সৌদি থেকে আসছে ৩০০ রোহিঙ্গা

ঠিকানা ডেস্ক : সৌদি আরবে থাকা রোহিঙ্গাদের সংখ্যা বা পরিসংখ্যান নিয়ে বিভ্রান্তির অন্ত নেই। কিন্তু ঢাকা ও রিয়াদের কর্মকর্তারা স্বীকার করছেন ওই সব ‘রোহিঙ্গা’র বেশির ভাগের হাতেই বাংলাদেশি পাসপোর্ট ফলে বাংলাদেশ তাদের গ্রহণের আবদার অস্বীকার বা অগ্রাহ্য করতে পারছে না। ক‚টনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, এই কয়েক মাসে প্রায় দুই রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠিয়েছে সৌদি কর্তৃপক্ষ। আরো প্রায় ৩০০ জনকে ফেরত নেয়ার জন্য তালিকা পাঠিয়ে তাদের গ্রহণে অব্যাহতভাবে ঢাকাকে চাপ দিচ্ছে রিয়াদ।

এ নিয়ে সেগুনবাগিচা আনুষ্ঠনিকভাবে কোনো মন্তব্য বা প্রতিক্রিয়া দিতে অপারগতা দেখিয়েছে। মধ্যপ্রাচ্য ভিত্তিক বিশেষ করে আরব দুনিয়ার বরাতে বিভিন্ন গণমাধ্যমের প্রকাশিত তথ্য-উপাত্ত উদৃত করে বিদেশনীতি বাস্তবায়নে সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিনিধিদের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তারা এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু সরকারের সংশ্লিষ্ট ডেস্কগুলোর মধ্যম সরির কর্মকর্তারা জোর দিয়েই বলছেন, সৌদি থেকে শত শত রোহিঙ্গা আসছে।

অনেকে ক্লিয়ারেন্স পেয়েছে এবং এরই মধ্যে তারা বাংলাদেশে এসে পৌঁছেছে। অনেকে প্রবেশের অনুমতির অপেক্ষায় রয়েছে।
তাদের বেশির ভাগের ফেরত পাঠানোর ব্যয় সৌদি সরকারই বহন করছে। সম্প্রতি ঢাকার এক পেশাদার ক‚টনীতিক বলেন, বাংলাদেশ এ পর্যন্ত ১৭৯ জনকে গ্রহণ করেছে। ওই রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশি পাসপোর্ট ছিল বলে তাদের গ্রহণে ঢাকা আপত্তি করতে পারেনি। আরও ২৯৮ জন রোহিঙ্গার একটি তালিকা ঢাকায় পাঠিয়েছে রিয়াদ।

তাদের গ্রহণে অনুরোধও করেছে সৌদি আরব। ঢাকা এখন ওই তালিকা ধরে তাদের বিষয়ে খোঁজখবর নিচ্ছে। তারা কিভাবে পাসপোর্ট সংগ্রহ করল? কোন এলাকার ঠিকানা ব্যবহার করলো এবং তাদের কতজন মূল স্রোতে এরই মধ্যে ঢুকে গেছে তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ওই কর্মকর্তা অবশ্য বলেন, রোহিঙ্গা বা বার্মিজ মুসলিম হিসাবে রিয়াদের তালিকায় নাম থাকা ওই ব্যক্তিদের মধ্যে প্রকৃত অর্থে বাংলাদেশি নাগরিকও রয়েছেন। ওই কর্মকর্তার মতে সৌদি আরবে থাকা অনেক রোহিঙ্গা আদতে রোহিঙ্গা নন। নির্যাতিত রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের লোকজনের প্রতি সৌদি সরকার এতদিন যে সহমর্মিতা বা মহানুভবতা দেখিয়েছে সেটার সুযোগ নিতে অনেক বাংলাদেশি নিজে থেকেই ‘রোহিঙ্গা’ সেজেছেন।

সেই সব ব্যক্তিদের বিষয়েও ঢাকার কর্মকর্তারা খোঁজ বা তথ্য-উপাত্ত পেয়েছেন বলে দাবি করেন এক কর্মকর্তা। বলেন, ‘রোহিঙ্গা’ নিয়ে মুসলিম বিশ্বে নানা ঘটনা রয়েছে। যুগে যুগে অনেক বাংলাদেশি এটার সুযোগ নেয়ার চেষ্টা করেছেন। অনেকে সফল হয়েছেন। রিয়াদের ক‚টনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, রোহিঙ্গাদের বিষয়ে সৌদি আরবের দৃষ্টিভঙ্গিতে সাম্প্রতিক সময়ে পরিবর্তন এসেছে। এর জন্য রোহিঙ্গাদের অপকর্মই দায়ী। বঞ্চনা আর নির্মমতার শিকার ওই সম্প্রদায়ের বাস্তুচ্যুত লোকজন জাহাজসহ বিভিন্ন মারফত মধ্যপ্রচ্যের দেশগুলোতে আশ্রয় নেয়া শুরু করে পাকিস্তান আমলে।

বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পরও চট্টগ্রাম থেকে নৌপথে অনেকে দেশগুলোতে গেছে। কেবল সৌদি আরবেই এখন কয়েক লাখ রোহিঙ্গা বসবাস করে জানিয়ে একটি সূত্র জানায়, পরিবার-পরিজন নিয়ে সৌদি আরবে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের প্রতি রিয়াদ বরাবরই ভ্রাতৃত্বমূলক আচরণ করেছে। কিন্তু তারা মাদক পাচার, চুরি-ডাকাতি এমনকি খুন-ধর্ষণসহ গুরুতর অপরাধগুলোতে জড়িয়ে তারা কেবল নিজেদের পায়েই কুড়াল মারেনি, বাংলাদেশি পাসপোর্ট ব্যবহারের কারণে বাংলাদেশের ইমেজকেও প্রশ্নের মুখে দাঁড় করিয়েছে। প্রাপ্ত তথ্য মতে, এসব অপরাধে সৌদি আরবের বিভিন্ন কারাগারে কয়েক শ রোহিঙ্গা বন্দী রয়েছে। অনেকের সাজা হয়ে গেছে।

অনেকে রায়ের অপেক্ষায়। কিন্তু এটা নিশ্চিত যে দণ্ডপ্রাপ্ত ওই রোহিঙ্গাদের সৌদি আরব আর রাখবে না। সাজা ভোগের পরপরই তারা যে দেশের পাসপোর্টধারী সে দেশেই ফেরত পাঠাবে। সে ক্ষেত্রে তাদের বেশির ভাগই কোনো না কোনোকালে বাংলাদেশি পাসপোট নিতে সমর্থ্য হয়েছে, জানিয়ে ওই কর্মকর্তা বলেন, ফলে এখন তাদের বাংলাদেশেই ফিরতে হচ্ছে।