সৌদির নেতৃত্বাধীন ফুটবল জোটে বাংলাদেশ

স্পোর্টস রিপোর্ট : এশিয়ার ফুটবল উন্নয়ন এবং বার্ষিক বেশ কিছু টুর্নামেন্ট ও অনুষ্ঠান আয়োজনের লক্ষ্য সামনে রেখে সৌদি আরবের নেতৃত্বে গঠিত হতে যাচ্ছে সাউথ ওয়েস্ট এশিয়ান ফুটবল এ্যাসোসিয়েশন বা সোয়াফ নামে নতুন ফুটবল সংগঠন। ১০ সদস্যের এই সংস্থায় বাংলাদেশও যোগ দিচ্ছে বলে জানানো হয়েছে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে। ১০ মে জেদ্দার যে বৈঠক থেকে সোয়াফ গঠনের ঘোষণা দেওয়া হয়, সেখানে উপস্থিত ছিলেনÑ বাফুফের সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন ও সাধারণ সম্পাদক আবু নাঈম সোহাগ। একই বৈঠকে ছিলেন পাকিস্তানের দুজন প্রতিনিধিও, সদস্য হিসেবে দেশটির নামও আছে। তবে গত ১১ মে সোয়াফে যোগ দেওয়ার কথা অস্বীকার করেছে পাকিস্তান ফুটবল ফেডারেশন। সাম্প্রতিক সময়ে এশিয়ান ফুটবল ফেডারেশনের সদর দপ্তর আম্মান থেকে জেদ্দায় না সরানো নিয়ে সৌদি আরবের যে ক্ষোভ, তারই জের হিসেবে দেখা হচ্ছে সোয়াফ প্রতিষ্ঠার উদ্যোগকে। যে ১০ দেশের প্রতিনিধিরা বৈঠকে ছিলেন, তার মধ্যে পাঁচটি দেশ দক্ষিণ এশিয়ার ফুটবল এ্যাসোসিয়েশন সাফের সদস্য। বাংলাদেশ ছাড়াও বাকি দেশগুলো হচ্ছে- ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলংকা ও মালদ্বীপ। আর ওয়েস্ট এশিয়ান ফুটবল ফেডারেশন বা ওয়াফের সদস্যদের মধ্যে ছিল সৌদি আরব, ইয়েমেন, বাহরাইন, কুয়েত ও সংযুক্ত আরব আমিরাত। এই ১০ দেশের ফেডারেশনের প্রধান করা হয়েছে সৌদি অ্যারাবিয়ান ফুটবল ফেডারেশনের সভাপতি আদেল বিন মোহাম্মদ ইজ্জতকে। সদর দপ্তর হিসেবে প্রস্তাব করা হয়েছে জেদ্দাকে। সৌদি আরবের আরবি ভাষার ক্রীড়া দৈনিক আররিয়াদিয়া হতে প্রকাশিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ১০টি ফেডারেশন ঘোষণা করছে যে, অত্র ফেডারেশনের (সোয়াফ) অনারারি প্রেসিডেন্ট হিসেবে থাকবেন তুর্কি আল আল-শেখ (হেড অব সৌদি অ্যারাবিয়ানস জেনারেল স্পোর্টস অথরিটি)। এই ফেডারেশনের লক্ষ্য হচ্ছে এশিয়ান ফুটবলের মান উন্নত করতে বেশ কিছু ইভেন্ট ও প্রতিযোগিতার আয়োজন করা। বেশ কিছুদিন ধরে এএফসি বা এশিয়ান ফুটবল ফেডারেশনের সদর দপ্তর জর্ডানের আম্মান থেকে জেদ্দায় স্থানান্তরের দাবি জানিয়ে আসছে সৌদি আরব। তবে জর্ডান ফুটবল এ্যাসোসিয়েশনের প্রধান ও সাবেক ফিফা সহসভাপতি প্রিন্স আলি বিন আল-হুসাইন সৌদির দাবির বিরোধিতা করেন। এশিয়ান ফুটবল অঙ্গনে গুঞ্জন আছে, প্রিন্স আলি এবং এএফসির বর্তমান প্রেসিডেন্ট বাইরাইনের শেখ সালমান বিন ইবরাহিম আল খলিফার কর্তৃত্বকে চ্যালেঞ্জ জানাতে উদ্যোগী হয়েছে সৌদি আরব। পাশাপাশি রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে সৌদি-কাতার দ্বন্দ্বও এ ক্ষেত্রে অন্যতম বড় প্রভাবক বলে ধারণা করা হচ্ছে। গত ১০ মে জেদ্দায় আয়োজিত বৈঠকে পাকিস্তান থেকে অংশ নিয়েছিলেন পাকিস্তান ফুটবল এ্যাসোসিয়েশনের দুই সদস্য সরদার নাভিদ হায়দার ও ফজল উর রহমান। তবে দেশটির ফুটবল এ্যাসোসিয়েশনেরই এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করে দ্য ডনকে বলেছেন, পাকিস্তান এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে সোয়াফে যোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়নি। বর্তমান এএফসি প্রেসিডেন্ট শেখ সালমান পাকিস্তান ফুটবলের জন্য বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করার কারণেই পাকিস্তান এখন দোটানায় আছে বলে মনে করছে ডন।
সোয়াফ গঠিত হওয়ায় দক্ষিণ এশিয়ার ফুটবল এ্যাসোসিয়েশন সাফের কী হবে, তা নিয়ে চলছে নানা জল্পনা। কাজী সালাউদ্দিন বাফুফের পাশাপাশি সাফেরও সভাপতি। এ বছরের শেষদিকে বাংলাদেশের মাটিতে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের ১২তম আসর অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। এমন পরিস্থিতিতে সাফ কিভাবে দেখছে সোয়াফকে? কাজী সালাউদ্দিনের উত্তর, সাফ সাফের জায়গায় থাকা উচিত। আশা করি, সৌদি আরবের নেতৃত্বে নতুন সংস্থাটি ফুটবল উন্নয়নে আরও কাজ করবে। ভারতের অল ইন্ডিয়া ফুটবল ফেডারেশনের (এআইএফএফ) জেনারেল সেক্রেটারি কুশল দাসও মনে করেন, সোয়াফের কারণে সাফের সমস্যা হবে না, আমার মনে হয়, সাফ নিজের মতো করে এগোবে। সোয়াফ হচ্ছে আরেকটি আঞ্চলিক ফেডারেশন। এখন এএফসি এটিকে স্বীকৃতি দিলেই কেবল আমরা এখানে যোগ দেবো। গত ১২ মে হিন্দুস্তান টাইমসের সঙ্গে আলাপে কুশল আরও বলেন, এটা এখনও প্রস্তাব পর্যায়ে আছে। আমাদের মনে হচ্ছে, সোয়াফ ভারতের ফুটবল উন্নয়নে এবং অন্যান্য দেশের সঙ্গে সম্পর্কের উন্নতিতে ভূমিকা রাখবে। ২৫ মে ১০টি দেশের ফেডারেশনের প্রেসিডেন্টরা আবার বৈঠকে বসবেন। তখন সবকিছু চূড়ান্ত হবে।