স্ক্যামারদের অত্যাচারে ১ লাখ ৩৩ হাজার ডলার নিয়ে বিপাকে প্রবাসী বাংলাদেশি

ঠিকানা রিপোর্ট : ব্যাংকে রাখা ১ লাখ ৩৩ হাজার ডলার নিয়ে বিপাকে পড়েছেন এক প্রবাসী বাংলাদেশি। ওই অর্থের ওপর চোখ পড়েছে স্ক্যামারদের। এই অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার জন্য স্ক্যামাররা প্রতিদিন চেষ্টা করত। ওই ব্যক্তির হিসাব নজরদারি করার জন্য ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে অনেকটাই ব্যস্ত থাকতে হতো। বলা যায়, এ জন্য তারা অনেকটাই অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছিল।
বাধ্য হয়ে ওই বাংলাদেশিকে ব্যাংক থেকে জানানো হয়, আমরা দুঃখিত, তোমার অ্যাকাউন্টটি আমরা আর রাখতে পারছি না। তুমি ব্যাংক হিসাবটি বন্ধ করে দাও, আর বন্ধ না করলে আমরা আর এটি রাখতে পারব না। তোমার অর্থ আমরা ফেরত দিয়ে দেব। তোমার নামে আর কখনো নতুন হিসাবও খোলা হবে না। পরে ওই বাংলাদেশি ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে প্রশ্ন করেন, তাহলে এই অর্থ নিয়ে আমি কোথায় যাব? তিনি ব্যাংককে এমনও রিকোয়েস্ট করেছিলেন, তার অন্য ব্যাংকের হিসাবে অর্থ ট্রান্সফার করতে। তাতেও রাজি হয়নি তারা। তিনি স্ত্রীর নামে তার হিসাবের সব অর্থ ট্রান্সফার করতে চেয়েছিলেন, সেটিও রাজি হয়নি। বরং তারা উল্টো বলেছে, এর কোনোটিই সম্ভব হবে না। বরং তোমাকে তোমার অর্থ আমরা একটি চেকে ফেরত দেব। এই চেক তুমি অন্য অ্যাকাউন্টে নিয়ে জমা দেবে। তারা যুক্তি দেখায়, অনলাইনের মাধ্যমে তার ব্যাংকে অর্থ ট্রান্সফার করা হলেও এটি স্ক্যামারদের কাছে চলে যাবে। তখন তার অন্য ব্যাংকের অ্যাকাউন্টটিও ঝুঁকির মুখে পড়বে। পরে স্ক্যামের শিকার হওয়া ব্যক্তি চেক নেন। হাতে হাতে নয়, ডাকযোগে তার বাসায় পাঠানো হয় চেক।
স্ক্যামারের শিকার ওই ব্যক্তির নামের প্রথম দুটি অক্ষর হচ্ছে এম কে। তিনি ১৯ ফেব্রুয়ারি সকালে ঠিকানাকে বলেন, আমি গত বছর স্ক্যামের শিকার হই। স্ক্যামাররা আমার জীবন অতিষ্ঠ করে দিয়েছে। আমি ও আমার স্ত্রী চার মাস ঠিকমতো ঘুমাতে পারিনি। খেতে পর্যন্ত পারিনি। টেনশনে অসুস্থ হয়ে গেছি। নিরুপায় হয়ে গিয়েছিলাম। কিছুই করার ছিল না। স্ক্যামের শিকার হওয়ার পর পুলিশের কাছে গিয়েও সহায়তা পাইনি। আমার কোনো ভুল না থাকলেও বিচার পাইনি। কারণ আমার মোবাইল ফোনের সিম এবং ই-মেইল হ্যাকাররা হ্যাক করেছিল। এরপর হ্যাকাররা আমার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ও কার্ড থেকে অর্থ নিয়ে যায়। একটি ব্যাংক থেকে সাড়ে তিন হাজার ডলার নিয়ে নিয়েছিল। সেটি হয়েছিল অন্য স্টেট থেকে। সেখান থেকে সব কেনাকাটা করে। পরে প্রমাণিত হয় যে ওটি আমি করিনি। এরপর ওই অর্থ ফেরত দিয়েছে। ১ লাখ ৩৩ হাজার ডলার যে ব্যাংক হিসাবে ছিল, ওই অর্থ নেওয়ার জন্য অনবরত চেষ্টা করে যাচ্ছিল।
তিনি বলেন, আমার জীবনে সবচেয়ে তিক্ত অভিজ্ঞতা ছিল, ব্যাংক থেকে আমার ১ লাখ ৩৩ হাজার ডলার হ্যাক করার জন্য প্রতিদিন কমপক্ষে ১০-১২ বার হ্যাকাররা চেষ্টা করত। এটি নজরদারি করার জন্য ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে অনেক বেগ পোহাতে হতো। কেবল আমার হিসাবের ক্ষেত্রেই নয়, যেসব মানুষের ব্যক্তিগত তথ্য চুরি হয়, তাদের সবার হিসাবেও বাড়তি সতর্কতা জারি করে ও নজরদারিতে রাখে ব্যাংক। শেষ পর্যন্ত ব্যাংক কর্তৃপক্ষ বলে, আমরা আর পারব না। তারা আমাকে বলে, তোমার সব তথ্য যেহেতু চুরি হয়ে গেছে এবং হ্যাকাররা তোমার হিসাব থেকে বারবার অর্থ নেওয়ার চেষ্টা করছে, তাই এটি ঝুঁকিপূর্ণ। তারা আমার সব অর্থ এক চেকে দিয়ে দেয়।
এম কে বলেন, আসলে আমি বাসায় চেক নিতে চাইনি। কারণ বাসায় চেক নেওয়াও নিরাপদ ছিল না। আমার বাসার এক ভাড়াটিয়া অনেক দিন ধরেই ভাড়া দিচ্ছিল না। তাকে নোটিশ করেছিলাম বাসা ছাড়ার জন্য কিন্তু বাসা ছাড়েনি। সেই সঙ্গে ওই ব্যক্তি আমার বাসার মেইল নিয়ে নিত। অনেক চিঠি মিস হতো। এ কারণে ভয়ে ছিলাম, সে যদি আমার চেকটি নিয়ে নেয়। কোনো উপায় না পেয়ে পরে বাসায়ই চেক নিতে রাজি হই। তারা ডাকযোগে পাঠায়। এ জন্য প্রতিদিন দুটি থেকে তিনটি মেইল আসার যে সময়, সেই সময়ে আমার স্ত্রী অপেক্ষা করতেন চিঠি আসার। সেভাবেই আমরা মেইল পাই। মেইলে চেক পাওয়ার পর সেটি অন্য আরেকটি ব্যাংক হিসাবে জমা দিই।
তিনি বলেন, ওই ব্যাংকে অর্থ রাখার পরও টেনশনে আছি। অর্থ রাখতেও পারছি না, আবার কোনো অ্যাসেট কিনব, সেটাও সম্ভব হচ্ছে না। কারণ আমার চারটি ক্রেডিট কার্ড ছিল। একটি রেখে সব ক্রেডিট কার্ড বন্ধ করে দিতে হয়েছে। ক্রেডিট কার্ডে লেনদেন বন্ধ করে দিয়েছি। তিনটি ক্রেডিট ব্যুরোতে রিপোর্ট করেছি। এখন সেগুলো সব ফ্রিজ করা আছে। তারা এ জন্য পাসওয়ার্ড দিয়েছে। ওই পাসওয়ার্ড দিয়ে আগামী দিনে কিছু করতে চাইলে সেটি দিয়ে করতে হবে। ক্রেডিট ব্যুরোতে সব ফ্রিজ করে রাখার কারণে আমি চাইলেও ফোন করে খুলতে পারব না। আমাকে সেটি খোলার জন্য ইনপারসন ভ্যারিফিকেশন অথবা কঠোর ভ্যারিফিকেশনের প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হবে।
তিনি বলেন, আমার ফোন নম্বর ও ই-মেইল অ্যাড্রেস স্ক্যামাররা আর ফেরত দেয়নি। সব মিলিয়ে এক কঠিন অবস্থার মধ্য দিয়ে সময় পার করতে হয়েছে। পরে আমি নতুন মোবাইল ফোন নিয়েছি এবং নতুন ই-মেইল খুলতে হয়েছে। এখন সবকিছু নতুন দিয়েই চলছে।
তিনি বলেন, আমিই কেবল এ ধরনের ঘটনার শিকার হইনি, অনেকেই হচ্ছেন। কেউ বলে কেউ বলে না। আমরা দিন দিন অনিরাপদ হয়ে গেছি। প্রতিনিয়ত বেড়েই চলেছে স্ক্যাম। এটা যত দ্রুত সম্ভব বন্ধ করতে হবে। এ ব্যাপারে জরুরি ভিত্তিতে ব্যবস্থা নিতে হবে।