সেই সব নানারঙের দিনগুলি-২

সুন্দর তুমি চক্ষু ভরিয়া এনেছ অশ্রুজল

শামসুল আরেফিন খান

পৃথিবীর যত অন্ধকার আছে সবই আলোর কাছে হার মানে।তাইতো গুণীজনেরা বলে থাকেন, রাতের আঁধার যত ঘনঘোর হবে, ভোর হবে ততো উজ্জ্বযল।
ঊষার আলোর উদ্ভাস হবে ততোই তীক্ষ্ন তীব্র।- “উষার দুয়ারে হানি আঘাত আমরা আনিব রাঙা প্রভাত ,আমরা টুটাব তিমির রাত বাধার বিন্ধাচল।
নবজীবনের গাহিয়া গান সজীব করিব মহাশ্মশান, আমরা দানিব নতুন প্রাণ’’।
কিন্তু পৃথিবীর সব আলো যদি অন্ধকারের কাছে হেরে যায় তা হলে? তাহলে কী হবে? মহা প্রলয়ে পৃথিবী কি ধ্বংস হয়ে যাবে? অন্ধ বিশ্বাসের ন’মণ বোঝা নিয়ে জ্ঞানপাপী ও মুর্খের দল এ নিয়ে খুব সরব, উচ্চকণ্ঠ, সোচ্চার। কলহ বিবাদে দ্বন্দ্ব সংঘাতে ক্ষত বিক্ষত, রক্তাক্ত- হস্তিনাপুর ও জেরুজালেম।
সবাই গঞ্জিকায় বিভোর। তার উপর বিতর্ক তো আছেই -তাল পড়ে ঢিপ করে ; নাকি ঢিপ করে তাল পড়ে; ডিম আগে না মুরগি আগে? মানুষ আগে না ধর্ম আগে?
মানুষের জন্য ধর্ম না ধর্মের জন্য মানুষ?
সেই যে শ্বাশ্বত আপ্তবাক্য- “সবার উপরে মানুষ সত্য তাহার উপরে নাই’’; তা‘ নিয়েও জ্ঞানীদের তর্কের কোন শেষ নাই।“শালিশ মানি কিন্তু তাল গাছটা আমার” কিন্তু এ সব গূঢ়তর্কের মূল কথাটা খুবই নেতিবাচক।হতাশা ব্যাঞ্জক। বিজ্ঞান বিরোধী। সব চেয়ে বড় প্রশ্ন, পৃথিবীর সব আলো কি নিভে যাবে? আলো থাকবে না অন্ধকার থাকবে অনন্তকাল?
প্রশ্নটা খুবই অবান্তর। অন্ধকার কখনও চিরস্থায়ী হতে পারেনা । কারণ পৃথিবীতে একসময় কেবলই পশু ছিল- মোটা চামড়ার গন্ডার ছিলো , হিপোপটেমাস ছিল , সিংহ বাঘ ভাল্লুক হায়েনারা ছিল ;তাদের ক্ষুধা তৃপ্তির জন্য নানা বর্ণের হরিণ , গরু ভেড়া ছাগল মহিষের অবাধ প্রজনন ছিলো; ডায়নোসর ছিল ঈগল – গড়ুড় ছিল ;সরীসৃপ ছিল; মণসা ছিল;বোকা কুমীর বোকা সারস আর চতুর শৃগাল ছিল।
কিন্তু মানুষ ছিলনা। তখনও পূর্ব গগনে অরুণ রবির নিরন্তর উদ্ভাস ব্যতিক্রমহীন ছিলো। নীলাম্বরে মেঘের গুড়ু গুড়ু ছিলো, সূর্থেগ্রাসী রাহুর ক্ষণিক আনাগোনাও ছিল অবারিত। শুকতারা ছিল।
শুক্লপক্ষ -কৃষ্ণপক্ষ নিরবধি নিরন্তর ছিলো;অমাবশ্যা-পূর্ণিমায় জোয়ার ভাটার টানে উথাল পাথাল অতৃপ্ত সাগর মহাসাগর ছিল।“ হে সিন্ধু , হে বন্ধু মোর , হে মোর তৃষিত জলধি , এতো জল বুকে তব তবু নাহি তৃষার অবধি“। মরুভূমি ছিল। হয়ত মরুদ্যানও ছিল । অক্সিজেনে ভরপুর সবুজ অরণ্য ছিল। নিñিদ্র ওযোনলেয়ার বিস্তীর্ণ ছিল। জলেস্থলে প্রাণের ক্রমবিকাশ অনাদি কাল থেকে নিরবধি নিরন্তর ছিল। প্রথম মানুষ স্বর্গ থেকেই নামুক আর সীতার মত পাতাল ফুড়েই উঠুক; অথবা বৃক্ষচ্যূত মর্কট বংশ লেজ খশিয়ে বিবর্তণে – রূপান্তরে দ্বিপদ হোক না কেন, সে বা তারা সবাই যে উৎসমূলে অরণ্যাচারিই ছিল সে ব্যাপারে যেমন কোন বিতর্ক নেই, তেমনি অবিতর্কিত শাশ্বত সার্বজনীন ও বিশ্বজনীন বিশ্বাসে ছিল মানব মানবীর যুগল আবির্ভাব,তাদের ক্ষুধা তৃষ্ণা জৈবিক তাড়না ও প্রসব বেদনা।সভ্যতার উদ্ভব উদ্ভাস ও উন্মোচন ছিলনা। কিন্তু অনন্ত আঁধারভেদী উষার মত তার ক্ষীণ উন্মেষ ছিল। আর এখন? মানুষ আছে ;কিন্তু মনুষত্ব একটু একটু করে বিলীন হচ্ছে। এ কথায় এখন আর কোন বিতর্ক নেই।
তবে এখনও কোন কোন জনারণ্যে সূর্যের পৃথিবী প্রদক্ষিণ নিয়ে বেফজুল কেতাবি বাহাস রয়েছে। এ সব অবান্তরে এমন আশঙ্কার কারণ ঘটে চলেছে যে পৃথিবীতে যে একসময় নিখাদ মানুষ বেঁচে ছিল সেটা যাদুঘরে সংরক্ষিত ইতিহাসের কীটদষ্ট পান্ডুলিপি হয়ে যাবে।কিংবদন্তিরা সব পিরামিডে ঘুমিয়ে রবে।কিন্তু মনুষত্ব যদি বিলুপ্তি থেকে রক্ষা না পায় কিংবা অন্তরহিত হয়ে ফিরে না আসে তাহলে পৃথিবী অমানুষে ভরে যাবে।এসবুজ সজল আলোকিত গ্রহটা মানুষের বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়বে।মানুষ হয়ে যাবে পশুর অধম। এখনই যেন মানুষ আর পশুর মধ্যে পার্থক্য ঘুচে গেছে। শুনেছি ক্ষুধা নিবৃত্ত হলে অতি নির্দয় হিংস্র যে পশু সেও আহার পরিহার করে।
আর সেই উচ্ছিষ্ট উদরস্থ করে ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্রতর প্রানি বেঁচে থাকে। পশুকূলে এই পারস্পরিক সহযোগিতা ও নিভর্রতা আছে।কিন্তু মানুষের সব থেকে বড় দোষ তার অতৃপ্তি। কোন প্রাপ্তিতেই মানুষ তৃপ্ত হয়না।ভরপেট চর্বচোষ্য লেহ্য খেয়েও বুভুক্ষু মানুষ ক্ষুধামুক্ত হয়না। কবিগুরুর ভাষায় বলতে হয় :
“পাগল হইয়া বনে বনে ফিরি/আপন গন্ধে মম/ কস্তুরীমৃগসম। ফাল্গুনরাতে দক্ষিণবায়ে/কোথা দিশা খুঁজে পাই না। যাহা চাই তাহা ভুল করে চাই,/ যাহা পাই তাহা চাই না। বক্ষ হইতে বাহির হইয়া/ আপন বাসনা মম/ফিরে মরীচিকাসম। বাহু মেলি তারে বক্ষে লইতে/বক্ষে ফিরিয়া পাই না। যাহা চাই তাহা ভুল করে চাই,/যাহা পাই তাহা চাই ন্’
হৃদয়হীন মানুষ এখন দেখছে কুকুরেরও হৃদয় আছে। গল্প নয় সত্যি। হৃদয়হীন কোন মানব বা মানবী অবাঞ্ছিত আত্মজকে মৃত্যুর মুখে অরণ্যে ছুঁড়ে দিলো। আর পরিত্যক্ত সেই অসহায় মানব শিশুকে একটি হৃদয়বান শারমেয় অহর্ণিশ বিনিদ্র প্রহরায় রেখে তার ক্ষুধাতৃষ্ণা মিটিয়ে তাকে বাঁচিয়ে রেখেছে। সেই নবজাত শিশুর কান্না শুনে এক সদয় নারী সপ্রাণ উদ্ধার করেছে অসহায় অনাথ সেই মৃতপ্রায় শিশুকে। সেই শিশু এখন এক নিঃসন্তান দম্পতির আপত্যস্নেহের আতিশয্যে লালিত বর্ধিত হচ্ছে। আর সেই সিংহ হৃদয় শারমেয় হয়ে উঠেছে মিডিয়া তোলপাড় করা এক কিংবদন্তি। হৃদয়হীন মানুষ যাকে ত্যাজ্য করলো, হৃদয়বান এক মনুষ্য বান্ধব পশু তাকে হৃদয়ের উত্তাপ দিয়ে বাঁচিয়ে রেখে মনুষত্বকেই যেন হারিয়ে দিলো। হায়রে মানুষ! কী বিস্ময়কর তোর রূপান্তর? আমার প্রয়াত বন্ধু শুভ রহমান এই রূপান্তর নিয়ে ভেবে ভেবেই জীবন কাটিয়ে দিলো। বস্তুতান্ত্রিক দ্বন্দ্বের গভীরে প্রবেশ করতে রীতিমত গলদঘর্ম হলো। দ্বন্দ্বমূলক বস্তুবাদ , শ্রেণী দন্দ্ব, শ্রেণী সংগ্রাম, পুঁজিবাদ, সমাজবাদ- আমার মাথায় ড্রিল করে ঢুকিয়ে দিলেও সে সব কঠিন কঠিন তত্বকথা মোটেও বোধগম্য হ‘ত না; অথচ স্বশিক্ষিত সর্বহারা বিড়ি শ্রমিক কমরেড লাটমিয়ার কাছে ছিল তা ‘জলবৎ তরলং‘। কমরেড লুকেনের কাছেও পানির মত সহজ। শুভকেও দেখলাম, সে গুড়মুড়ির মত সে সব প্রস্তর খন্ড বেশ কুড়মুড় করে খেয়ে হজম করে ফেললো।
ডায়লেকটিক্যাল মেটেরিয়ালিজম উদরস্ত করে কমরেড বা বিপ্লবী সাথী থেকে বির্তণে আমার আর এক অকৃত্রিম বন্ধু দাদা সিরাজুল আলম খানের মত তত্বগুরু “শুভদা“ হয়ে গেলো। শুভ ভাবতে ভাবতে লিখতো আর লিখতে লিখতে ভাবতো।দৈনিক জনকণ্ঠ ও শেষ বেলায় দৈনিক কালের কণ্ঠে প্রতি সপ্তায় একটা করে উপ সম্পাদকীয় লিখতো অনেক ভেবেচিন্তে।সতর্কতার কারন সে কথনও বিতর্কিত বা নিন্দিত হয়নি। যারা তার লেখা বুঝেছে তারা খুব একটা কাছে ঘেষেনি; জ্ঞান পাপিরা দর্পণে নিজের কুৎসিত চেহারা দেখেই বরং নাখোশ হয়েছে। যারা কিছুটা বুঝেছে বেশিটাই বুঝেনি তারাই তার ভক্তকূলে ভিড়েছে। রহস্যপুরুষ সিরাজের কেসটাও অনেকটা তেমনি। ছোট বেলাতেও শুভর অনেক ভক্ত ছিল।
কিন্তু সুদর্শণ সলজ্জ বালক কখনও কারও দিকে মুখ তুলে তাকায়নি। কাউকে যে তার ভালো লাগেনি তেমনটি কিন্তু নয়।প্রেমপত্র লেখেনি হয়ত। আর লিখলেও, বাপের ভয়ে সে সব মাস্টুার পিস তার কবিতার রাফ খাতাতেই শ্বাসরুদ্ধ হয়েছে। কিন্তু প্রেমের ছড়া লিখে সে গোবেচারি অলক্ষে অগোচরে চিরকুটের ঢিল ছুড়ে ঠিকই ঢিঢি রটিয়েছে।“রেহানা রেহানা কেন কর বাহানা , এত ডাকি তবু কাছে কেন আসোনা ?” সেটা অবশ্য সিরিয়াস প্রেম নয় নেহায়েতই বালখিল্য আবেগের উচ্ছাস। তবে সেটা যে বাস্তবতাকে ছুঁয়েছিল সেকথা সে বুঝেছিল জীবন সায়াহ্নে।তার প্রথম প্রেম যে ব্যর্থ হয়নি সেকথা যখন সে জেনেছে তখন তার জীবনের রেল গাড়ি শেষ স্টেশনের লাস্ট সিগনালে আটকে আছে। তার চিরকুট জড়ানো ঢিলের টার্গেট সেই বর্ধিষ্ণু চঞ্চল বালিকা সারাজীবন পশ্চিম গোলার্ধে শীতার্ত জীবন কাটালো । জিন্দেগীর হিসাব নিকাশের খেরো খাতায় অঙ্ক কষে যখন দেখলো সব পেয়েও সে কিছুই যেন পায়নি।
সাগর জলে তৃষ্ণা ঘোচেনি,তখনিই সে ছুটে গিয়েছিল ভগ্নস্বাস্থ্য শুভকে দেখতে। শুভর বোবা দৃষ্টিতে হয়ত বিধৃত ছিল অনুচ্চারিত সেই নিঃশব্দ চিরন্তন সংলাপ-“সেইতো এলে তবু এতদিন কেন এলেনা“? জীবনের বহু প্রত্যাশিত কাঙ্খিত কাব্যিক মুহূর্তে তার অভিব্যক্তি কেমন হয়েছিল তা কবিগুরুর ভাষায় বলা যায়:
“যে অঙ্কুরটা বড়ো হয়ে উঠতে পারত, অথচ যেটাকে চেপে দিয়েছে, বাড়তে দেয়নি,
তার সেই কচি বেলাকার করুণ ভীরুতা ওর মনে এল। এতদিনে সে ওর সমস্ত
জীবনকে অধিকার করে তাকে সফল করতে পারত। ভালোবাসা আজ তার শোধ
নিলে, অভিমান হল ধুলিসাৎ। … সেদিন যা সহজে হতে পারত নিশ্বাসের মতো,
সরল হাসির মতো, আজ তা কঠিন হয়ে উঠল; সেদিনকার জীবনের সেই অতিথিকে
দু হাত বাড়িয়ে গ্রহণ করতে আজ বাধা পড়ে, তাকে ত্যাগ করতে বুক ফেটে যায়।’’
পক্ষান্তরে অস্ফুট আর এক বোবা কান্না -“কৈ তুমি তো কখনও ডাকোনি?“এমন নিরব বেদনা দুজনই হৃদয়ে অনুভব করেছিল কিনা জানিনা। নিঃশব্দ প্রেমের যে মর্মর বাণী শণিতসিক্ত স্বচ্ছ স্ফটিকের কারাগারে বন্দী করে রক্তশোষক প্রেমিক সম্রাট নন্দিত হয়েছেন বিশ্বকবির এক শ্রেষ্ঠ কাব্যের ললিত বাণীতে, তাতে নাকি ছিল ষোল আনাই ফাঁকি !চতুর্দশতম পতœীর সাথে অথর্ব সম্রাটের প্রেম প্রবঞ্চনা বলে কথা!তবু কবি লিখেছেন,
“এ কথা জানিতে তুমি, ভারত-ঈশ্বর শা-জাহান,//কালস্রোতে ভেসে যায় জীবন যৌবন ধন মান।// শুধু তব অন্তরবেদনা //চিরন্তন হয়ে থাক সম্রাটের ছিল এ সাধন’’।
শুভ তার জীবন সঙ্গীনির সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিল সেই আগন্তুকের “আমার বাল্যবন্ধু“ বলে।আদর আপ্যায়নের কোন ত্রুটি করেননি শুভপতœী। জীবনের পাওয়া না পাওয়ার গল্পটা বড়ই অদ্ভুত। বিশেষ করে পুরুষের স্ত্রী ভাগ্য।“স্ত্রীয়াশচরিত্রম শুরুষস্য ভাগ্যম দেবন‘ জনন্তি; কুতো মনুষ্য“। কী অদ্ভুত শাশ্বত সত্যোপলব্ধি! দেনা পাওনার হিসাব নিকাশ নিয়ে দাম্পত্য কলহ নাহলে বুঝতে হবে সেটা এক নিশব্দ নরক ।কাল্পনিক রবোট বা মূক বধিরের সংসার! রক্ত মাংসের মানুষের জীবনে কেমিস্ট্রি বা রসায়নটাই সব চেয়ে বড় কথা। অনুপাত বেঠিক হলে শুধু হাইড্রোজেন আর অক্সিজেনের মিশ্রণে জল সৃষ্টি হয়না। সূত্র মত অঙ্কটা ুএইচ২ +ও১“ হতেই হবে। মানুষের সুখী জীবনের রসায়ন তত্বটা মনস্তাত্বিক দার্শনিক ফ্রয়েডকে তুলশি পাতার সাথে বেটে মকরধ্বজের পুড়িয়া বানিয়ে মহাভারতের উপাত্ত করা হয়েছে।হস্তিনাপুরের অন্ধরাজা ধৃতরাষ্ট্রে রাজ সভায় চালান করে দ্রোপদীর মহাকাব্যিক বস্ত্র হরণ ঘটানো হয়েছে।
তবুও কথা শেষ হয়নি। দ্রোপদী যখন আমগাছ তলায় তার গুরুদেব মহামুনির পায়ে শ্ষ্টাঙ্গে প্রণাম জানালেন তখনই তপস্যার আমটা মধ্যাকর্ষণ তত্বের অনুকূলে টুপুস করে মাটিতে পড়ে গেলো। মুনির ধ্যান ভঙ্গ হলো। মুনি জিজ্ঞেস করলেন , ‘মা তোমার কী কোন বাসনা অপূর্ণ রয়েছে?“ সপ্রতিভ দ্রোপদী আনত নয়নে মৃদুস্বরে বললেন , হ্যাঁ প্রভু, কৃষ্ণ আমার বস্ত্রহরণ ঠেকিয়েছে ; কিন্তু আমি তাকে আজও পাইনি পরাণ ভরে; সে বুঝি রাধারই রয়ে গেছে। সেই মহাপ্রভু দ্রোপদীর মনোবাঞ্ছনা পূর্ণ হবার কোন বর দিয়েছিলেন কিনা তা যেমন জানা হয়নি ;তেমনি শুভর জীবনে সে রসায়ন খাপে খাপ ছিল কিনা তাও শোনা হয়নি আমার লাজুক বন্ধুর মুখ থেকে। । বৌ সুন্দরী ,না রঙ চাপা কৃষ্ণকলি তা নিয়ে তাবদ কথা থাকে বাসরের আগে।মধু চন্দ্রিমার পরে গল্পটা পাল্টে যায়। এমনটাই সচরাচর দেখে এসেছি। আমার মাতৃহীন জীবনে এক মহীয়সী নারী এসেছিলেন স্নেহের ডালা নিয়ে।আমি ফুফু আম্মার সাথে ‘মেয়ে দেখতে‘ গিয়েছিলাম কলকাতায় ঘটকের বাসায়। বাড়ি ফেরার পর সবাই জিজ্ঞেস করলো , ওরে বাছা চাচী কেমন দেখলি? আমার বয়স তখন চার বছরের চেয়ে একটু বেশি। স্বভাবসুলভ বাচালতায় আমি বললাম, রঙটা সামান্য একটু কালো তবে সাতটা লাক্স সাবান মাখলে ফর্সা হয়ে যাবে। সত্যিই তিনি আমাদের যৌথ পরিবারের বাতিঘর হয়ে উঠেছিলেন। শুভোর স্ত্রীভাগ্য দেখেও যে কোন পুরুষেরই ঈর্ষা হতে পারে। জীবনের শেষ ২০ বছর সে তার জেষ্ঠ স্কুল শিক্ষয়িত্রী স্ত্রীর কাছথেকে যে অঢেল সেবা যতœ ও পরিচর্যা পেয়েছে তা না পেলে খর্বকৃত হৃদপিন্ড ও সঙ্কুচিত দৃষ্টিবল নিয়ে তার সপ্রাণ টিকে থাকাই হয়ত দায় হ‘তো।পতিব্রতা স্ত্রীর কঠোর অনুশাসন ও নজরদারিতে থেকে তার দৃশ্যমান ভালো না থাকার কোন উপায়ই ছিলনা।একটুও বাড়িয়ে বলছিনা। রাত ১০টায় ফোন করলে তার স্ত্রী মন্ত্রীর পি এ-র মত করে ফোন ধরে বলেছে, উনি ৯টায় ওষুধ খেয়ে ঘুমিয়ে পড়েছেন। ছুটির দুপুরে ফোন করে শুনেছি. খেয়ে দেয়ে উনি এখন বিশ্রাম করছেন।সকালের উত্তর : “এখন উনি অপিস যাওয়ার জন্যে তৈরী হচ্ছেন, ওষুদ খেয়ে বিশ্রাম নেবেন গাড়ি না আসা অব্দি“। অপিসে যেয়ে শুনেছি, স্যার মিটিংএ আছেন।সাংবাদিক কিংবদন্তী তোয়াব খানের জগৎটাও আর এক কঠিন শ্ঙ্খৃলার বন্দৗশালা। এখনও নাকি কোন পরিবর্তন ঘটেনি।ঘড়ির কাঁটা ধরে বেলা একটা থেকে আড়াইটা অব্দি সম্পাদকীয় বিভাগ নিয়ে মিটিং।ব্যতিক্রম হওয়া মানেই তাঁর স্বাস্থ্য নিয়ে চিন্তার ব্যাপার। শুভকে পেতাম তিনটা থেকে চারটার মধ্যে। কোন ক্ষোভ ছিলনা। সে বলতো, এই শৃংখলার কারাগারে আছি বলেই বেঁচে আছি।এটাই আমার স্বস্তি!“
“সুন্দর তুমি চক্ষু ভরিয়া //এনেছ অশ্রুজল//এনেছ তোমার বক্ষে ধরিয়া //দুঃসহ হোমানল/