
ঢাকা : দেশে সৌদি আরবের বড় বিনিয়োগের পথ তৈরি হয়েছে। গত সপ্তাহে বাংলাদেশ সফরে এসে সাড়ে ১৩ কোটি ডলারের বিনিয়োগের চুক্তি সই করেছে উচ্চ পর্যায়ের সৌদি প্রতিনিধি দল। কিন্তু ওই সময় বাংলাদেশের পক্ষ থেকে সাড়ে তিন হাজার কোটি ডলারের বিনিয়োগ প্রস্তাব দেয়া হয়। সৌদি আরব এ প্রস্তাবগুলো বিবেচনায় নিয়েছে। এর মধ্যে আড়াই হাজার কোটি ডলার হচ্ছে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে। তেলনির্ভর অর্থনীতি থেকে বেরিয়ে বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগ করতে চাচ্ছে সৌদি সরকার। সম্প্রতি পাকিস্তানে দুই হাজার ও ভারতে ১০ হাজার কোটি ডলার বিনিয়োগ প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান।
চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে বাংলাদেশ সফর করে সৌদি আরবের অর্থ ও পরিকল্পনামন্ত্রী মোহাম্মেদ আল তোয়াইজরি এবং বাণিজ্য ও বিনিয়োগবিষয়ক মন্ত্রী ড. মজিদ বিন আবদুল্লাহ আল কাসাবির নেতৃত্বে ৩৪ সদস্যের প্রতিনিধি দল। সফরকালে সৌদি দলটির কাছে তিন হাজার ৫০০ কোটি ডলারের বিনিয়োগ প্রস্তাব দেয় বাংলাদেশ। এর মধ্যে শুধু বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতেই প্রায় দুই হাজার ১৩০ কোটি ডলারের বিনিয়োগ প্রস্তাব ছিল বাংলাদেশের। বাংলাদেশের প্রায় ২৯টি প্রস্তাবের মধ্যে দুটি চুক্তি এবং চারটি সমঝোতা করেছে সৌদি আরব।
জানা গেছে, সফরকালে ১০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার একটি সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্র (সোলার আইপিপি) নির্মাণে সৌদি প্রতিষ্ঠান আলফানার সঙ্গে চুক্তি করেছে ইলেকট্রিসিটি জেনারেশন কোম্পানি অব বাংলাদেশ (ইজিসিবি)। এতে ১০ কোটি ডলার বিনিয়োগ করবে সৌদি প্রতিষ্ঠান। আর ট্রান্সফর্মার ও বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম উৎপাদনে সৌদি প্রতিষ্ঠান ইঞ্জিনিয়ারিং ডাইমেনশনের সঙ্গে একটি চুক্তি করেছে জেনারেল ইলেকট্রিক ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানি লিমিটেড। এতে সাড়ে তিন কোটি ডলার বিনিয়োগ করবে সৌদি প্রতিষ্ঠানটি।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান কাজী আমিনুল ইসলাম বলেন, কমপক্ষে তিন হাজার ৫০০ কোটি ডলারের বিনিয়োগের প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। বিনিয়োগ এ অঙ্কের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। বাংলাদেশে আরও বেশি সৌদি বিনিয়োগ আশা করা হচ্ছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ থেকে যে প্রকল্পগুলো প্রস্তাব করা হয়েছিল, তা নিয়ে দুই দেশই কাজ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ জন্য দুই দেশের মন্ত্রীপর্যায়ের একটি যৌথ টাস্কফোর্স করার সিদ্ধান্ত হয়েছে, যা প্রকল্পগুলোকে নিয়ে কাজ করে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাবে। সে সময় শুধু নির্দিষ্ট অঙ্কের মধ্যে বিনিয়োগ সীমাবদ্ধ থাকবে না।
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বাংলাদেশে বিনিয়োগের বিভিন্ন যৌক্তিকতা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, দেশে ১৬ কোটি ৩০ লাখ মানুষ। এর মধ্যে ৬৮ শতাংশই কর্মক্ষম। এই কর্মক্ষম মানুষদের আমরা দক্ষ করে গড়ে তুলতে নানা উদ্যোগ হাতে নিয়েছি। বিদ্যুৎ, সৌরশক্তি, জ্বালানি, টেলিকমিউনিকেশন এবং তথ্যপ্রযুক্তি, পেট্রোকেমিক্যাল, ওষুধ শিল্প, জাহাজ নির্মাণ এবং কৃষি প্রক্রিয়াজাতকরণের মতো খাতে বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে পারবে সৌদি আরব। তিনি বলেন, ২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশ ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত হবে। আমাদের আশা ২০৩০ সালের মধ্যে ৩১তম এবং ২০৪১ সালে ২০তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশ হওয়া।
বিশেষজ্ঞদের মতে, তুলনামূলকভাবে আন্তর্জাতিক পরিমষণ্ডলে বিনিয়োগ আকর্ষণের ভাবমূর্তি বাংলাদেশের কতটা রয়েছে, তা এখানে প্রভাব ফেলেছে। বিনিয়োগের ভাবমূর্তিতে বাস্তব অর্থে দেখলে ভারতে চার হাজার ৫০০ কোটি ডলারের বিনিয়োগ হয় প্রতি বছর। পাকিস্তানে এত সংকটের পরও গত বছর প্রায় ৫০০ কোটি ডলারের বিনিয়োগ হয়েছে। আমরা মাত্র ২০০ কোটি ডলারের বিনিয়োগ নিয়ে এসেছি। যারা বিনিয়োগ করে, তারা রিটার্নের বিষয়টিও চিন্তা করে।
সূত্র জানায়, সৌদি প্রতিনিধি দলের সফরকালে বাংলাদেশ সরকারের জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো (বিএমইটি) এবং সৌদি আরবের আল মাম ট্রেডিং এস্টেটের মধ্যে জনশক্তি রফতানি বিষয়ে একটি সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে। এ ছাড়া ইউরিয়া ফরমালডিহাইড-৮৫ প্ল্যান্ট নির্মাণে সৌদি আরবের ইউসুফ আল রাজি কনস্ট্রাকশন এস্টেটের সঙ্গে একটি সমঝোতা স্মারকে সই করেছে বাংলাদেশ কেমিকেল ইন্ডাস্ট্রিজ কর্পোরেশন। ‘সৌদি-বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব বায়ো-মেডিকেল ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি’ নামে একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে সৌদি আরবের আল আফালিক গ্রুপ (এএইচ গ্রুপ) এবং বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প কর্পোরেশনের মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক হয়েছে। বাংলাদেশ ইস্পাত ও প্রকৌশল কর্পোরেশন (বিএসইসি) এবং রিয়াদ ক্যাবলস গ্রুপ অব কোম্পানির মধ্যে তার উৎপাদনের বিষয়ে একটি সমঝোতা স্মারক হয়েছে।