সোনালী এক্সচেঞ্জ প্রতি ডলারে দেবে ১০৮ টাকা

ঠিকানা রিপোর্ট : কিছুদিন ধরে ডলারের বাজারে কিছুটা অস্থিরতা বিরাজ করলেও তা নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ সরকার ও বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো সব ধরনের ব্যবস্থা নিয়েছে। তবে অনেকের মধ্যেই নানা রকম ভয় কাজ করছে। কেউ কেউ আবার পুরো পরিস্থিতি পর্যালোচনা না করেই বলে দিচ্ছেন, বাংলাদেশের অবস্থা শ্রীলঙ্কা ও পাকিস্তানের মতো হতে যাচ্ছে। আসলে এ ধরনের কথার ভিত্তি নেই। বাংলাদেশের অবস্থা ভালো। ডলারের দাম কেবল বাংলাদেশেই বাড়েনি, সব জায়গায়ই বেড়েছে। সাময়িকভাবে যে অবস্থা পরিলক্ষিত হচ্ছে, এটা কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হবে। এসব কথা বলছিলেন সোনালী এক্সচেঞ্জের সিইও দেবশ্রী মিত্র।
তিনি আরো বলেন, আমরা আশাবাদী, ব্যবসা আরো ভালো হবে। মাঝখানে ডলারের দাম অনেক বেড়ে যাওয়ায় আমরা বেসরকারি এক্সচেঞ্জের মতো সমহারে রেট দিতে পারিনি। কারণ সোনালী এক্সচেঞ্জ সরকারি প্রতিষ্ঠান। তাই বাংলাদেশ ব্যাংকের রেটের সঙ্গে এবং সরকারের সব নিয়মনীতির মধ্যে সরকারি রেটের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখেই ডলারের দাম ঠিক করতে হয়। এ কারণে অন্যরা যখন বেশি দিচ্ছিল, আমরা দাম বাড়ানোর জন্য একটু সময় নিচ্ছিলাম। এখন আমরাও অনেক ভালো রেট দিচ্ছি। সোনালী এক্সচেঞ্জ প্রতি ডলারের বিপরীতে বর্তমানে ১০৮ টাকা দিচ্ছে।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বিভিন্ন মানি এক্সচেঞ্জ এখনো বিভিন্ন রেট দিচ্ছে। তবে বাংলাদেশে এখন ডলারের রেট বেঁধে দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, যারা দেশে ব্যাংকের মাধ্যমে রেমিট্যান্স পাঠাবেন তাদেরকে দেওয়া হবে ১ ডলারের বিপরীতে ১০৮ টাকা। আর রপ্তানিতে ৯৯ টাকা। এই দাম নির্ধারণ করেছে ব্যাংক নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ (এবিবি) এবং বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিলারস অ্যাসোসিয়েশন (বাফেদা)। ডলারের দাম নির্ধারণ করতে ১১ সেপ্টেম্বর এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে ডলারের দাম নির্ধারণ করার পাশাপাশি নতুন বেঁধে দেওয়া দাম পাঁচ দিন পর পর্যালোচনা করার সিদ্ধান্ত হয়। প্রয়োজনে এই রেটের পরিবর্তন আনা হবে। বাফেদার চেয়ারম্যান, সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এবং সিইও মো. আফজাল করিম, এবিবির চেয়ারম্যান ও ব্র্যাক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সেলিম আর এফ হোসেনসহ বিভিন্ন বাণিজ্যিক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকেরা বৈঠকে যোগ দেন।
নতুন দাম নির্ধারণ করার ফলে বাংলাদেশের বাণিজ্যিক যেসব ব্যাংক রয়েছে, সেখান থেকে এখন আমদানি, রপ্তানি, পাশাপাশি রেমিট্যান্সের ক্ষেত্রে ডলারের সবচেয়ে বেশি দাম কত হবে, তা নির্ধারণ করা হয়। নতুন নির্ধারিত দাম অনুযায়ী প্রবাসীরা ব্যাংকের মাধ্যমে রেমিট্যান্স পাঠালে এক ডলারের জন্য ব্যাংকের কাছ থেকে পাবেন ১০৮ টাকা। সেই সঙ্গে থাকবে আড়াই শতাংশ প্রণোদনা। এটি যোগ করার পর তা হবে ১১০ টাকা ৫০ পয়সা।
এদিকে রেমিট্যান্স প্রেরণকারীরা ভালো দাম পেলেও রপ্তানির বিপরীতে যে বিল আছে, সেটি নগদায়ন করা হবে প্রতি ডলার ৯৯ টাকা। আমদানিকারকদের বেশি দামে ডলার কিনতে হবে। মূলত এই সময়ে বিলাসী পণ্য আমদানি কমাতে ও দেশের বাইরে যাতে ডলার বেশি না যায়, সে জন্য সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ নিচ্ছে। পাশাপাশি কেবল প্রয়োজনীয় পণ্য ও জিনিস আমদানিতে উৎসাহিত করছে।
সোনালী ব্যাংকের এমডি আফজাল করিম সাংবাদিকদের বলেছেন, বাফেদা ও এবিবি যৌথভাবে এ বৈঠক করেছে। সবগুলো ব্যাংকের মানি এক্সচেঞ্জ রেট যেন এক হয়, সেটাই লক্ষ্য। ডলারের সংকট, বর্তমান পরিস্থিতি বিষয়ে আলোচনার পর বাফেদা ও এবিবির সব সদস্য মিলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় প্রবাসীদের রেমিট্যান্সের সর্বোচ্চ ডলার রেট হবে ১০৮ টাকা। বাণিজ্যিক রেমিট্যান্স ও রপ্তানি বিলের ক্ষেত্রে ফিক্সড রেট ৯৯ টাকা। ১২ সেপ্টেম্বর সোমবার থেকে এটি কার্যকর হয়েছে। এদিকে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো একই রেট দিলেও সব ক্ষেত্রে এই রেট বেঁধে দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে কি না, এ নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। তবে ডলারের দাম হঠাৎ করেই নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসায় অনেকে রেমিট্যান্স প্রেরণের পরিস্থিতি বোঝার চেষ্টা করছেন। এর আগে এক ডলারের বিপরীতে ১১৪-১১৬ টাকা পর্যন্ত মিলেছে।