কাজী ইবনে শাকুর : অবৈধদের সন্তানদের স্কুলে পাঠানো নিয়ে এক ভয়াবহ বার্তা দিয়েছেন শিক্ষাসচিব ও ডোনাল্ড ট্রাম্পের অন্যতম ক্যাম্পেইন অর্থ দানকারী বেটসী ডিভস। এতদিন হাইস্কুল পর্যন্ত লেখাপড়া শিখতে কোন ছাত্র-ছাত্রীকে বৈধ-অবৈধের মধ্যে পড়তে হতো না। সুপ্রিম কোর্টের ১৯৮২ সালের আদেশ অনুসারে যেকোনো ছাত্র-ছাত্রীর হাইস্কুল গ্র্যাজুয়েশন করতে কোনো রকম সমস্যায় পড়তে হতো না। কিন্তু গত ২২ মে বেটসী ডিভস কোন স্কুল ছাত্র-ছাত্রীকে বৈধ না অবৈধ তা শনাক্ত করে ইমিগ্রেশন ও কাস্টমস এনফোর্র্সমেন্ট বা ‘আইস’ এর হাতে তুলে দেয়ার জন্য প্রত্যেক স্কুলের ওপর দায়িত্ব ছেড়ে দেয়ার কথা বলেছেন। বলেছেন, শিশুদের বৈধতা নিয়ে সন্দেহ করলে আইসকে খবর দেবে কিনা তা স্কুল কর্তৃপক্ষের ওপর ন্যস্ত। স্থানীয় কমিউনিটি স্কুলের সাথে মিলে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে। হাউজ এডুকেশন কমিটির সামনে এক টেস্টিমোনিতে একথা বলেন ডিভস। তিনি বলেন, আমাদের আইন আছে, আবার আমরা দিক দর্শনকারী। নিউইয়র্কের ডেমক্রেট প্রতিনিধি আন্দ্রিয়ানো এসপেইল্যাট ডিভসকে জিজ্ঞেস করেন: ফেডারেল ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষের কাছে অবৈধ ছাত্র বা তাদের পরিবার সম্পর্কে রিপোর্ট করার জন্য প্রিন্সিপাল বা শিক্ষকদের দায়িত্ব আছে কিনা? ডিভস বলেন, এই বিষয়টি স্টেট এবং স্থানীয় ইস্যু এবং তারাই তা দেখবে এবং সিদ্ধান্ত নেবে।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের প্রশাসন অভয় নগরীর স্টেট ল’ এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে। কতিপয় স্টেটকে এবং স্থানীয় কর্মকর্তাদের অভিযুক্ত করেছে ফেডারেল ইমিগ্রেশন আইন বাস্তবায়নে প্রতিবন্ধকতার জন্য।
ডিপার্টমেন্ট অব হোমল্যান্ড সিকিউরিটি ইতিপূর্বে বলেছিল যে, তাদের পলিসি সাধারণত স্কুলের মতো স্পর্শকাতর স্থানে প্রয়োগ হবে না। কিন্তু কোন কোন অবস্থায় আইস এজেন্টদের স্কুলে প্রবেশের অধিকার রয়েছে ডিভস তার শুনানির সময় বলেন যে, সুপ্রিম কোর্ট অবৈধ ছাত্রদের এলিমেন্টারি ও সেকেন্ডারি স্কুলসমূহের শিক্ষাদানের জন্য ফান্ড দেয়ার আদেশ দিয়েছে। তিনি বলেন, প্রতিদিন আমরা ১২তম গ্রেডের অবৈধ শিশুদেরও শিক্ষা প্রদানে সমর্থন দিয়ে থাকি।
তবে সিভিল রাইট গ্রুপ ২২ মে মঙ্গলবার ডিভসের মন্তব্যের বিরুদ্ধে বিষোদগার করে যে, তার কথা ১৯৮২ সালের সুপ্রিম কোর্টের প্লাইলার বনাম ভোট মামলার আদেশের বিরুদ্ধে যায়। অথচ সেই মামলায় ছাত্ররা যেকোনো ইমিগ্রেশন স্ট্যাটাস সাপেক্ষে সরকারি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে শিক্ষা পেতে পারে। আমেরিকান সিভিল লিবার্টি ইউনিয়নের ইমিগ্রেশন নীতি ও ক্যাম্পেইনের পরিচালক লরেল্লা প্রেইলি বলেন, একথা পরিষ্কার যে, কোন স্কুল কোন ছাত্রের খবর আইসকে দিলে তা সংবিধান লঙ্ঘনের সামিল। সুপ্রিমকোর্ট পরিষ্কার বলেছে যে, আমেরিকায় প্রত্যেক শিশুর ইমিগ্রেশন স্ট্যাটাস যাই হোক না কেন তার মৌলিক শিক্ষার অধিকার রয়েছে। আর সেক্রেটারি ডিভস আবারও ভুল করেছেন এ বিষয়ে।
লয়ারস কমিটি ফর সিভিল রাইটস আন্ডার ল’ এর প্রেসিডেন্ট ও নির্বাহী পরিচালক ক্রিস্টেন ক্লার্ক বলেন যে, আমাদের সরকারি স্কুলে যে সব পরিবারের পক্ষ থেকে ভর্তি করাতে এবং নাম লেখাতে চায় তাদের ওপর এক ভীতিকর প্রভাব ফেলবে ডিভস এর উক্তি এবং তা সারাদেশে স্কুলসমূহের কাছ থেকে এক ধরনের অবিমৃষ্যকারিতা ডেকে আনবে। ক্লার্ক বলেন, বিভিন্ন স্কুলের পক্ষ থেকে যদি অবৈধ ছাত্রদের সম্পর্কে রিপোর্ট করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয় তার বিবেচনায় অবৈধ ছাত্ররা যদি সুপ্রিম কোর্টের পরিষ্কার সিদ্ধান্ত থাকা সত্ত্বেও তাদের ইমিগ্রেশন স্ট্যাটাসের কারণে পালিয়ে যায় তা তাদের অধিকারকে খর্ব করার সামিল।
ডিভসকে আরও জিজ্ঞাসা করা হয় স্কুলে পিতা-মাতাদেরকে ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষের গ্রেফতারের খবরের বিষয়ে। তিনি উত্তর দেন যে, আমি শুধু একথাই বলব যে, আমরা একদিকে আইনের দেশ এবং অন্যদিকে সহানুভূতির দেশ। এবং আমি মনে করি আমাদের দেশের আইন অনুসরণ করা উচিত এবং যদি তা গুরুত্বপূর্ণ হয় আমি এই কংগ্রেসকে তা পরিবর্তনের জন্য উৎসাহিত করবো।