ঠিকানা রিপোর্ট : বাংলা ভাষার গুরুত্বকে সম্মান জানাতে এবং ভাষাগত ও সাংস্কৃতিক গ্রহণযোগ্যতাকে উন্নীত করার জন্য নিউইয়র্ক সিটিতে ২১ ফেব্রুয়ারিকে মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে সিটি কাউন্সিল। নিউইয়র্ক সিটিতে এখন থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে পালন করা হবে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। এ জন্য সিটি হলও ব্যবহার করা যাবে। সেখানকার ক্যালেন্ডারেও লেখা থাকবে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালনের বিষয়টি। যারা ব্যক্তিগত উদ্যোগে বা সাংগঠনিকভাবে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন করতে চান, তারা সেটি করতে পারবেন। এখন থেকে নিউইয়র্ক সিটিতে ২১ ফেব্রুয়ারি মাদার ল্যাঙ্গুয়েজ ডে হিসেবে লেখা থাকবে। এ ধরনের একটি রেজ্যুলেশন ১৬ ফেব্রুয়ারি সিটি কাউন্সিলে পাস হয়েছে। সিটি কাউন্সিলর আমান্দা ফারিয়াস এই বিল উত্থাপন করেন। সঙ্গে ছিলেন সিটি কাউন্সিলর শাহানা হানিফ। দুজনের উদ্যোগে এটি পাস হয়। এ ছাড়া আরো বেশ কয়েকজন কাউন্সিলম্যান এতে সমর্থন দেন। বিশেষভাবে ছিলেন শেখর কৃষ্ণান। এটি স্পন্সর করে সিটি কাউন্সিলের কমিটি অন কালচারাল অ্যাফেয়ার্স, লাইব্রেরিজ অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল ইন্টারগ্রুপ রিলেশন্স। কাউন্সিলর আমান্দা ফারিয়াস বলেন, ২১ ফেব্রুয়ারিকে মাতৃভাষা দিবস হিসেবে সিটি কাউন্সিল আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দেওয়ায় আমি খুবই খুশি। এটি পাস করাতে পেরে আমি গর্বিত। ব্রঙ্কস ও নিউইয়র্ক সিটিজুড়ে বাঙালি এবং বাংলাদেশি সম্প্রদায়ের জন্য বাংলা ভাষাকে সম্মান দেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পার্কচেস্টারে আমার অনেক প্রতিবেশীর মাতৃভাষা বাংলা এবং একজন আফ্রো-ল্যাটিনা হিসেবে নিজের ভাষা, সংস্কৃতি এবং ইতিহাস উদযাপন করা সম্মানের। মাতৃভাষাগুলোকে তরুণ প্রজন্মের কাছে পৌঁছে দেওয়ার জন্য আমাদের সবাইকে অবশ্যই চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে।
সিটি কাউন্সিলর শাহানা হানিফ বলেন, প্রথম বাংলাদেশি সিটি কাউন্সিলের সদস্য হিসেবে মাতৃভাষা দিবসের স্মরণে আজ রেজ্যুলেশন পাস হতে দেখে আমি রোমাঞ্চিত। এটি কেনসিংটন থেকে লস অ্যাঞ্জেলেস পর্যন্ত সকল বাংলাদেশি আমেরিকানের জন্য এক বিজয়। এই রেজ্যুলেশনটি আমাদের শহরের একটি সাহসী বিবৃতি যে আমরা ভাষার ন্যায়বিচারের জন্য আমাদের নিরন্তর সংগ্রামে বাংলাদেশি সম্প্রদায়ের সঙ্গে দাঁড়িয়েছি। আমার সম্প্রদায় শক্তিশালী এবং আমাদের ভাগ করা মূল্যবোধের জন্য লড়াই করতে নিউইয়র্ক সিটি কাউন্সিলে তাদের প্রতিনিধিত্ব করতে পেরে আমি গর্বিত।
এদিকে বাংলা ভাষা-সংক্রান্ত মাদার ল্যাঙ্গুয়েজ ডে নিয়ে বিলটি পাস হওয়ায় ভীষণ খুশি কমিউনিটির পরিচিত মুখ মাজেদা উদ্দিন। তিনি বলেন, আমি এ বিষয়ে একটি বিল আনার জন্য শাহানা হানিফকে পাঠিয়েছিলাম। তিনি প্রথমে এ বিষয়ে আমাকে কোনো রেসপন্স করেননি। এরপর আমি যোগাযোগ করি আমান্দা ফারিয়াসের সঙ্গে এবং প্রস্তাবটি দিই। তিনি আমাকে আশ্বাস দেন বিলটি তোলার। তিনি সেটি ১৬ ফেব্রুয়ারি সিটি কাউন্সিলে তোলেন এবং পাস করাতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। এ জন্য তাকে ধন্যবাদ। পরে অবশ্য আমি তাকে বলেছি, শাহানা হানিফকে তার সঙ্গে রাখার জন্য। আমার সামনেই তিনি শাহানা হানিফের সঙ্গে কথা বলেন এবং তাকে সঙ্গে রাখেন। শেখ কৃষ্ণানসহ আরো বেশ কয়েকজন সদস্য ছিলেন। শেখর কৃষ্ণান ফ্লোরে আমার নাম উল্লেখ করে ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, আমরা অনেক কষ্ট করে এটি করতে পেরেছি। এ জন্য খুশি। আমরা এখন থেকে নিউইয়র্ক সিটিতে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃত একটি ডে হিসেবে ২১ ফেব্রুয়ারি মাদার ল্যাঙ্গুয়েজ ডে পালন করতে পারব। এত দিন আমরা কমিউনিটিতে পালন করেছি, এখন সর্বজনীনভাবে পালন করতে পারব। এতে আমরা আমাদের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিকে সিটির সবার কাছে তুলে ধরার পাশাপাশি এটা সবাইকে জানাতে পারব যে ভাষার জন্য আমরা কত সংগ্রাম করেছি। কত প্রাণ ঝরেছে। কত রক্ত ঝরেছে। আমরা মায়ের ভাষায় কথা বলার জন্য সংগ্রাম করেছি এবং সফল হয়েছি। এটি বাংলাদেশিদের জন্য গর্বের বিষয়। সবার কাছে উদাহরণ হয়েও রয়েছে। আমরা সিটি হলেও দিবসটি পালনের উদ্যোগ নিতে পারব। এ জন্য আমি সিটি কাউন্সিলের সদস্য আমান্দা ফারিয়াসসহ অন্যান্য যারা এর প্রতি সমর্থন করেছেন ও ভোট দিয়েছেন, তাদের সবাইকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।