‘সেম অন ইউ’ ইমরান খান!

শিতাংশু গুহ : পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান এক টুইটে বলেছেন, ‘শিয়ালকোটের ফ্যাক্টরিতে রোমহর্ষক আক্রমণ এবং একজন শ্রীলঙ্কান ম্যানেজারকে জীবন্ত পুড়িয়ে মারার ঘটনা পাকিস্তানের জন্য লজ্জাজনক। আমি নিজে এই ঘটনার তদন্ত তদারক করছি এবং অপরাধীরা আইনের সর্বোচ্চ সাজা পাবে, তাতে কারো সংশয় থাকা অনুচিত।’ তাঁকে উত্তর দিয়েছি, “এই নারকীয় ঘটনার পরও কি আপনি দাবি করতে পারেন, পাকিস্তান একটি সভ্য জাতি? শ্রীলঙ্কা মাত্র কদিন আগে পাকিস্তানকে কুড়ি হাজার কর্নিয়া (চোখ) দান করেছে, এর পরও আপনারা ‘চোখ থেকেও অন্ধ’, ধর্মান্ধতা আপনাদের অন্ধ করে রেখেছে। ‘সেম অন ইউ’।”
টুইটার একটি চমৎকার মাধ্যম, আপনি সাধারণ হয়েও রাজা-বাদশাহদের কাছে আপনার বক্তব্য পেশ করতে পারেন। তারা সেটি দেখেন কি না, তা ভিন্ন ব্যাপার। মাঝেমধ্যেই আমি বাইডেন, মোদি, পিটিআই বা নিউইয়র্ক টাইমসকে টুইট করিÑকে জানে, ‘যদি লাইগ্যা যায়’! আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার টুইট অ্যাকাউন্ট খুঁজেছি, পাইনি। পেলে সংখ্যালঘু নির্যাতন নিয়ে তাঁর কাছেও লিখতাম। বাংলাদেশে যারা ফেসবুক নিয়ে আতঙ্কে থাকেন, কখন সেটি হ্যাক হয়ে ‘ইসলাম অবমাননার’ অভিযোগ ওঠে, তারা অপেক্ষাকৃত নিরাপদ ‘টুইটার’ ব্যবহার করতে পারেন।
মিডিয়া জানায়, শিয়ালকোটে একটি ফ্যাক্টরির ম্যানেজার ছিলেন শ্রীলঙ্কার নাগরিক প্রিয়ান্থা কুমার। ফ্যাক্টরির দেয়ালে কিছু আরবি লেখা পোস্টার তিনি নিজ হাতে সরিয়ে দেন। তিনি জানতেনও না পোস্টারে কী লেখা আছে? পুলিশ পরে জানিয়েছে, পোস্টারে কোরআনের আয়াত ছিল। এই অপরাধে ফ্যাক্টরির শ্রমিকেরাই তাকে পিটিয়ে মারে, পরে শ্রমিক-জনতা মিলে তার শরীরে আগুন ধরিয়ে দেয়। ঘটনা এখনো পুরোপুরি পরিষ্কার নয়, তবে ধর্মান্ধ জনতার নির্মমতা আরো স্পষ্ট হয়, যখন তারা সানন্দে আগুনের শিখার সাথে সেলফি তুলে সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে দিতে কুণ্ঠাবোধ করে না।
বাংলাদেশে কি এমন দুঃখজনক ঘটনা ঘটতে পারে বা ইতিমধ্যে ঘটেনি? আমাদের প্রতিক্রিয়া তখন কী ছিল? আমরা কি শুধু পাকিস্তানকে গালিগালাজ করে আমাদের দায়িত্ব শেষ করব, নাকি এমন ঘটনা যেন না ঘটে এর প্রতিরোধে সচেষ্ট হব? পাকিস্তানের পুলিশ বলেছে, তারা ঠিক সময়ে ব্যবস্থা নিতে পারেনি, তাই প্রিয়ান্থা কুমারকে বাঁচানো যায়নি। আমাদের পুলিশও কিন্তু যথাযথ ব্যবস্থা নিতে পারেনি বলেই অক্টোবরে কুমিল্লায় দুর্গাপূজার সময় হিন্দুদের ওপর তাণ্ডব চলে, যা পরে অন্যত্র ছড়িয়ে পড়ে। রামু, নন্দীরহাট, সাতক্ষীরা, কুমিল্লা, রংপুর, নাসিরনগরÑসর্বত্র আমরা কি একই চিত্র দেখতে পাই না?
শিয়ালকোটের ঘটনায় পুলিশের ব্যর্থতা হয়তো শুধরানো সম্ভব, কিন্তু যেই মানুষগুলো ধর্মের নামে এই বর্বরতায় মেতে উঠল, যারা দাউদাউ আগুনের সামনে দাঁড়িয়ে সেলফি তুলল, এদের শুধরানো কি আদৌ সম্ভব? এমন জঘন্য ঘটনার পর অপরাধবোধ না থাকার কারণেই তারা সেলফি তুলতে পারে! ধর্মের নামে এই পৈশাচিক উল্লাস, মনুষ্যত্বের এমন বিপর্যয় আর যাই হোক, ধর্ম নয়। আর কতকাল এসব চলবে, কে জানে? তবে এই ঘটনার পর শ্রীলঙ্কা-পাকিস্তান সম্পর্ক কোন দিকে মোড় নেয়, তা এখন দেখার বিষয়?