স্বপ্নের কর্ণফুলী টানেল চট্টগ্রাম হবে ওয়ান সিটি টু টাউন

চট্টগ্রাম : নদীর তলদেশ দিয়ে উপমহাদেশের প্রথম সুড়ঙ্গপথ স্বপ্নের কর্ণফুলী টানেল। প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকার এই মহাপ্রকল্পের কাজ এর মধ্যেই ৩২ শতাংশ শেষ হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে আগামী ২৪ ফেব্রুয়ারি শুরু হবে টানেলের মূল খননকাজ। চীন থেকে এসে গেছে প্রয়োজনীয় ভারি যন্ত্রপাতি। এখন শুধু কর্মযজ্ঞ শুরু হওয়ার অপেক্ষা। কর্ণফুলী নদীর এই টানেলে চট্টগ্রাম হবে চীনের সাংহাই সিটির আদলে ‘ওয়ান সিটি টু টাউন’।

প্রকল্পটি বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রার পথে অর্থনীতিকে পূর্বমুখী করার ক্ষেত্রে বড় একটি ধাপ এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ। কেননা, এই টানেল ধরেই অদূর ভবিষ্যতে যোগাযোগ সম্প্রসারিত হবে দেশের বাইরে।

কর্ণফুলী টানেল নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়নের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানানো হয়, মূল খনন কাজ শুরু করতে সকল প্রস্তুতিই সম্পন্ন। চট্টগ্রাম নগরীর প্রান্ত নেভাল একাডেমি দিয়ে টিউব প্রবেশ করে তা বের হবে আনোয়ারায় অবস্থিত কর্ণফুলী ফার্টিলাইজার কোম্পানি (কাফকো) ও চিটাগাং ইউরিয়া ফার্টিলাইজার লিমিটেডের (সিইউএফএল) মাঝামাঝি স্থান দিয়ে। ১১ মিটার দূরত্বে নির্মিত হবে দুটি টিউব। একটি দিয়ে শহর থেকে যানবাহন যাবে নদীর ওপারে, আরেকটি টিউবে প্রবেশ করবে চট্টগ্রাম শহরে। টানেলের সঙ্গে চট্টগ্রাম সিটি আউটার রিং রোড যুক্ত হয়ে সৃষ্টি হবে দীর্ঘ এক মেরিন ড্রাইভ, যা এক পর্যায়ে প্রসারিত হবে মিরসরাই থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত দীর্ঘ এক মেলবন্ধনে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী ২৪ ফেব্রুয়ারি কর্ণফুলী টানেলের বোরিং কাজ উদ্বোধনে সম্মতি দিয়েছেন বলে জানিয়েছে জেলা প্রশাসন। নেভাল একাডেমি থেকে আনোয়ারা প্রান্ত পর্যন্ত এই টানেলের দৈর্ঘ্য হবে সোয়া ৩ কিলোমিটার। টিউব স্থাপিত হবে নদীর তলদেশ হতে ১৮ থেকে ৩১ কিলোমিটার গভীরে। চার লেনের এই টানেলে চলাচল করতে পারবে ভারি যানবাহনও। এতে করে বন্দর সুবিধা নিয়ে নদীর দক্ষিণ পাড়েও গড়ে উঠবে শিল্প কারখানা ও শহর। চট্টগ্রাম হবে ‘ওয়ান সিটি টু টাউন’। পাশাপাশি কর্ণফুলীর তীর থেকে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের পর দীর্ঘ এলাকা সাজবে দৃষ্টিনন্দন সাজে। প্রাচ্যের রানী চট্টগ্রাম ফিরে পাবে তার নান্দনিক চেহারা।

কর্ণফুলীর তলদেশে টিউব দুটির দৈর্ঘ্য হবে ৩ দশমিক ৪ কিলোমিটার। পূর্ব ও পশ্চিম প্রান্তে থাকবে মোট ৫ দশমিক ৩৫ কিলোমিটার এপ্রোচ সড়ক। একই প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে ৭২৭ মিটার ওভারব্রিজ। প্রকল্প বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠান চায়না কমিউনিকেশন এ্যান্ড কনস্ট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেডকে এরই মধ্যে বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে অধিগ্রহণ করা জমি। আগামী ২০২২ সালের ডিসেম্বর নাগাদ এই টানেল দিয়ে যানবাহন চলাচল করবে বলে আশা করছে সড়ক ও সেতু মন্ত্রণালয়।

২৪ ফেব্রুয়ারি খনন কাজ উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী ২৪ ফেব্রুয়ারি কর্ণফুলী টানেল প্রকল্পে খনন কাজের উদ্বোধন করবেন বলে জানিয়েছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।

গত ১১ ফেব্রুয়ারি কর্ণফুলী টানেলের নিরাপত্তা বিষয়ে নৌবাহিনীর সঙ্গে সেতু কর্তৃপক্ষের চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে তিনি এ তথ্য জানান। “আগামী ২৪ ফেব্রুয়ারি টিবিএম মেশিন দিয়ে খনন কাজের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা,” বলেন ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, কর্ণফুলী টানেল নির্মাণ প্রকল্পের সার্বিক নিরাপত্তার দায়িত্ব বাংলাদেশ নৌবাহিনী নিয়েছে। নিরাপত্তার জন্য প্রায় ৬৫ কোটি টাকার চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছে নৌবাহিনী।

অনুষ্ঠানে নৌবাহিনী প্রধান ভাইস এডমিরাল আওরঙ্গজেব চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন।

নৌবাহিনীর পক্ষে কমডোর মাহমুদ মালেক এবং সেতু কর্তৃপক্ষের পক্ষে প্রধান প্রকৌশলী কাজী ফেরদৌস চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন। কর্ণফুলী টানেল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামে নামকরণের প্রস্তাব প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠানো হয়েছে বলে জানান ওবায়দুল কাদের।

অনুষ্ঠানে নৌবাহিনী প্রধান আওরঙ্গজেব চৌধুরী বলেন, “প্রকল্প এলাকার নিরাপত্তা নিশ্চিতের পাশাপাশি নৌবাহিনী প্রাথমিক চিকিৎসা এবং প্রকল্প এলাকায় একটি কার্যালয়ও স্থাপন করবে।

চার লেইনের তিন দশমিক চার কিলোমিটার দৈর্ঘ্য এ টানেল হবে দুই টিউব সংবলিত। পূর্ব-পশ্চিম প্রান্তে হবে পাঁচ দশমিক ৩৫ কিলোমিটার সংযোগ সড়ক। টানেলের মোট ব্যয় ধরা হয়েছে এক হাজার ৫৫ দশমিক ৮৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। বাংলাদেশি টাকায় তা আট হাজার ৪৪৬ দশমিক ৬৪ কোটি টাকা।