সুখের বাসরে দুখের কান্না

জাহানারা ইউসুফ :

কুক্ষিগত সম্প্রদায়ের হাত থেকে
স্বাধীনতা ছিনিয়ে আনতে, করতে হয়-
অনেক ত্যাগ, দিতে হয়,
অঢেল রক্ত, অনেক তাজা প্রাণের বিনিময়।

জেলে, তাঁতী, কৃষক
কামার, কুমোর সুতোর
অভাবের সংসারে, বৃদ্ধা মা, অবোধ শিশু-
ভালবাসার স্ত্রী ছেড়ে
হাতের কাজ ফেলে,
রুটিরুজীর কথা না ভেবে-
স্বাধীনতার তরে অস্ত্র ধরে।

স্বাধিকার আদায়ের জন্য
যুদ্ধ করে।
ঘরে মা ছেলের অপেক্ষায়
রাত জেগে প্রহর গুণে
কখন ছেলে ঘরে ফেলে
সচকিত হয়, এই বুঝি এলো খোকা-
বাইরে শুকনো পাতা ঝড়ার শব্দ শুনি।
মা জানতেও পারে না ছেলে গেছে চলে।
না ফেরার দেশে, মাকে না বলে।

ছেলেহারা মা-
বোবা কান্না বুকে চাপি।
আজও জাগে রাতের পর রাতি।

এখনও ভাইহারা ভাই-
খুঁজে ফেরে;
ওর কাঁধে হাত রেখে
যে ভাই শক্তি সাহসহ যোগাতো-
শাসনের বলয়ে ঘিরে।

বোন হারিয়েছে তার মাথার উপর-
ভাইয়ের নিরাপত্তার ছাতা।
ভাই হারানো দুখে;
ব্যথা বাজে বোনের বুকে-
ভিজে উঠে চোখের পাতা।

আজও স্বামীহারা স্ত্রী দিশাহারা,
সন্তান ধুঁকে মরছে ক্ষুধার তাড়নায়।
স্বাধীনতায় শুধু প্রাণ নিয়ে দেইনি ছাড়ি।
সম্ভ্রম হারিয়েছে লক্ষ নারী।
এখনও তাদের দীর্ঘশ্বাসে বাতাস হয় ভারী।

এক সময়ের তরুণ উচ্ছ্বল তারুণ্যে
যুদ্ধে যায়
দেশকে বাঁচাতে পরাধীনতায়।
জয়ী হয়ে দেশকে দিলো অনেক বড় সফলতা
‘স্বাধীনতা’-
ব্যক্তি জীবনের অনেকখানি নিলো কেড়ে
অঙ্গ হারিয়ে হলো পঙ্গু
প্রতিবন্ধী হয়ে কেউ করে ক্র্যাচে ভর,
কেউ বা হলো হুইল চেয়ার নির্ভর।
যুদ্ধাহত হয়ে ওদের জীবনে-
নিষ্ঠুর স্থবিরতা এসেছে নেমে।
জীবনের উদ্যমতা গেছে থেমে।
আজও নির্মম হাহাকার-
ওদের তাড়িয়ে বেড়ায়, একান্ত নীরবতায়।
আজ মুক্তিযোদ্ধার সনদপত্র
ভুয়া মুক্তিযোদ্ধার হাতে।
আসল মুক্তিযোদ্ধার বিধবা পত্নী
না পেয়ে মুক্তিযোদ্ধার সনদপত্র
নিশিত রাতে দৈন্যে দুঃখে-
নিভৃতে নীরবে একা বসে কাঁদে।
সময় থেমে নেই,
সময় চলে তার নিজস্ব নিয়মানুবর্তিতায়।
স্বাধীনতার বয়স বাড়ে,
কিন্তু দুঃখগুলি নাহি ছাড়ে।