স্পোর্টস রিপোর্ট : পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচ শুরুর ঠিক আগে জানানো হলো খেলছেন না বাংলাদেশ দলের অন্যতম শক্তি সাকিব আল হাসান। আঙুল অত্যধিক ফুলে যাওয়ায় কোনোভাবেই খেলা সম্ভব নয় বিশ্বের অন্যতম সেরা এ অলরাউন্ডারের। খেলবেন না সিদ্ধান্ত নিয়ে সেদিনই দেশে ফিরে আসেন। পরিকল্পনা ছিল যুক্তরাষ্ট্র বা লন্ডনে চিকিৎসা নেবেন। কিন্তু সাকিবের আঙুলের অবস্থা গুরুতর হয়ে ওঠায় গত ২৭ সেপ্টেম্বর রাতেই তাকে রাজধানীর অ্যাপোলো হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসকেরা তার চোটগ্রস্ত আঙুল থেকে ৭০ মিলিগ্রাম পুঁজ বের করেছেন। সাকিবের বর্তমান অবস্থা জানিয়ে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুকে নিজের ভ্যারিফাইড পেজ থেকে একটি পোস্ট করা হয়। সেখানে তারকা এ অলরাউন্ডার সমর্থকদের উদ্দেশে লেখেন, ‘হাতের ব্যথায় যখন দল ছেড়ে দেশে ফিরছি তখনও বুঝতে পারিনি এত খারাপ পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হবে। দেশে আসার পর প্রচ- ব্যথা অনুভব ও হাত অস্বাভাবিক রকম ফুলে যাওয়ায় দ্রুত হাসপাতালে এডমিট হয়ে একটি সার্জারি করাতে হয়েছে। আঙুলের ভেতর ইনফেকশনের ফলে ৬০-৭০ মিলিগ্রাম পুঁজ বের করতে হয়েছে। আপনাদের দোয়াই খুব অল্পের জন্য বড় ধরনের বিপদ থেকে এ যাত্রায় রক্ষা পেয়েছি, তবে দ্রুতই আরও একটি সার্জারি করাতে হবে।
আপনাদের দোয়া প্রার্থনা করছি। আপনারদের দোয়া ও ভালোবাসায় দ্রুত সুস্থ হয়ে বাংলাদেশ দলের প্রতিনিধিত্ব করতে পারি। ধন্যবাদ।’ চলতি বছরের জানুয়ারিতে ঘরের মাঠে অনুষ্ঠিত ত্রিদেশীয় সিরিজের ফাইনালে ফিল্ডিংয়ের সময় বাম হাতের কনিষ্ঠ আঙুলে ব্যথা পান সাকিব। প্রায় এক মাস মাঠের বাইরে থাকেন, খেলা হয়নি ঘরের মাঠে লঙ্কানদের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজ ও শ্রীলঙ্কার মাটিতে নিদাহাস ট্রফির শুরুর দিকের ম্যাচ। চোট কাটিয়ে মাঠে ফিরলেন, বোলিং ঠিকঠাক করতে পারলেও সমস্যা হয় ব্যাটিংয়ে। সর্বশেষ ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে টি-২০ সিরিজের শেষ ম্যাচে সাকিবকে খেলতে হয়েছে ব্যথানাশক ইনজেকশন নিয়ে। এশিয়া কাপেও সেই একই ব্যথা বেশ ভুগিয়েছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আর না পারে ফিরে এসেছেন দেশে। সাকিবের হাতের অবস্থার অবনতি প্রসঙ্গে বিসিবির একটি সূত্র জানিয়েছে, ‘গত ২৭ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় অ্যাপোলোতে ভর্তি হয়েছেন সাকিব। তবে চূড়ান্ত অপারেশন কবে করতে পারবেন সে বিষয়ে এখনও নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। এর মধ্যে তার আঙুল থেকে অনেক পুঁজ বের হয়েছে।’
তিন মাস মাঠের বাইরে সাকিব : বাঁ-হাতের কনিষ্ঠায় অস্ত্রোপচারের পর তিন দিন অ্যাপোলো হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন সাকিব আল হাসানকে। গত ৩০ সেপ্টেম্বর দুপুরে মিলে চিকিৎসকদের ছাড়পত্র। এর পরই বাসায় যান তিনি। অচিরেই দেশের বাইরে গিয়ে চোট পাওয়া আঙুলে আরও একটি অস্ত্রোপচার করাতে হবে তাকে। তবে এ জন্য কমপক্ষে তিন সপ্তাহ অপেক্ষা করতে হবে। আঙুলের ইনফেকশন পুরোপুরি না সারা পর্যন্ত উন্নত চিকিৎসার জন্য সাকিবের দেশের বাইরে যাওয়ার সম্ভাবনা নেই। সাকিবের আঙুল ইনফেকশন মুক্ত হতে তিন সপ্তাহ সময় লাগতে পারে। এর পরই বিদেশে গিয়ে মূল অস্ত্রোপচারটি করাতে হবে। সেটি থেকে সেরে উঠতে সাকিবের সময় লাগবে কমপক্ষে আট সপ্তাহ। তাই সব মিলিয়ে তিন মাস মাঠের বাইরে থাকতে হবে তাকে।
চোট পাওয়া আঙুলের অবস্থা খারাপ হয়ে যাওয়ায় এশিয়া কাপের মাঝপথে গত ২৬ সেপ্টেম্বর রাতে দুবাই থেকে দেশে ফিরে আসেন সাকিব। পরদিন রাতেই যুক্তরাষ্ট্রের বিমান ধরার কথা ছিল তার। কিন্তু ওই দিন সকালে ঘুম থেকে উঠেই চোট পাওয়া আঙুলে প্রচ- ব্যথা অনুভূত হওয়ায় দ্রুত চলে যান অ্যাপোলো হাসপাতালে। সেখানে গিয়ে শোনেন, চোট পাওয়া আঙুল থেকে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়েছে। পুঁজ জমে ভীষণ খারাপ অবস্থা হয়ে গেছে। তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্তে হাসপাতালে ভর্তি হন তিনি। গত ২৭ সেপ্টেম্বর রাতেই জরুরি অস্ত্রোপচার করে আঙুল থেকে পুঁজ বের করা হয়। দেওয়া হয় স্কিনের কালচারাল ও সেনসেটিভিটি টেস্ট। সেসব শেষ করে এবং প্রাথমিকভাবে অবস্থার উন্নতি হওয়ায় গত ৩০ সেপ্টেম্বর সাকিবকে ছাড়পত্র দেয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
সাকিবকে ছাড়পত্র দেওয়ার বিষয়টি আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছে অ্যাপোলো হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ, বিশ্বনন্দিত ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান বা হাতের কনিষ্ঠ আঙুলে ফোলা ও তীব্র যন্ত্রণা নিয়ে গত ২৭ সেপ্টেম্বর অ্যাপোলো হাসপাতালে আসেন। আমরা বিষয়টিকে অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে এবং বিসিবির সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে দ্রুত চিকিৎসার সিদ্ধান্ত নেই। হাসপাতালে আসার দুই ঘণ্টার মধ্যে চিকিৎসা সম্পন্ন হয় এবং ৫০-৬০ মিলি পুঁজ বের করা হয়। তারপর সংক্রমণ সম্পর্কিত জটিলতা নিরসনের জন্য কালচারাল ও সেনসেটিভিটি টেস্টের জন্য ল্যাবে পাঠানো হয়। রিপোর্টে জানা যায়, সিউডেমোনাস জাতীয় ব্যাকটেরিয়ার কারণে ইনফেকশনটি হয়েছিল। আমাদের অপারেশনটি সাকসেসফুল হয়েছিল এবং তিনি দ্রুত আরোগ্য লাভ করে গত ৩০ সেপ্টেম্বর হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র নিয়েছেন। হাসপাতাল ছাড়ার আগে সকালে সাকিবকে দেখতে গিয়েছিলেন বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান ও ওয়ানডে অধিনায়ক মাশরাফি মুর্তজা।