
নূরুল ইসলাম : আগামী ২৫ মে গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন। ১২ জুন খুলনা ও বরিশালে এবং ২১ জুন রাজশাহী ও সিলেট সিটি করপোরেশনের ভোট অনুষ্ঠিত হবে। ইতিমধ্যে পাঁচ সিটি নির্বাচনে মেয়র পদে আওয়ামী লীগের প্রার্থী চূড়ান্ত হয়েছে। তারা হলেন গাজীপুর সিটি করপোরেশনে অ্যাডভোকেট আজমত উল্লাহ খান, বরিশাল সিটিতে আবুল খায়ের আবদুল্লাহ, সিলেট সিটিতে আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী, রাজশাহী সিটিতে এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন এবং খুলনা সিটিতে তালুকদার আব্দুল খালেক। অন্যদিকে সিটি নির্বাচন নিয়ে দলীয় অবস্থান পরিষ্কার করেছে বিএনপি। দলটির সিনিয়র নেতারা বলছেন, পাঁচ সিটির নির্বাচনে বিএনপি যাচ্ছে না। কেন্দ্রীয়ভাবে বিএনপি অংশ না নেওয়ার ঘোষণা দিলেও স্থানীয় সম্ভাব্য প্রার্থীদের মধ্যে এই নির্বাচন নিয়ে আগ্রহ দেখা যাচ্ছে। এসব নির্বাচনে বিএনপির স্থানীয় নেতারা অংশ নিতে পারেন বলে আভাস পাওয়া যাচ্ছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দলীয়ভাবে সিদ্ধান্ত থাকার পরও যদি বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীরা সিটি নির্বাচনে অংশ নেন, তাহলে তা হবে দলের জন্য বিব্রতকর।
বিএনপির দলীয় সূত্র জানায়, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনের উপনির্বাচনের মতো যদি এই পাঁচ সিটি নির্বাচনেও বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীরা অংশ নেন, তাতে দলীয়ভাবে অস্বস্তিতে পড়বে বিএনপি। কারণ এই নির্বাচনগুলোতে অংশ নিলে দুই বছর ধরে স্থানীয় সরকারের নির্বাচনগুলো বর্জন করে আসা বিএনপির দলীয় অবস্থান মারাত্মকভাবে প্রশ্নবিদ্ধ হবে। একই সঙ্গে দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে নির্বাচন করায় যাদের দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছিল, সেটি নিয়েও নতুন করে বিতর্ক উঠবে। বর্তমান কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশনের (ইসি) অধীনে স্থানীয় সরকারের সহস্রাধিক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। তবে এসব নির্বাচনের কোনোটিতেই বিএনপি দলগতভাবে অংশ নেয়নি। অবশ্য এর আগে কে এম নূরুল হুদার নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশনের অধীনে বিএনপি অংশ নেয়। তবে সেসব নির্বাচনে অংশ নিয়ে ইসির ভূমিকায় প্রশ্ন তুলেছিলেন বিএনপির নেতারা।
এদিকে সিলেটের আরিফুল হক চৌধুরী, খুলনার নজরুল ইসলাম মঞ্জু ও গাজীপুরের হাসান উদ্দিন সরকার বিএনপির সম্ভাব্য মেয়র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার আগ্রহ দেখিয়েছেন। পাঁচ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ব্যাপারে সবচেয়ে বেশি আগ্রহ সিলেটের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর। নির্বাচনে অংশ নেওয়ার বিষয়ে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে আলোচনা করতে আরিফুল হক চৌধুরী গত ২ এপ্রিল লন্ডনে যান। সেখানে তিনি তারেক রহমানের সঙ্গে দেখা করেন। এরপর লন্ডনে এক সভায় আরিফ জানান, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তাকে সিগন্যাল দিয়েছেন। তবে সেটি রেড সিগন্যাল নাকি গ্রিন সিগন্যাল, তা তিনি সময়মতো জানাবেন। গত ১৬ এপ্রিল মেয়র আরিফ সিলেটে ফেরেন। এ সময় তিনি আসন্ন নির্বাচনে মাঠে থাকার আভাস দেন। অবশ্য তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে পারেন, এমন গুঞ্জন আগে থেকেই ছিল। তবে সিটি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগের দিন হঠাৎ তার যুক্তরাজ্যে যাওয়া এবং সেখানে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসনের সঙ্গে লন্ডন যুবদলের ইফতারে তার দেওয়া বক্তব্যে কিছুটা ধোঁয়াশার সৃষ্টি হয়েছে। মেয়র আরিফ বলেছেন, বিএনপি নির্বাচনে না গেলেও তিনি মানুষের আশা-আকাক্সক্ষা মূল্যায়ন করবেন। নির্বাচনে তিনি অংশ নেবেন কি না তা ঈদের পর জানাবেন। অন্যদিকে সিলেট সিটির ৪২টি ওয়ার্ডে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছেন বিএনপির সম্ভাব্য কাউন্সিলর প্রার্থীরাও। এ ছাড়া খুলনা সিটি নির্বাচনে কাউন্সিলর পদে অংশ নেওয়ার জন্য কয়েক বছর ধরে নিজ এলাকায় প্রচার চালিয়েছেন বিএনপির প্রায় ১৫ জন নেতা। তাদের অনেকেই শেষ পর্যন্ত রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত কী হয়, তা দেখার অপেক্ষায় আছেন।
অন্যদিকে পাঁচ সিটির আসন্ন নির্বাচনে বিএনপি দলীয়ভাবে অংশ নেবে না বলে ঘোষণা দিলেও দলটির একাধিক নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থী হবেন বলে মনে করছে আওয়ামী লীগ। এতে রাজনৈতিকভাবে লাভবান হওয়ার আশা ক্ষমতাসীন দলের নীতিনির্ধারকদের। তারা বলছেন, বর্তমান সরকারের অধীনে ভোটে অংশ নেবে না বলে ঘোষণা দিলেও শেষ পর্যন্ত দলের অনেক নেতাকে নির্বাচন থেকে দূরে রাখতে পারবে না বিএনপি। অন্তত নারায়ণগঞ্জ ও কুমিল্লা সিটিতে অনুষ্ঠিত সর্বশেষ নির্বাচন তেমনটাই ইঙ্গিত দেয়। দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে নারায়ণগঞ্জে তৈমূর আলম খন্দকার এবং কুমিল্লায় মনিরুল হক সাক্কু স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছিলেন। পাঁচ সিটির আসন্ন নির্বাচনে তৈমূর-সাক্কুদের পথে হাঁটবেন বিএনপির আরও একাধিক নেতা-এমন আলামতও নাকি দেখছেন আওয়ামী লীগ নেতারা।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এ প্রসঙ্গে বলেছেন, আসন্ন পাঁচ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপির ঘোমটা পরা প্রার্থী থাকবে। তিনি বলেন, সিলেটের বর্তমান মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী এরই মধ্যে ঘোষণা দিয়েছেন। কাজেই অন্যান্য সিটিতেও তাদের ঘোমটা পরা স্বতন্ত্র প্রার্থী রয়েছে।
এ বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান বলেন, পাঁচ সিটি করপোরেশন নির্বাচনের বিষয়ে বিএনপির সিদ্ধান্ত এখন পর্যন্ত একই। বিএনপি এর কোনোটিতেই দলীয়ভাবে অংশ নেবে না। নির্বাচনে অংশ নেওয়ার বিষয়ে কারও যদি ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত থাকে, সে ক্ষেত্রে তো দলের পক্ষ বাধা দিতে পারে না। কিন্তু আমাদের দলীয় অবস্থান পরিষ্কার- এই সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে বিএনপি যাবে না।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, বর্তমান ইসির অধীনে বিএনপি কোনো নির্বাচনেই যাবে না। এ সিদ্ধান্ত এখনো বহাল আছে, বদলায়নি।
দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, পাঁচ সিটি নির্বাচন অনুষ্ঠানের পরিকল্পনা সরকারের ফাঁদ। বিএনপি এই চক্রান্তে প্রলুব্ধ হবে না। এবার জনগণ ও বিএনপি সরকারের কোনো ফাঁদে পা দেবে না। আমরা তাদের ফাঁদ উল্টে দেব।