সিটি নির্বাচন বর্জন বিএনপিকে দুর্বল করেছে

নিজস্ব প্রতিনিধি : রমজানের পর প্রধানমন্ত্রী ও তার সরকারের পদত্যাগ এবং নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে দুর্বার আন্দোলনের ঘোষণা দিয়েছিল বিএনপি। কিন্তু ঈদ-পরবর্তী কয়েক সপ্তাহ পরও বিএনপি তেমন কার্যকর কোনো কর্মসূচি ঘোষণা করেনি। শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ-সমাবেশের কর্মসূচি দিলেও আন্দোলন বেগবান করে তোলা সম্ভব হবে কি না, তাতে জনগণের অংশগ্রহণ কতটা থাকবে, তা নিয়ে বিএনপির মধ্যেই সংশয় রয়েছে। শরিক দলগুলোকে সঙ্গে পাবে কি না, সে প্রশ্নও প্রকট হয়ে আসছে।
বিএনপি ও তার সহযোগী একাধিক দলের কয়েকজন নেতা জানান, আন্দোলনের সফলতা নিয়ে বিএনপির মাঠের নেতাকর্মীদের মধ্যেই দ্বিধা-দ্বন্দ্ব প্রকটভাবে কাজ করছে। রাজধানীর সন্নিকটস্থ গাজীপুর ছাড়াও সিলেটসহ অপর সিটি করপোরেশন নির্বাচন নিয়ে বিএনপি ও তার সহযোগী দলগুলোর নেতাকর্মীরা ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। বিএনপি নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিলেও দলটির মহানগরীর ও আশপাশের জেলা, শহরের নেতাকর্মীরা নির্বাচন থেকে দূরে থাকছেন না। সিলেটে বিএনপি নেতা, মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী দলের নিষেধাজ্ঞা লঙ্ঘন করে প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। সব কটি ওয়ার্ডে বিএনপির স্থানীয় প্রভাবশালী নেতারা কাউন্সিলর প্রার্থী হয়েছেন। দলের ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতাকর্মীরা এবং মহানগরীর সকল পর্যায়ের নেতাকর্মীরা মাঠে নেমে পড়েছেন। আরিফুল হক একজন যোগ্য, দক্ষ, সফল মেয়র হিসেবে নিজেকে প্রমাণ করেছেন। দলের নির্দেশ মেনে তিনি তার নিজের ভবিষ্যৎ ধুলোয় মেশাতে চান না। সিলেটে গোটা সংগঠনই তার হাতে। অত্যন্ত জনপ্রিয় নেতা আরিফুল হক চৌধুরী ও তার সমর্থিত কাউন্সিলরদের কমপক্ষে এক-তৃতীয়াংশের জয়ের ব্যাপারে তারা আস্থাশীল। কেবল সিলেট নয়, আরো কমপক্ষে দুই নগরীতে দলীয় নির্দেশ অমান্য করে দলের জনপ্রিয় নেতারা স্বতন্ত্র হিসেবে নিজেদের প্রার্থিতা ঘোষণার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
গাজীপুরে বিএনপির তিনজন জনপ্রিয় প্রার্থী থাকলেও তারা দলের নির্দেশ লঙ্ঘন করেননি। এখানে দলের নেতাকর্মীদের উল্লেখযোগ্য অংশ সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের মায়ের পক্ষে প্রকাশ্যে-অপ্রকাশ্যে ভূমিকা রাখছেন। অপর সিটি করপোরেশনগুলোর নির্বাচনে বিএনপির দলগত কোনো ভূমিকা না থাকায় এসব এলাকার দলীয় নেতাকর্মীরা দারুণভাবে হতাশ হয়ে পড়েছেন। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন বিএনপি শেষ পর্যন্ত বর্জন করলেও দলটির মাঠের নেতাকর্মীরা বর্জনের পথ ধরে না-ও হাঁটতে পারেন। দলের স্থানীয় কোনো নেতা স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচন করলেও তারা তার পক্ষে মাঠে নামার মানসিক, রাজনৈতিক প্রস্তুতি নিচ্ছেন। অনেকে ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীর পক্ষেও প্রকাশ্যে অবস্থান নিতে পারেন। বিএনপির নেতাদের একটা অংশ জাতীয়তাবাদী নাম নিয়ে নির্বাচন করতে পারেন। মূল বিএনপির কর্মীরা তাদের পক্ষেই অবস্থান নেবেন। বিএনপি বর্জন করলেও নির্বাচন ঠেকিয়ে রাখতে পারবে না। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহল আরো মনে করেন, নির্বাচন প্রতিহত করার মতো রাজনৈতিক-সাংগঠনিক শক্তি তাদের নেই। নির্বাচনবিরোধী কোনো ভূমিকা যারা নেবেন প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেবে। আনুষ্ঠানিকভাবে জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, ইউএনও, থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের কাছে সে রকম নির্দেশনা যাবে যথাসময়ে।
নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেওয়ার পর বিএনপির নির্বাচন প্রতিহত করার মতো শক্তি-সামর্থ্য না থাকলেও তারা দেশে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টিতে প্রয়াসী হবে। অবশ্য আইনশৃৃঙ্খলা বাহিনী তাদের অত্যন্ত কঠোরভাবে প্রতিহত করবে। সে ক্ষেত্রে বিএনপির মাঠের নেতাকর্মীদের মাঠে না-ও পাওয়া যেতে পারে। বিএনপি হরতাল, অবরোধ কর্মসূচি দেওয়ার পরিকল্পনা করছে। তফসিল ঘোষণার পর তা দুই সপ্তাহব্যাপী লাগাতারও হতে পারে। সপ্তাহে দুদিন বিরতি দিয়ে নির্বাচন পর্যন্ত এই কর্মসূচি টেনে নেওয়া হবে। এর আগে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় অভিমুখে পদযাত্রা, রাজপথ রেলপথ নৌপথ অবরোধের পুরোনো কর্মসূচি নতুন করে সামনে আনা হবে। তবে বিএনপি তার কর্মীদের মাঠে পাবে না বলেই সরকারি মহল মনে করে।