ঠিকানা অনলাইন : জরুরি সেবার মান সন্তোষজনক না হওয়ায় রাজধানীর গ্রিন রোডের সেন্ট্রাল হাসপাতালে অস্ত্রোপচার বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। ১৬ জুন শুক্রবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের একটি দল সেন্ট্রাল হাসপাতাল পরিদর্শন শেষে এই নির্দেশনা দেয়।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হাসপাতাল ও ক্লিনিক শাখার ভারপ্রাপ্ত পরিচালক শেখ দাউদ আদনান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। একই সঙ্গে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অনুমতি ছাড়া সেন্ট্রাল হাসপাতালে কোনো চিকিৎসা দিতে পারবেন না চিকিৎসক সংযুক্তা সাহা। এসব নির্দেশনা আজ থেকেই কার্যকর হবে। কোনো ব্যত্যয় ঘটলে কঠোর আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
মাহবুবা রহমান আঁখির চিকিৎসাজনিত অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর কর্তৃক গঠিত পরিদর্শন টিমের পরিদর্শন পরবর্তী নির্দেশনায় বলা হয়েছে, সংযুক্তা সাহা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের লিখিত অনুমোদন ছাড়া পরবর্তী সময়ে সেন্ট্রাল হাসপাতালে কোনো বিশেষজ্ঞ সেবা দিতে পারবেন না।
নির্দেশনায় আরও বলা হয়, মাহবুবা রহমান আঁখির পরিবারের নিকট থেকে গৃহীত চিকিৎসা বাবদ সব খরচ এবং চিকিৎসাজনিত জটিলতার যাবতীয় সেন্ট্রাল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ গ্রহণ করবে। বর্ণিত রোগীর চিকিৎসায় জড়িত সব চিকিৎসকের এবং চিকিৎসা-সংক্রান্ত যাবতীয় কাগজপত্র বিএমডিসিতে প্রেরণ করা হবে। বিএমডিসি হতে চিকিৎসকের নিবন্ধন-বিষয়ক সিদ্ধান্ত গৃহীত হলে সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আদালতে চলমান মামলায় অভিযুক্ত চিকিৎসক শাহাজাদী ও চিকিৎসক মুনার যাবতীয় খরচ সেন্ট্রাল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে বহনেরও নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া ভুক্তভোগী রোগীর পরিবার কোনো ক্ষতিপূরণ দাবি করলে বিদ্যমান আইনি প্রক্রিয়ায় নিষ্পন্ন করতে বলা হয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, অভিযোগ-সংক্রান্ত সব কাগজপত্র স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ এবং স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করা হবে। পরবর্তী সময়ে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় কর্তৃক নির্দেশনার আলোকে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এ প্রসঙ্গে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিক সমূহ) শেখ দাউদ আদনান বলেন, ‘অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে আমরা দুপুরে সেন্ট্রাল হাসপাতাল পরিদর্শনে যাই। কিন্তু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কোনো সহযোগিতা না করে অসৌজন্যমূলক আচরণ করেছে, যা কাঙ্ক্ষিত নয়।’
এর আগে ১৪ জুন বুধবার ‘অবহেলাজনিত মৃত্যুর’ অভিযোগে ধানমন্ডি থানায় মোট পাঁচজনের নাম উল্লেখসহ কয়েকজনকে অজ্ঞাত আসামি করে মামলা হয়। মামলার পর দুই চিকিৎসককে গ্রেপ্তার করে ধানমন্ডি থানা পুলিশ।
গ্রেপ্তার দুই চিকিৎসক হলেন ডা. শাহজাদী ও ডা. মুনা। পরে তাদের আদালতে হাজির করে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা জবানবন্দি রেকর্ড করার আবেদন করেন। এ সময় দুই চিকিৎসক স্বেচ্ছায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিতে সম্মত হন।
পরে আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ফারহা দিবা ছন্দার আদালত চিকিৎসক মুনা এবং ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আফনান সুমির আদালত চিকিৎসক শাহজাদীর জবানবন্দি রেকর্ড করেন।
পরে দুই চিকিৎসকের জামিনের বিষয়ে শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। শুনানি শেষে একই আদালত তাদের জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
রোগীর স্বামী ইয়াকুব আলী সুমনের অভিযোগ, সেন্ট্রাল হাসপাতালের চিকিৎসক সংযুক্তা সাহার অধীনে তার স্ত্রীকে ভর্তি করানো হয়। ওই চিকিৎসকের অধীনেই তার স্ত্রীর ডেলিভারি হওয়ার কথা থাকলেও তিনি দেশে ছিলেন না। কিন্তু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বিষয়টি গোপন করে এবং ডেলিভারি করে।
সুমন জানান, তার স্ত্রী গত তিন মাস ধরে চিকিৎসক সংযুক্তা সাহার অধীনে নিয়মিত চেকআপ করাচ্ছিলেন। তার শরীরের অবস্থা নরমাল ডেলিভারির জন্য ঠিক ছিল। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ নরমাল ডেলিভারির জন্য চেষ্টাও করেছিল।
গত শুক্রবার (৯ জুন) রাত ১২টা ৫০ মিনিটে ডেলিভারির জন্য চিকিৎসক সংযুক্তা সাহার অধীনে সুমনের স্ত্রীকে সেন্ট্রাল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। কিন্তু সে সময় ড. সংযুক্তা সাহার বদলে উপস্থিত ছিলেন ড. মিলি। তিনি কোনো চেকআপ ছাড়াই তাকে কাটাছেঁড়া করেন।
সুমনের ভাষ্যমতে, ডেলিভারি করার জন্য তারা পেট কাটতে গিয়ে মূত্রনালি ও মলদ্বার কেটে ফেলেন। সঙ্গে সঙ্গে প্রচণ্ড রক্তক্ষরণ শুরু হতে থাকে এবং রোগী জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। অজ্ঞান অবস্থায় সিজার করে বাচ্চা বের করা হয়। ফলে বাচ্চার হার্টবিট কমে যায় এবং সঙ্গে সঙ্গে নবজাতককে আইসিইউতে নেওয়া হয়।
সুমন জানান, এ অবস্থায় তিনি বারবার ড. সংযুক্তার খোঁজ করলে কর্তৃপক্ষ জানায়, তিনি দেশের বাইরে আছেন। এর কিছুক্ষণ পর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ নবজাতককে মৃত ঘোষণা করে।
সেন্ট্রাল হাসপাতালে সিসিইউ ও এনআইসিইউ না থাকায় সুমনের স্ত্রীকে ল্যাবএইড হাসপাতালের সিসিইউতে লাইফ সাপোর্টে নেওয়া হয়। এরপর সেন্ট্রাল হাসপাতাল সুমনকে জানায়, তাদের বাচ্চাটি মারা গেছে। এ অবস্থায় সুমন ৯৯৯ কল করে একটি সাধারণ ডায়রি করেন।
ঠিকানা/এনআই