প্রণবকান্তি দেব : সিলেটে আবার সরগরম হয়ে উঠেছে রাজনীতির মাঠ। মুখোমুখি আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। নানা বাধা বিপত্তি পেরিয়ে গত ১৯ নভেম্বর বিএনপির সিলেট বিভাগীয় সমাবেশের পর চাঙ্গাভাব বিরাজ করছে দলটির নেতাকর্মীর মনে। অন্যদিকে, আওয়ামী লীগে চলছে আসন্ন সিলেট সিটি
করপোরেশন নির্বাচন নিয়ে হিসাব -নিকাশ।
বিএনপি নেতাদের দাবি, দলীয় প্রধানের অনুপস্থিতিতে সিলেটে এর আগে এত বড় জমায়েত হয়নি কখনো। তাদের মতে গণসমাবেশ ঘিরে সিলেট জেলা ও মহানগর বিএনপির অভ্যন্তরীণ কোন্দল ও বিভক্তি আপাতত থামানো গেছে। একই সঙ্গে এই কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে সাংগঠনিক গতি এবং নেতা-কর্মীদের মধ্যে সম্প্রীতি বেড়েছে। তাঁরা এখন এই উদ্দীপনাকে কাজে লাগিয়ে দল গোছানোকে অগ্রাধিকার দিচ্ছেন।
দলীয় সূত্রগুলো বলছে, গণসমাবেশের পর এখন সিলেট বিএনপির দৃষ্টি দলের মহানগর ও জেলার সংগঠন গোছানোর দিকে। অন্যদিকে আওয়ামী লীগের নজর সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনের দিকে।
বিএনপির এই কর্মসূচি ঘিরে জেলা ও মহানগরের নেতাদের মধ্যে কোন্দল থামাতে পারায় দলের শীর্ষ নেতৃত্ব খুশি বলে দলীয় সূত্র জানিয়েছে। তবে নেতাদের এই কোন্দল ও বিভক্তি কতটা থেমেছে, তা সামনের কর্মসূচিগুলোতে আরও স্পষ্ট হবে বলে মনে করছেন দায়িত্বশীল একাধিক নেতা।
দলীয় সূত্র থেকে জানা গেছে, একসময় সিলেট বিএনপিতে সাইফুর রহমান ও এম ইলিয়াস আলীর দুটি ধারা তৈরি হয়েছিল। এখন সেটি নানাজন ঘুরে খন্দকার আবদুল মুক্তাদির ও মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর নেতৃত্বে দুটি ধারায় ভর করেছে। যার প্রভাব পড়েছে সিলেট বিএনপির জেলা ও মহানগরসহ সব কমিটিতে। আবদুল মুক্তাদির বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা, আর আরিফুল হক চৌধুরী কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য। জেলা ও মহানগর কমিটি এবং অঙ্গসংগঠনগুলোতে মুক্তাদিরের অনুসারীদের একচেটিয়া প্রাধান্য বলে আলোচনা আছে।
বিএনপির অভ্যন্তরীণ সূত্রগুলো বলছে, দীর্ঘদিন ধরে মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক আবদুল কাইয়ুম জালালী ও সদস্যসচিব মিফতাহ্ সিদ্দিকীর নেতৃত্বে দুটি পক্ষের মধ্যে দ্বন্দ্ব চলছে। এর প্রকাশ্য রূপ পায় গত ২ আগস্ট মহানগর বিএনপির এক কর্মসূচিতে দুই পক্ষের পৃথক কর্মসূচি পালন করার মধ্য দিয়ে। তবে, ১৯ নভেম্বরের সমাবেশে উভয় পক্ষই একযোগে কাজ করেছে বলে জানা গেছে।
অন্যদিকে, ২০২৩ সালের দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে সিলেট সিটি করপোরেশনের নির্বাচন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এ নির্বাচনে দলীয়ভাবে আরিফুল হকের প্রার্থী হওয়ার সম্ভাবনা কম। কারণ, এই সরকারের অধীন আর কোনো নির্বাচনে বিএনপির অংশ না নেওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত রয়েছে।
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকেরা মনে করছেন, জাতীয় নির্বাচনের আগমুহূর্তে সিলেট সিটি করপোরেশনের নির্বাচন সংসদ নির্বাচনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বার্তা হয়ে আসবে। তাই সিলেট আওয়ামী লীগের দৃষ্টি গত নির্বাচনে হাতছাড়া হওয়া মেয়র পদটি পুনরুদ্ধারের দিকে। যে কারণে মেয়র ও কাউন্সিলর পদে আগ্রহী জেলা, মহানগর ও কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের অনেক নেতা এখন থেকেই নির্বাচনী প্রচারে নেমে গেছেন।
জানা গেছে, সিটি নির্বাচনে বিএনপি না এলে আরিফুল হক চৌধুরীর প্রার্থী হওয়ার সম্ভাবনা কম। তাতে আওয়ামী লীগের মেয়র পদপ্রার্থী সহজে জয় পাবেন। এ কারণে মেয়রপ্রার্থী মনোনয়ন নিয়ে আওয়ামী লীগে পুরোনো কোন্দল আবার বড় হয়ে উঠতে পারে। এরই মধ্যে নেতাদের মধ্যে মনোমালিন্য শুরু হয়েছে। আড়ালে একে অন্যের দোষত্রুটি সামনে আনার চেষ্টা করছেন।
সব মিলিয়ে, দুটি দলই ব্যস্ত নিজেদের এজেন্ডা নিয়ে। মাঠেও মরিয়া নিজেদের শক্তি প্রমাণে। ফলে সিলেটের রাজনৈতিক অঙন অনেকটাই সরব এখন নির্বাচন এবং আন্দোলনমুখী কর্মসূচীতে।