সরকারের পতন না ঘটালে ক্ষমতার পরিবর্তন হবে না

নিউইয়র্কে এলডিপি মহাসচিব রেদোয়ান আহমেদ

ঠিকানা রিপোর্ট : যুক্তরাষ্ট্র সফররত বাংলাদেশ লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) মহাসচিব ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী ড. রেদোয়ান আহমেদ বলেছেন, বর্তমান সরকারের পতন না ঘটালে কখনোই ক্ষমতার পরিবর্তন হবে না। তিনি বলেন, সারা দেশে সরকারের বর্তমান কাঠামো ঠিক রেখে যদি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনেও নির্বাচন হয়, তাহলেও ক্ষমতার পরিবর্তন সম্ভব নয়। গত ৭ অক্টোবর শুক্রবার
সন্ধ্যায় জ্যাকসন হাইটসের ৭৩ স্ট্রিটের একটি রেস্টুরেন্ট মিলনায়তনে কুমিল্লা সমিতি যুক্তরাষ্ট্র ইন্ক আয়োজিত মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব মন্তব্য করেন রেদোয়ান আহমেদ।
তিনি বলেন, অনেকে বলছেন যে বর্তমান প্রশাসন আওয়ামী লীগ সরকারকে টিকিয়ে রাখতে সহযোগিতা করেছে। এজন্য তাদের পরিবর্তন ছাড়া ক্ষমতার পালাবদল সম্ভব নয়। আবার কেউ কেউ বলছেন, সরকার পরিবর্তন হলে প্রশাসনে যারা সহযোগিতা করেছেন তারা ‘লেজ গুটিয়ে’ পালাবেন। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ক্ষমতার পালাবদল হলেই সরকারি কর্মচারিরা রূপ বদলাবে। তবে সতর্ক থাকবে হবে, যারা ১৪ বছর সরকারকে সহযোগিতা করেছেন, নানান সুবিধা ভোগ করেছেন, তারা যে কোনো ভাবে হোক সরকারকে সহযোগিতা করবেনই। তাই আগে এই সরকারের পতন ঘটাতে হবে। তারপরও দেশে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন হয়, সেই ব্যবস্থা করতে হবে।

নিউইয়র্ক : বৃহত্তর কুমিল্লা সমিতির আয়োজিত মতবিনিময় সভায় ড. রেদোয়ান আহমেদসহ অন্যান্যরা। 


ড. রেদোয়ান আহমেদ বলেন, ‘প্রবাসীরা নানাভাবে আমাদের সহযোগিতা করছেন। তারা যেমন দেশের অর্থনীতিতে সহায়তা করছেন, তেমনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিউইয়র্কে আসার পর বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল বিক্ষোভ করেছে। তিনি বলেন, দেশে রিজার্ভ ৪০ বিলিয়নের নিচে নেমে গেছে। এরমধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে চুরি হয়ে গেছে আট বিলিয়ন ডলার। এ প্রসঙ্গে তিনি অভিযোগ করেন, সরকার এই চুরির সঙ্গে জড়িত। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে যাওয়ায় আগামী দুই মাসের আমদানি খরচ মেটাতে পারবে না সরকার।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী দেশে ফিরে বলেছেন যে আগামী ২০২৩ সাল সারা বিশ্বের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। আমি বলতে চাই, সারা বিশ্ব ঝুঁকিপূর্ণ না হোক, বাংলাদেশের জন্য ২০২৩ সাল অধিক ঝুঁকিপূর্ণ। কারণ ডেভেলপমন্টে প্রজেক্টের ম্যাজিক দেখাতে গিয়ে সরকার বিদেশ থেকে মোটা অংকের ঋণ নিয়েছে, ২০২৪ সাল থেকে সেসবের কিস্তি শুরু হবে। অতএব ২০২৪ সালে যারাই ক্ষমতায় আসুক না কেন যথাযথভবে ঋণ পরিশোধ করতে পারবে না। তবে সরকারের পতনের পর বিশ্বের উন্নত দেশগুলো যদি পাকিস্তানের মত সাহায্য করে তাহলে অর্থনীতির ভারসাম্য ফিরে আসবে। অন্যথায় বাংলাদেশ একটা দেউলিয়া দেশে পরিণত হবে।
সরকারের সমালোচনা প্রসঙ্গে সাবেক প্রতিমন্ত্রী রেদোয়ান আহমেদ বলেন, এখানে আমি নিজের স্বার্থে কিছু বলিনি। যা বলেছি সব দেশের স্বার্থে। দেশের স্বার্থ রক্ষায় প্রবাসীরা বিদেশে এসে অর্থ উপার্জন করছেন। দেশের অর্থনীতি সমৃদ্ধ করছেন। কিন্তু ২০২৩ সালে দেশ কোন অবস্থায় যাবে কেউ জানে না। তিনি বলেন, সরকারের পরিবর্তন হলে এবং বিদেশে বিত্তবান শক্তিগুলো যদি এক হয়, তাহলে দেশ দুর্ভিক্ষের হাত থেকে রক্ষা পাবে।
কুমিল্লা সমিতির সভাপতি বদরুল হক আজাদের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক মো. আল-আমিনের সঞ্চালনায় মতবিনিময় সভায় বিশেষ অতিথি ছিলেন যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা আহ্বায়ক ডা. মুজিবর রহমান মজুমদার, সংগঠনের সাবেক সভাপতি হাজী আবু তাহের ভূঁইয়া, বৃহত্তর কুমিল্লা সমিতির সাবেক সভাপতি ফিরোজুল ইসলাম পাটোয়ারী, কুমিল্লা সোসাইটির সাবেক সভাপতি ড. আলী আহমদ, রূপসী চাঁদপুর ফাউন্ডেশনের সভাপতি আমিন খান জাকির, কুমিল্লা সমিতির সাবেক সভাপতি, চাঁদপুর ফাউন্ডেশনের যুগ্ম সম্পাদক ও বাংলাদেশ সোসাইটির নবনির্বাচিত সহ-সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম চৌধুরী, কুমিল্লা সমিতির সিনিয়র সহ-সভাপতি সিরাজুল হক কামাল, শাপলা ওয়েলফেয়ার সোসাইটির ওয়াসিম উদ্দিন ভূঁইয়া, সাবেক ছাত্রদল নেতা মোফাজ্জেল হোসেন বসির, কুমিল্লা সমিতির সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার জহির মোল্লা, বাংলাদেশ সোসাইটির সাবেক সমাজকল্যাণ সম্পাদক কাজী তোফায়েল আহমেদ, কুমিল্লা মহানগর সমিতির সহ-সভাপতি কাজী আবু নাসের, বীর মুক্তিযোদ্ধা মীর মশিউর রহমান, কমিউনিটি অ্যাক্টিভিস্ট মনির হোসেন, বরুরা উপজেলা অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সোলায়মান মজুমদার।
অনুষ্ঠানে ড. রেদোয়ান আহমেদকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান আয়োজকরা।