সু চি-সেনাপ্রধান দ্বন্দ্ব নিরসনে জাতিসংঘ!

মিয়ানমারের রাষ্ট্রীয় উপদেষ্টা অং সান সু চি ও দেশটির সেনাপ্রধান মিন অং হ্লায়াং-এর মধ্যে দ্বন্দ্ব নিরসনে জাতিসংঘ মধ্যস্থতা করছে বলে আভাস পাওয়া গেছে।
সম্প্রতি, থাই সংবাদমাধ্যম ব্যাংকক পোস্টে প্রকাশিত এক নিবন্ধে এমন আভাস দিয়েছেন সাবেক বিবিসি সাংবাদিক ল্যারি জ্যাগান।
তিনি দাবি করেছেন, সম্প্রতি জাতিসংঘের বিশেষ দূত ক্রিস্টিন শ্রেনার বার্গেনার তার মিয়ানমার সফরে অনিচ্ছাকৃতভাবেই সু চি ও হ্লায়াং-এর মধ্যে ‘দ্বন্দ্ব নিরসনে’ মধ্যস্থতাকারী হিসেবে কাজ করেছেন।
গত ২৩ জুন ব্যাংকক পোস্টে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির সাবেক বার্তা সম্পাদক ল্যারি জ্যাগানের একটি নিবন্ধ প্রকাশিত প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, রাখাইন পরিস্থিতি সামলানো এবং রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে জাতিসংঘের ভূমিকা প্রশ্নে ৮ জুন অনুষ্ঠিত একটি উচ্চ পর্যায়ের নিরাপত্তা বৈঠকে অং সান সু চি ও মিয়ানমারের সেনাপ্রধানের মধ্যে বাক-বিতণ্ডা হয়।
কয়েকটি সূত্রকে উদ্ধৃত করে ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, সরকারকে অভ্যুত্থানের হুমকি দিয়েছেন মিন অং হ্লায়াং। দাবি করা হয়, রাখাইনে হত্যা ও ধর্ষণের অভিযোগের তদন্ত এবং রোহিঙ্গা মুসলিমদের ফিরিয়ে আনার ইস্যুতে সুচি এবং সেনাবাহিনীর সম্পর্ক বিপজ্জনক মোড় নিয়েছে।
সংকট নিরসনে জাতিসংঘকে সংশ্লিষ্ট করার যে উদ্যোগ সু চি নিয়েছেন, সেনাবাহিনী তা ভালোভাবে দেখছে না। বিশেষ করে তদন্ত কমিটিতে একজন বিদেশি বিশেষজ্ঞ রাখার বিষয় নিয়ে তীব্র আপত্তি করছে সেনাবাহিনী। নিবন্ধে সেনাপ্রধানের ঘনিষ্ঠ একজন সাবেক সিনিয়র সেনা কর্মকর্তাকে উদ্ধৃত করে জ্যাগান বলেছেন, ‘এটা (তদন্তে বিদেশিকে রাখা) সেনাবাহিনী কোনোভাবেই গ্রহণ করবে না। এই রেড-লাইন অতিক্রম করা যাবে না।’
ওই একই নিবন্ধে আভাস দেওয়া হয়েছে যে জাতিসংঘের বিশেষ দূত ক্রিস্টিন শ্রেনার বার্গেনার মিয়ানমার সফরে আসার পর দুই নেতার মধ্যে দ্বন্দ্ব নিরসনে ভূমিকা রাখছে।
প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, ‘জাতিসংঘের একজন দূত অনিচ্ছাকৃতভাবেই মিয়ানমারের শীর্ষ বেসামরিক নেতা ও রাষ্ট্রীয় উপদেষ্টা অং সান সু চি এবং সেনাপ্রধান মিন অং হ্লায়াং-এর মধ্যে শান্তি স্থাপনে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে কাজ করেছেন।
রাখাইন পরিস্থিতি সামলানো এবং রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে জাতিসংঘের ভূমিকা প্রশ্নে দুই সপ্তাহ আগে অনুষ্ঠিত একটি উচ্চ পর্যায়ের নিরাপত্তা বৈঠকে বাক-বিতণ্ডা হওয়ার পর থেকে দুই নেতার মধ্যে উত্তেজনা বাড়ছিলো। এ উত্তেজনাপূর্ণ সময়গুলোতে মিয়ানমারে জাতিসংঘ মহাসচিবের বিশেষ দূত ও সুইস কূটনীতিক ক্রিস্টিন শ্রেনার বার্গেনার মিয়ানমারে সফর শুরু করেন।
মিয়ানমারে দায়িত্বপ্রাপ্ত হওয়ার পর দেশটিতে এটাই তার প্রথম সফর। তার প্রথম সরকারি সফর শেষ হয় বৃহস্পতিবার (২১ জুন)। তিনি মিয়ানমারের রাষ্ট্রীয় উপদেষ্টা ও সেনাপ্রধানসহ বেশ কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির সঙ্গে দেখা করেন।
সফরের সময় বেশ কয়েকটি বড় ধরনের ও খোলামেলা আলোচনায় অংশ নেন ক্রিস্টিন। এ আলোচনা দুই নেতার মধ্যে উত্তেজনা কমাতে সহায়তা করেছিল। জাতিসংঘ ও মিয়ানমারের মধ্যে আরও বেশি গঠনমূলক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার ভিত্তি তিনিই স্থাপন করেছেন।’
নিবন্ধে আরও উল্লেখ করা হয়, সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে রাখাইনে মানবাধিকার লঙ্ঘনের যে অভিযোগ উঠেছে তা নিয়ে জাতীয় পরিষদ থেকে তদন্ত হবে বলে সরকারের ঘোষণার পর পরই ওই নিরাপত্তা বৈঠকের আয়োজন করা হয়েছিল। বৈঠকটি হয়েছিল রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন, পুনর্বাসন এবং রাখাইন রাজ্যের উন্নয়ন প্রশ্নে মিয়ানমার সরকারের সঙ্গে জাতিসংঘের সমঝোতা চুক্তির দুইদিন পর।