সিআইএ’র প্রথম নারী পরিচালক জিনা হাসপেল

যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার (সিআইএ) প্রথম নারী পরিচালক হিসেবে দেশটির সিনেটের অনুমোদন পেয়েছেন জিনা হাসপেল। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মনোনীত হাসপেল ৫৪-৪৪ ভোটে নিজের অনুমোদন নিশ্চিত করেন।
৯/১১ হামলার পর সিআইএ’র বিতর্কিত জিজ্ঞাসাবাদ কৌশল ওয়াটারবোর্ডিং (মুখ ঢেকে পানি ঢালা) প্রয়োগে নিজের সংশ্লিষ্টতার কারণে মানবাধিকার গ্রুপ, প্রতিদ্বন্দ্বী ডেমোক্র্যাট এমনকি কয়েকজন রিপাবলিকান সিনেটরও তার সমালোচনা করেছেন।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সিআইএ পরিচালক হিসেবে জিনা হাসপেলকে মনোনয়ন দিলে তার বিরোধিতা করেছিলেন নিজ দল রিপাবলিকান পার্টির অন্যতম সিনিয়র সিনেটর জন ম্যাককেইন। বিতর্কিত জিজ্ঞাসাবাদ কৌশল (ইনহ্যাস্নড ইন্টারোগেশন প্রোগ্রাম) প্রয়োগে সংশ্লিষ্টতার কারণে ম্যাককেইন তার মনোনয়নের বিরোধিতা করলেও কয়েকজন ডেমোক্র্যাটের সমর্থন পেয়ে মনোনয়নে টিকে যান হাসপেল।


সিনেটের গোয়েন্দা কমিটির সামনে প্রশ্নোত্তরের সময় হাসপেল বারবার জোর দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে একটি কুখ্যাত গোপন কারাগার পরিচালনায় নিজের ভূমিকার কথা বলেছেন। ওই কারাগারে সন্দেহভাজন সন্ত্রাসবাদীরা ওয়াটার বোর্ডিংয়ের শিকার হয়েছিল। সিআইএ’র ওয়াটারবোর্ডিং নামের জিজ্ঞাসাবাদ কৌশলে বন্দির মুখ ঢেকে দিয়ে ক্রমাগত পানি ঢালা হতো। এতে বন্দি নিজেকে ডুবে যাওয়ার মতো পরিস্থিতিতে অনুভব করতো। যুক্তরাষ্ট্রে ৯/১১ হামলার পর সিআইএ সন্দেহভাজন সন্ত্রাসবাদীদের ওপর এই কৌশল প্রয়োগ করায় যুক্তরাষ্ট্রের ভেতরে বাইরে সমালোচনার মুখে পড়ে।
বন্দীকে চিত করে শুইয়ে মুখের উপর রুমাল চেপে ধরে তার উপর অনবরত পানি ঢালার শাস্তির নাম ওয়াটারবোর্ডিং। সন্দেহভাজন সন্ত্রাসীদের এ শাস্তি দিত বুশ প্রশাসন, যেটি নিয়ে খোদ যুক্তরাষ্ট্রের নীতিনির্ধারকরাই সমালোচনায় মুখর হয়েছিলেন। ২০০২ সালে থাইল্যান্ডে আল-কায়েদার দুই সন্দেহভাজনকে ওয়াটারবোর্ডিংয়ের মতো শাস্তি দেওয়ার সাথে জিনা হাসপেল সরাসরি জড়িত ছিলেন বলে অভিযোগ আছে। এসব অভিযোগে তাকে ক্ল্যান্ডস্টাইন সার্ভিসের (গুপ্তচরবৃত্তিমূলক কাজ) প্রধানের পদ থেকে সরিয়েও দেয়া হয়েছিল।


তবে হাসপেল বলছেন, প্রেসিডেন্ট চাইলেও সিআইএ আর এই ধরনের পদ্ধতি ব্যবহার করবে না। ডেমোক্র্যাটিক সিনেটর মার্ক ওয়ার্নার এক বিবৃতিতে বলেছেন, আমি বিশ্বাস করি তিনি এমন একজন যিনি প্রেসিডেন্টের নির্যাতন ফিরিয়ে আনার মতো অবৈধ ও নীতিবহির্ভূত আদেশের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে পারবেন। তবে হাসপেলের নিয়োগের প্রাথমিক পর্যায়ে বিরোধিতা করেছিলেন সিনেটের গোয়েন্দা কমিটির সদস্য ওয়ার্নার।
হাসপেল তাকে একটি চিঠি লেখার পরে নিজের মত পাল্টান বলে ধারণা করা হচ্ছে। ওই চিঠিতে হাসপেল লিখেছিলেন, নিজের শুভবুদ্ধির সুযোগ নিয়ে এবং একটি সংস্থার ঊর্ধ্বতন নেতা হিসেবে বলতে চাই ইনহ্যাস্নড ইন্টারোগেশন প্রোগ্রাম সিআইএ আর চালিয়ে যাবে না।
৩৩ বছর ধরে সিআইএ’তে কাজ করা ঝানু গোয়েন্দা হাসপেল তার পূর্বসুরী মাইক পম্পেও এর স্থলাভিষিক্ত হবেন। গত মাসে ট্রাম্প প্রশাসনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে পম্পেও-এর নিয়োগ চূড়ান্ত হলে ভারপ্রাপ্ত পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব সামলাচ্ছিলেন হাসপেল।
সমালোচনা সত্ত্বেও সিনেটের গোয়েন্দা কমিটির কাছে ব্যাপক সম্মান পেয়েছেন হাসপেল। তার সমর্থনে গলা মিলিয়েছেন সিআইএ’র সাবেক কয়েকজন পরিচালকও। ১৯৮৫ সালে সিআইএ’তে যোগ দিয়ে সংস্থার হয়ে প্রায় ২০টি আলাদা ধরনের কাজ করেছেন তিনি। দেশের বাইরেও সংস্থার হয়ে কাজের অভিজ্ঞতা রয়েছে জিনার।
সিএনএন’র জাতীয় নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ জুলিয়েট কায়েম তার কলামে লিখেন, একজন নারীকে সিআইএর প্রধান পদে মনোনয়ন দেয়াটা আশার কথা। কিন্তু নারী বলেই তার অতীত কর্মকাণ্ডের সাফাই গাওয়া যাবে না। জিনা হাসপেলের এমন কর্মকাণ্ডের ইতিহাস আছে, যা মৌলিক মার্কিন মূল্যবোধের চরম বিরোধী।


নিজের অতীত নিয়ে ক্ষমা প্রর্থনার জন্য জিনা হাসপেলকে চাপ দেয়ারও দাবি জানান সিএনএনএর এ বিশেষজ্ঞ। এদিকে, সিআইএ প্রধান পদে মনোনয়ন পাওয়ার পর জিনা হাসপেল প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন।
এদিকে, এক টুইটে হাসপেলের সমর্থনে ট্রাম্প বলেছেন, ‘সিআইএ প্রধানের পদে আমার মনোনীত খুবই সম্মানিত ব্যক্তিত্ব জিনা হাসপলেকে নিয়ে এত সমালোচনার কারণ, তিনি সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে খুবই কঠোর। এটা বিবেচনা করলে, এরকম খুবই বিপজ্জনক পরিস্থিতিতে আমাদের কাছে সবচেয়ে যোগ্য ব্যক্তিটি আছেন, একজন নারী যাকে ডেমোক্র্যাটরা সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে তার শক্ত অবস্থানের কারণে বাতিল করে দিতে চায়। জিনার জয় হোক।’