাগে পদক জয়ীদের গলায় পদক পরিয়ে দেওয়ার সঙ্গে যুব গেমসের সেরা হওয়া চট্টগ্রাম ও দ্বিতীয় হওয়া ঢাকা বিভাগের হাতে ট্রফি তুলে দেন বিওএ সভাপতি। বিওএ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং বিভিন্ন ফেডারেশন কর্তাদের সঙ্গে ফটোসেশনের পর প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন সেনাপ্রধান। সুন্দরভাবে শেখ কামাল যুব গেমস শেষ হওয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ এবং কৃতজ্ঞতা জানান তিনি।

এবারের যুব গেমসে সেরা ২৮ জন তরুণ-তরুণীকে ১০ লাখ টাকা ভাগ করে দেয়ার ঘোষণা দেন তিনি। সেনাপ্রধানের বক্তব্য শেষ হওয়ার পরই আতশবাজির আলোতে আলোকিত হয়ে ওঠে স্টেডিয়াম। মোবাইল ফোনে দারুণ এই মুহূর্তটিকে বন্দি করেন দর্শকরা। এরপরই সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে সমাপ্তি হয় শেখ কামাল ২য় বাংলাদেশ যুব গেমসের।

আটটি বিভাগের খেলোয়াড়দের নিয়ে ২৪টি ডিসিপ্লিনে অনুষ্ঠিত গেমসে সেরা হয়েছে চট্টগ্রাম বিভাগ। ৪৯টি স্বর্ণ, ৪০টি রৌপ্য এবং ৫৭টি ব্রোঞ্জসহ মোট ১৪৬টি পদক নিয়ে শীর্ষে চট্টগ্রামের তরুণ-তরুণীরা। দ্বিতীয় হয়েছে ঢাকা বিভাগ। তারা ৪৬টি স্বর্ণ, ৩৯টি রৌপ্য, ৬১টি ব্রোঞ্জসহ মোট ১৪৬টি পদক জিতেছে। ৪২টি স্বর্ণ, ৪৩টি রৌপ্য এবং ৫৯টি ব্রোঞ্জসহ মোট ১৪৪টি পদক নিয়ে তৃতীয় হয়েছে খুলনা বিভাগ।

ঠিকানা/এসআর