
চট্টগ্রাম : সাধারণত পরিচ্ছন্নতা কর্মী বা সুইপার-ঝাড়ুদার নিয়োগে শুধু মৌখিক পরীক্ষার মাধ্যমে প্রার্থী বাছাই করা হয়। তবে এ পদে নিয়োগে লিখিত পরীক্ষা নিয়েছে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন-বিপিসি। আর তাতে প্রশ্ন করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজনেস স্টাডিজ অনুষদ। অষ্টম শ্রেণি পাস যোগ্যতার ওই পদের প্রার্থীদের লিখতে বলা হয়েছে পদ্মা সেতু নিয়ে ইংরেজিতে রচনা। বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক সমালোচনার পাশাপাশি হাস্যরসের সৃষ্টি হয়েছে। বিপিসির প্রধান কার্যালয় চট্টগ্রামের বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন ভবনে। নিয়োগ পাওয়া ব্যক্তিদের এ কার্যালয়েই পদায়ন করা হবে। তার পরও নিম্নপদের এই নিয়োগের জন্য পরীক্ষার আয়োজন করা হয় ঢাকায়।
কর্মচারীদের প্রশ্নপত্র প্রণয়ন করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজনেস স্টাডিজ অনুষদ। রাজধানীর ইডেন মহিলা কলেজে ওই পরীক্ষা হয়। আর কর্মকর্তাদের প্রশ্ন করেন বিপিসির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। তাদের পরীক্ষা নেওয়া হয়েছে তেজগাঁও বিজ্ঞান কলেজে। কর্মচারীদের নিয়োগ পরীক্ষায় দেখানো হয়েছে অস্বাভাবিক মাত্রার খরচও। তাই নিয়োগ প্রক্রিয়ার পুরো বিষয়টি নিয়েই প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
বিপিসি সূত্র জানায়, গত ৮ ফেব্রæয়ারি বিপিসির কর্মচারী ও ৯ ফেব্রæয়ারি কর্মকর্তা নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। কর্মকর্তাদের প্রশ্নে অংক, ভাবসম্প্রসারণ, শুদ্ধ করে লেখা, এক কথায় প্রকাশ ও অনুবাদের মতো বিষয়গুলো রয়েছে। আর সুইপারসহ একইশ্রেণির পদের পরীক্ষায়ও কাছাকাছি মানের প্রশ্ন করা হয়েছে। কর্মকর্তাদের লিখিত প্রশ্নের পূর্ণমান ছিল ৭৫ আর সুইপারসহ চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের ৪০। তবে সুইপারসহ এই শ্রেণির বিভিন্ন পদে শিক্ষাগত যোগ্যতা চাওয়া হয়েছে অষ্টম শ্রেণি পাস। এমন লিখিত পরীক্ষায় পাস করেনি কেউ। ফলে ওই পদে এবার কাউকে নিয়োগ দিতে পারছে না কর্তৃপক্ষ।
সুইপার পদে পরীক্ষায় অংশ নেওয়া কুমিল্লার সুধীর দাসের ছেলে টিটু দাস বলেন, মনে করেছিলাম অফিস কিভাবে পরিষ্কার রাখতে হয় তা নিয়ে প্রশ্ন করা হবে। কিন্তু প্রশ্নপত্র দেখে হতবাক হয়েছি। প্রশ্নে পদ্মা সেতু নিয়ে ১০০ শব্দের ইংরেজি রচনা লিখতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া যেসব অংক, ভাবসম্প্রসারণ, এক কথায় প্রকাশ ও অনুবাদ করতে দেওয়া হয়েছে, তা আমাদের আয়ত্তের বাইরে ছিল। এসএসসি পাস ব্যক্তিও এসব প্রশ্নের উত্তর দিতে পারবে না। একই অভিযোগ করেন আরও কয়েকজন পরীক্ষার্থী।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সুইপার বা ওই শ্রেণির পদগুলোতে লোকবল নিয়োগে সাধারণত মৌখিক পরীক্ষা নেওয়া হয়। অফিস ও টয়লেট কীভাবে পরিষ্কার করতে হয়, বা কী দিয়ে পরিষ্কার করতে হয়- এসব বিষয়ে জ্ঞান যাচাই করে দেখা হয়। কখনও কখনও ব্যবহারিক পরীক্ষাও নেওয়া হয়। এই পদের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাধ্যমে প্রশ্ন করে নিয়োগের বিষয়টি বাড়াবাড়ি।
এ দিকে সুইপারসহ বিপিসির চতুর্থ শ্রেণির ৯টি পদে ৩১ জনের চাহিদার বিপরীতে পরীক্ষার্থী ছিলেন ছয় হাজার ৩৬ জন। ঢাকায় তাদের নিয়োগ পরীক্ষা বাবদ ব্যয় দেখানো হয়েছে ১৭ লাখ ৫৭ হাজার টাকা। আর ৬ পদে ১৩ জন অফিসার নিয়োগের বিপরীতে প্রার্থী ছিলেন এক হাজার ৯১১ জন। তাদের পরীক্ষায় ব্যয় হয়েছে এক লাখ ২৪ হাজার ৬৬০ টাকা। নিয়োগ কমিটির সদস্যরা ছাড়াও পরীক্ষার কাজে ঢাকায় যান বিপিসির ১৩ কর্মকর্তা ও ১১ কর্মচারী। সম্মানীর ভিত্তিতে পরীক্ষার দায়িত্ব দুটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের দেওয়ার পরও এসব কর্মকর্তা-কর্মচারীর ঢাকায় যাওয়া নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। কারণ তাদের থাকা-খাওয়া বাবদ মোটা অঙ্কের ব্যয় দেখানো হয়েছে।