স্পোর্টস রিপোর্ট : রেকর্ডের নেশায় যেন বুঁদ হয়ে আছেন সাঁতারু ক্ষিতীন্দ্র চন্দ্র বৈশ্য। ৬৭ বছর বয়সে এসেও একটানা ১৮৫ কিলোমিটর সাঁতরে চমকে দিলেন তিনি। সর্বশেষ গত বছর একটানা ১৪৬ কিলোমিটার সাঁতরেছিলেন জাতীয় রেকর্ডধারী এ সাঁতারু। তিনি এবার ৬৪ বছর বয়সী মার্কিন সাঁতারু ডায়না নিয়াডের রেকর্ড ভেঙে গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস বইয়ে জায়গা করে নিতে পারবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
গত ৩ সেপ্টেম্বর সকালে শেরপুরের নালিতাবাড়ী পৌর শহরের ভোগাই ব্রিজের কাছ থেকে সাঁতার শুরু করে শেষ করেন গত ৫ সেপ্টেম্বর রাত ৮টায়। ভোগাই ব্রিজ থেকে কংশ নদী হয়ে নেত্রকোনা জেলার মদন পৌর শহরের মগড়া নদীর দেওয়ান বাজার ঘাট পর্যন্ত নদীতে ১৮৫ কিলোমিটার সাঁতরান তিনি। এতে তার সময় লাগে ৬১ ঘণ্টা। এর আগে গত বছরের ৪ আগস্ট সন্ধ্যা থেকে ৬ আগস্ট দুপুর পর্যন্ত ১৪৬ কিলোমিটার নদীপথে সাঁতরেছিলেন নেত্রকোনা সদর উপজেলার জাহাঙ্গীরপুর গ্রামের বাসিন্দা মুক্তিযোদ্ধা ক্ষিতীন্দ্র চন্দ্র।
এখন পর্যন্ত বেশি বয়সে সর্বোচ্চ দূরত্বে সাঁতারের রেকর্ডটি রয়েছে মার্কিন সাঁতারু ডায়না নিয়াডের দখলে। ২০১৩ সালে ৬৪ বছর বয়সে কিউবা থেকে ফ্লোরিডা পর্যন্ত ১৮০ কিলোমিটার সাঁতরে রেকর্ড গড়েন তিনি।
শেরপুরের নালিতাবাড়ী পৌরসভা ও নেত্রকোনার মদন উপজেলার নাগরিক কমিটি এবার যৌথভাবে সাঁতারের আয়োজন করে। মগড়া নদীর দুই পাড়ে বিপুলসংখ্যক মানুষের উপস্থিতিতে সাঁতারের উদ্বোধন করেন নালিতাবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আরিফুর রহমান। গত ৫ সেপ্টেম্বর রাত ৮টায় দেওয়ান বাজার ঘাটে ক্ষিতীন্দ্র চন্দ্রকে স্বাগত জানান আয়োজক কমিটিসহ নেত্রকোনার ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক আরিফুল ইসলাম, মদন উপজেলা ইউএনও ওয়ালীউল হাসান, উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম আকন্দ প্রমুখ। এ সময় মগড়া নদীর পাড়ে হাজার হাজার মানুষ ভিড় করে।
ক্ষিতীন্দ্র চন্দ্রের পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের সাবেক এই কর্মকর্তা ১৯৭০ সালে সিলেটের ধূপদীঘি পুকুরে অরুণ কুমার নন্দীর ৩০ ঘণ্টার বিরতিহীন সাঁতার দেখে উদ্বুদ্ধ হন। সে বছরই মদনের জাহাঙ্গীরপুর উন্নয়ন কেন্দ্রের পুকুরে একটানা ১৫ ঘণ্টা সাঁতরে আলোচিত হন তিনি।
এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলের পুকুরে ৯৩ ঘণ্টা ১১ মিনিট সাঁতরে জাতীয় রেকর্ড গড়েন। সে সময় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাকে গণভবনে ডেকে রুপার নৌকা উপহার দেন।
১৯৭৬ সালে জগন্নাথ হলের পুকুরে ১০৮ ঘণ্টা ৫ মিনিট সাঁতরে নিজের রেকর্ড ভাঙেন ক্ষিতীন্দ্র। হলের পুকুরপাড়ে তার একটি স্মারক ফলক রয়েছে।
আয়োজক মদন উপজেলা নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক দেওয়ান মোদাচ্ছের হোসেন সফিক জানান, ক্ষিতীন্দ্র চন্দ্রের এটাই শেষ সাঁতার। মার্কিন সাঁতারু ডায়না নিয়াডের রেকর্ড ভাঙতেই এ সাঁতার শুরু করেন তিনি। এবার গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে ক্ষিতীন্দ্র চন্দ্রের নাম তুলতে চান তারা।
সাঁতারের পর ক্ষিতীন্দ্র চন্দ্রের সর্বশেষ শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে মদনের ইউএনও ওয়ালীউল হাসান জানান, তিনি সুস্থ আছেন। তাকে ডাক্তারের নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। সাঁতারের সময় সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণের জন্য কিছুসংখ্যক লোকসহ তিনটি ইঞ্জিনচালিত বড় নৌকা, একটি বড় ডিঙি, একটি স্পিডবোট, মেডিকেল টিম, তরল খাবার, নৌকায় গান-বাজনাসহ বিভিন্ন ধরনের বিনোদনের ব্যবস্থা রাখা হয়েছিল।