নিজস্ব প্রতিনিধি : দেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক শক্তি বিএনপি ও এর নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের প্রধান দাবিগুলোর অন্যতম নির্বাচনে সেনাবাহিনীকে ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দিয়ে মোতায়েন। বিকল্পধারা, গণফোরাম, জেএসডি (রব), নাগরিক ঐক্য-যুক্তফ্রন্ট, বাম দলগুলো একই দাবি করেছে। নির্বাচনে সরকারি দলের সন্ত্রাস, কারচুপি, জালিয়াতি, ভোটকেন্দ্র দখল, ভোটারদের হুমকি, ভোটদানে বাধাদান, দুই পক্ষের সংঘাত-সংঘর্ষ রোধে অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করতেই তাদের দাবি। সরকার তাদের দাবি বরাবর প্রত্যাখ্যান করলেও এখন অবস্থান পাল্টে কৌশলী নীতি নিয়েছে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার ঘোষণা করেছেন, তফসিল ঘোষণার পরই সেনা মোতায়েন করা হবে। নভেম্বরের ১০ তারিখ বা তার দু-একদিন আগে পরে তফসিল ঘোষণার সম্ভাবনা রয়েছে। সেনা মোতায়েন করা হবে নির্বাচনের পূর্ববর্তী তিন সপ্তাহ ও নির্বাচন-পরবর্তী এক সপ্তাহ আগে তারা আইনশৃঙ্খলা, শান্তিপূর্ণ পরিবেশ রক্ষায় নিয়োজিত থাকবে। সেনাবাহিনীকে মোট এক মাসের জন্য মাঠে রাখা হবে।
সরকারের উচ্চ পর্যায় এবং নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা যায়, জাতিসংঘ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে অবাধ, নিরপেক্ষ, প্রভাবমুক্ত সুষ্ঠু নির্বাচনের জোর তাগিদ দেওয়া হয়েছে। সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতায় নির্বাচন, গণতান্ত্রিক ধারাবাহিতা বজায় রাখা জরুরি হলেও এই নির্বাচন হতে হবে ব্যাপক সংখ্যক ভোটারের ও রাজনৈতিক দলসমূহের অংশগ্রহণে। বিদেশিদের এই মনোভাব বুঝতে পেরেই সরকার সন্ত্রাস-গোলযোগ, জাল-জালিয়াতিমুক্ত সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে তাদের প্রতি মানুষের সমর্থন, আস্থা প্রতিষ্ঠা করতে চায়। ভোটের আগে থেকেই সেনাবাহিনী নিয়োজিত থাকলে নির্বাচনের পরিবেশ নিয়ে দেশি-বিদেশি কারোই প্রশ্ন তোলার সুযোগ থাকবে না।
যত দূর জানা যায়, ২৭ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচন সামনে রেখে বড় ভয় হচ্ছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও নির্বাচনী দায়িত্বের জন্য নিয়োজিতদের ওপর সশস্ত্র হামলার আশঙ্কা। তারা ও প্রার্থীরা হামলার টার্গেট হতে পারে। দেশি-বিদেশি মদদপুষ্ট জঙ্গিগোষ্ঠী ও স্থানীয় কিছু সন্ত্রাসী এ ধরনের হামলার পরিকল্পনা করতে পারে। তৃতীয় কোনো পক্ষের হয়ে নির্বাচন ভ-ুল করা এবং দেশে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টিই হবে এদের উদ্দেশ্য। এ ব্যাপারে ভারত ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে সরকারকে সতর্ক করা হয়েছে। প্রাপ্ত তথ্য দ্রুত সরবরাহের আশ্বাসও দেওয়া হয়েছে।
সরকার যাতে বিএনপিসহ বিরোধীদের ওপর দায় চাপাতে না পারে, সে জন্য বিএনপি ও তার সহযোগীরা সতর্ক থেকে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি দিয়েছে। প্রথম পর্যায়ে মানববন্ধন, প্রতীকী অনশন, শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ প্রভৃতি কর্মকা- চালানোর মাধ্যমে দেশের মানুষের সমর্থন ও আন্তর্জাতিক সহানুভূতি পাওয়ার চেষ্টা করছে। রাজনৈতিক ময়দানে থাকার পাশাপাশি তারা নির্বাচনী প্রস্তুতিমূলক কাজগুলোও দ্রুত গুছিয়ে নিচ্ছে।
সেনাবাহিনী মাঠে থাকলে কোনো সন্ত্রাসী, জঙ্গিগোষ্ঠী হামলা চালানোর মতো সাহস পাবে না বলেই মনে করা হচ্ছে। তফসিল ঘোষণার পর বিরোধী দলগুলো তাদের দাবিতে হিংসাত্মক পরিস্থিতি সৃষ্টির সুযোগ পাবে না। বিএনপি, যুক্তফ্রন্টসহ তাদের অনুগামীরা নির্বাচন বর্জন করলে এ ধরনের পরিস্থিতির আশঙ্কা করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহল। তবে বিএনপি যেকোনো পরিস্থিতিতে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার পক্ষে। দেশের সার্বিক পরিস্থিতিতে মানুষ পরিবর্তনের জন্য মুখিয়ে আছে বলেই তারা মনে করেন। বিএনপি সে সুযোগ হাতছাড়া করতে চায় না। অপরদিকে সরকার বদরুদ্দোজা চৌধুরী, আ স ম রব, কর্নেল অলি আহমদ, বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীসহ রাজনৈতিক অঙ্গনে পরিচিতদের নির্বাচনী ময়দানে আনার সর্বাত্মক চেষ্টা করছে। নির্বাচনকালীন সরকারে সংসদে প্রতিনিধিত্বকারীরা স্থান পাওয়ার পাশাপাশি বিরোধী শিবিরের চমক সৃষ্টিকারী দু-তিনজনকে প্রেসিডেন্টের কোটায় সেই সরকার দেখা গেলেও বিস্ময়ের হবে না। জনমনে আস্থা জোগাতে সরকার আরো কয়েকটি পদক্ষেপ নিতে পারে। সেনাবাহিনী মোতায়েন হবে তার অন্যতম।
কোনো রকম গোলযোগ, মারামারি, সন্ত্রাসমুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করতে সেনাবাহিনীর অবস্থান বড় ভূমিকা রাখবে নিঃসন্দেহে। সেনাসদস্যরা জেলা, উপজেলা, পৌর এলাকায় যাবেন। তাদের ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা থাকবে না। সেখানেই অবস্থান করবেন। স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে তারা নির্বাচনকালে দায়িত্ব পালন করবেন। উপজেলা সদর থেকে খবর পাওয়ামাত্র ছুটে যাবেন। নির্বাচনের আগে এবং নির্বাচনের দিনও তারা সড়কে গুরুত্বপূর্ণ স্থানে অবস্থান নেবেন, টহলে থাকবেন। ভোটকেন্দ্রে, ভোটকেন্দ্রের ২০০ গজের মধ্যে তারা থাকবেন না। অথচ নির্বাচনে বিরোধী প্রার্থীর এজেন্টদের জোর করে বের করে দেওয়া, জাল-জালিয়াতি হবে ভোটকেন্দ্রে। এখানে সেনাবাহিনী থাকবে না। ভোটকেন্দ্রের ভেতরে তাদের ভূমিকা রাখারও সুযোগ নেই। গাজীপুর, খুলনা সিটি করপোরেশনে যে প্রক্রিয়ায় এজেন্টদের বের করে দিয়ে, পোলিং অফিসারদের ম্যানেজ করে ‘শান্তিপূর্র্ণ’ ভোট হয়েছে, সংসদ নির্বাচনেও সে রকম এবং তার চেয়েও উন্নত ব্যবস্থা নেওয়ার পরিকল্পনা করা হচ্ছে।