ঠিকানা ডেস্ক : স্বপ্নের স্যাটেলাইট ‘বঙ্গবন্ধু-১’ অবশেষে উড়াল দিল মহাকাশের পথে। সত্যি সত্যি বাংলাদেশ ঢুকে গেল অভিজাত এক ক্লাবে। নানা জল্পনা-কল্পনা আর অনিশ্চয়তাকে পেছনে ফেলে মহাকাশের অংশীদারত্ব পেল বাংলাদেশ। এই উৎক্ষেপণের মধ্য দিয়ে শেষ হলো দীর্ঘ প্রতীক্ষার। বাংলাদেশ সময় ১১ মে শুক্রবার দিবাগত রাত ২টা ১৪ মিনিটে বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইটকে নিয়ে উড়াল দেয় যুক্তরাষ্ট্রের বেসরকারি মহাকাশ অনুসন্ধান ও প্রযুক্তি কোম্পানি ‘স্পেসএক্স’ এর ফ্যালকন-৯ রকেট। নিজস্ব কক্ষপথে পৌঁছাতে এই স্যাটেলাইটের সময় লাগবে অন্তত ১০ দিন। এর মধ্যে পথে দুবার যাত্রাবিরতি করবে স্যাটেলাইটটি। ৩০০ কিলোমিটার যাওয়ার পর কয়েক মিনিটের একটা ছোট্ট যাত্রাবিরতি। আর ৩৫ হাজার ৭০০ কিলোমিটার যাওয়ার পর একটু বেশি সময় নেবে। এরপর ধীরে ধীরে পৌঁছাবে নিজস্ব কক্ষপথ ১১৯১ ডিগ্রি পূর্ব দ্রাঘিমাংশে।
স্পেসএক্স কর্তৃপক্ষ তাদের নিজস্ব সাইটে স্যাটেলাইটটি উৎক্ষেপণের পুরো বিষয়টি লাইভ সম্প্রচার করে। উৎক্ষেপণের ১৭ মিনিট পর থেকে বাংলাদেশের ওপর একটি ডকুমেন্টারি লাইভ সম্প্রচার করে স্পেসএক্স। সেখানে ১৯৫২ সাল থেকে এ পর্যন্ত কীভাবে এসেছে বাংলাদেশ, ছবির মধ্য দিয়ে সেই চিত্র ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। সেখানে নিজের বক্তৃতায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা জানান। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বুঝতে পেরেছিলেন যে বহির্বিশ্বের সঙ্গে যোগাযোগ ছাড়া উন্নয়ন সম্ভব নয়। তিনি স্বাধীনতাযুদ্ধে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান। শেখ হাসিনা ১৯৭১ সালে নির্যাতিত নারী ও শহীদ নারীদের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশের জন্য আজ একটা গৌরবজ্জ্বল দিন।
এর আগের দিন ১০ মে বৃহস্পতিবার ঠিক শেষ মিনিটে এসে কেন আটকে গিয়েছিল উৎক্ষেপণ? ১১ মে শুক্রবার রাত ১১টা ২০ মিনিটে নিজের ফেসবুক পেজে একটা স্ট্যাটাস দিয়ে কারণ জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে ও তার তথ্য প্রযুক্তিবিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়। সেখানে তিনি লিখেছেন, ‘উৎক্ষেপণের কম্পিউটারটি যে ত্রুটি শনাক্ত করেছে, তার সাথে রকেটের কোনো সম্পর্ক নেই। ক্ষুদ্র গোলযোগটি ছিল উৎক্ষেপণের স্থল ঘাঁটি সম্পর্কিত। রকেট ও বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উভয়ই স্বাভাবিক, ত্রুটিমুক্ত এবং সক্রিয় আছে। তবে আগের দিন আটকে যাওয়ার কোনো সঠিক ব্যাখ্যা দেয়নি স্পেসএক্স কর্তৃপক্ষ। প্রতিষ্ঠানটির ম্যাটেরিয়াল ইঞ্জিনিয়ার মাইকেল হেমার্চলে বলেছিলেন, ‘স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের পুরো প্রক্রিয়া কম্পিউটারের প্রসেস সেন্সরের আওতায়। ফলে কোথাও কিছু ঠিকমতো কাজ না করলে কম্পিউটারই এটা আটকে দেয়। শেষ পর্যন্ত তারা স্যাটেলাইটি মহাকাশের উদ্দেশে ওড়াতে সক্ষম হয়েছে। উৎক্ষেপণ দেখতে যুক্তরাষ্ট্রের কেনেডি স্পেস সেন্টারে উপস্থিত ছিলেন সজীব ওয়াজেদ জয়ের নেতৃত্বে বাংলাদেশের বিশাল একটা দল। রাতেই ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন তথ্য প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম। তিনি বলেন, স্যাটেলাইটের সফল উৎক্ষেপণ। ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’। মহাকাশে পৌঁছে গেল বাংলাদেশ।
এই স্যাটেলাইটের মূল কক্ষপথে পৌঁছাতে সময় লাগবে অন্তত ১০ দিন। উৎক্ষেপণ স্থান থেকে ৩৫ হাজার ৭০০ কিলোমিটার যাওয়ার পর এটা যাত্রাবিরতি করবে। এরপর ধীরে ধীরে ৩৬ হাজার কিলোমিটার দূরে নিজস্ব কক্ষপথে (১১৯১ পূর্ব দ্রাঘিমাংশে অরবিটাল স্লট) অবস্থান নেবে। স্যাটেলাইট উন্মুক্ত হওয়ার পরপর এর নিয়ন্ত্রণ যুক্তরাষ্ট্র, ইতালি ও কোরিয়ার তিনটি গ্রাউন্ড স্টেশনে চলে যাবে। ২০ দিন পর এটা বাংলাদেশের কাছে বুঝিয়ে দেওয়া হবে। তখন গাজীপুর ও কক্সবাজার গ্রাউন্ড স্টেশন থেকে এটি নিয়ন্ত্রিত হবে। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের প্রকল্প পরিচালক মো. মেজবাহুজ্জামান জানান, ফ্যালকন-৯ রকেটে চারটি অংশ রয়েছে। ওপরের অংশে থাকবে স্যাটেলাইট, তারপর অ্যাডাপটর। এরপর স্টেজ-২ এবং সবচেয়ে নিচে থাকে স্টেজ-১। উৎক্ষেপণের পরপরই স্টেজ ওয়ান চালু হয়ে ওপরের দিকে উঠতে শুরু করে রকেট। প্রচ- শক্তিতে ধাবিত হবে মহাকাশের দিকে।
দুটি ধাপে এই উৎক্ষেপণ প্রক্রিয়া শেষ হবে জানিয়ে প্রকল্প পরিচালক বলেন, প্রথম ধাপটি হলো লঞ্চ অ্যান্ড আরলি অরবিট ফেইজ (এলইওপি) এবং দ্বিতীয় ধাপ হচ্ছে স্যাটেলাইট ইন অরবিট। এলইওপি ধাপে ১০ দিন এবং পরের ধাপে ২০ দিন লাগবে। উৎক্ষেপণ স্থান থেকে ৩৬ হাজার কিলোমিটার দূরে যাবে এই স্যাটেলাইট। ৩৫ হাজার ৭০০ কিলোমিটার যাওয়ার পর রকেটের স্টেজ-২ খুলে যাবে। স্যাটেলাইট উন্মুক্ত হওয়ার পরপর এর নিয়ন্ত্রণ যুক্তরাষ্ট্র, ইতালি এবং কোরিয়ার তিনটি গ্রাউন্ড স্টেশনে চলে যাবে। এই তিন স্টেশন থেকে স্যাটেলাইটটিকে নিয়ন্ত্রণ করে এর নিজস্ব কক্ষপথে (১১৯১ পূর্ব দ্রাঘিমাংশে অরবিটাল স্লট) স্থাপন করা হবে।
ঐতিহাসিক স্থান থেকে সফল উৎক্ষেপণ:
বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ সফলভাবে উৎক্ষেপণের তথ্য নিশ্চিত করেছে যুক্তরাষ্ট্রের বেসরকারি মহাকাশ গবেষণা সংস্থা স্পেসএক্স। বাংলাদেশ সময় ১১ মে শুক্রবার রাত ২টা ১৪ মিনিটে স্পেসএক্সের ফ্যালকন-৯ রকেটের নতুন সংস্করণ ব্লক ফাইভ ফ্লোরিডার কেনেডি স্পেস সেন্টারের লঞ্চ প্যাড থেকে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটকে সঙ্গে নিয়ে রওনা হয় মহাকাশের পথে। উৎক্ষেপণের সাড়ে ৩৩ মিনিটের মাথায় স্যাটেলাইটটি পৌঁছে যায় জিওস্টেশনারি ট্রান্সফার অরবিটে। রকেট থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে মহাশূন্যে গা ভাসায় বাংলাদেশের প্রথম কমিউনিকেশন স্যাটেলাইট। জিওস্টেশনারি স্যাটেলাইট হলো এমন একটি কৃত্রিম উপগ্রহ, যেটি নিরক্ষরেখা বরাবর ওই কক্ষপথে থেকে পৃথিবীকে ২৪ ঘণ্টায় একবার প্রদক্ষিণ করবে। এই প্রদক্ষিণ হবে পৃথিবীর আবর্তনের দিকে, অর্থাৎ পশ্চিম থেকে পূর্বে। ফলে গ্রাউন্ড স্টেশনের সাপেক্ষে উপগ্রহটি থাকবে প্রায় স্থির। এ কারণেই জিওস্টেশনারি শব্দটি এসেছে। বাংলাদেশের এই স্বপ্নযাত্রা শুরু হলো কেনেডি স্পেস সেন্টারের সেই ৩৯এ লঞ্চ কমপ্লেক্স থেকে, যেখান থেকে ১৯৬৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রের অ্যাপোলো-১১ মহাকাশযানটি মানুষকে চাঁদে পৌঁছে দিয়েছিল। স্পেসএক্সের নিজস্ব ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে বলা হয়, ১১ মে শুক্রবার ইডিটি (ইস্টার্ন ডেলাইট টাইম) বিকেল ৪টা ১৪ মিনিটে ফ্লোরিডায় নাসার কেনেডি স্পেস সেন্টারের ঐতিহাসিক লঞ্চ কমপ্লেক্স ৩৯এ (এলসি-৩৯এ) থেকে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ সফলভাবে উৎক্ষেপণ করেছে স্পেসএক্স।
পুরোপুরি কার্যকর হবে ৩ মাসে:
বাংলাদেশের প্রথম যোগাযোগবিষয়ক স্যাটেলাইট বঙ্গবন্ধু-১ পুরোপুরি কার্যকর হতে তিন মাস সময় লাগবে বলে জানিয়েছেন ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তিমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার। মহাকাশে স্যাটেলাইটের সফল উৎক্ষেপণ উপলক্ষে ১৪ মে বিকেলে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ শেষে মন্ত্রী সাংবাদিকদের প্রশ্নে এ কথা বলেন। মোস্তাফা জব্বার বলেন, নির্ধারিত কক্ষপথে সঠিকভাবে স্থাপিত হতে বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইটের প্রায় এক মাস সময় লাগবে। এরপর সেটি সঠিকভাবে কাজ করছে কি না, তা জানতে সব মিলিয়ে তিন মাস সময় লাগবে।
স্যাটেলাইটের তথ্য জানাবে মোবাইল অ্যাপ:
বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট সফলভাবে উৎক্ষেপণের মাধ্যমে মহাকাশে ডিজিটাল বাংলাদশের জয়যাত্রা শুরুর পর এবার স্যাটেলাইটের তথ্য জানাতে একটি মোবাইল অ্যাপ উদ্বোধন করা হয়েছে। অ্যাপটি স্যাটলাইটের আদ্যপান্ত অবস্থান, কর্মক্ষমতা, উপকারিতাসহ বিভিন্ন দিক তুলে ধরবে। ১৪ মে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেসের (বেসিস) পৃষ্ঠপোষকতায় তৈরি করা ইই-ঝধঃ-১ নামে এ অ্যাপটির উদ্বোধন করা হয়। বেসিস ভবনের তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগের সভাকক্ষে এ অ্যাপের উদ্বোধন করেন ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার। উদ্বাধনী অনুষ্ঠানে মন্ত্রী বলেন, অ্যাপের উদ্বোধন ডিজিটাল তথ্যপ্রবাহ ধারাকে আরও বেগবান করলো। বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইটের উৎক্ষেপণ বাংলাদেশের জন্য একটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত। এখন এ অ্যাপ বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানাবে। দেশব্যাপী ইন্টারনেট সেবা ছড়িয়ে দেওয়ার কথা জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, এ বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে কোনো ইউনিয়ন বাদ থাকবে না, যেখানে ইন্টারনেট নেই। মোবাইল অ্যাপটি http://www.technohaven.com/bb-sat-1.html এই লিংকে পাওয়া যাচ্ছে। কয়েক দিনের মধ্যে গুগলের প্লে-স্টোরেও পাওয়া যাবে।
সিগন্যাল পেয়েছে গাজীপুর ও বেতবুনিয়া স্টেশন:
বাংলাদেশকে আনন্দে ভাসিয়ে ১১ মে শুক্রবার মধ্যরাতে শুরু হয় লাল-সবুজের মহাকাশ অভিযান। নির্ধারিত সময়ে তা পৌঁছে যায় নিজ কক্ষপথে। মহাকাশে এই উৎক্ষেপণের মাধ্যমে বাংলাদেশের ইতিহাসে এক গৌরবময় অধ্যায়ের সূচনা হলো। এখন থেকে বাংলাদেশ হবে স্যাটেলাইট ক্লাবের গর্বিত সদস্য। সদ্য উৎক্ষেপণ হওয়া বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট থেকে দেশের স্থানীয় গ্রাউন্ড স্টেশন গাজীপুর ও বেতবুনিয়ায় প্রাথমিক সিগন্যাল গ্রহণ করেছে। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
আবেগে ভাসলেন জয়:
বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট সফলভাবে উৎক্ষেপণ হওয়ায় প্রধানমন্ত্রীর তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় জাতীয় পতাকা হাতে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন। বাংলাদেশ সময় ১২ মে ভোররাতে ফ্লোরিডার কেনেডি স্পেস সেন্টার থেকে বাংলাদেশের প্রথম বাণিজ্যিক উপগ্রহ বঙ্গবন্ধু-১-এর সফল উৎক্ষেপণ ঘটে। জয়সহ প্রবাসী অনেক বাংলাদেশি সেখানে বসে দেশের গৌরবময় এ মুহূর্তের সাক্ষী হন। স্পেস সেন্টারে টি-শার্ট ও ক্যাপ পরিহিত জয়ের হাতে ছিল লাল-সবুজের পতাকা। উৎক্ষেপণের দৃশ্য মনিটরে দেখে তিনি বারবার উল্লাস করছিলেন। উৎক্ষেপণের পর আবেগাপ্লুত জয় কেনেডি স্পেস সেন্টারে উপস্থিত সবাইকে ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, উন্নয়নের মহাসড়কে বাংলাদেশ তা আরও উজ্জ্বলভাবে দৃশ্যমান হলো। দক্ষিণ এশিয়া তথা এশিয়া মহাদেশ ছাড়িয়ে গোটা বিশ্ব এখন অবাক বিস্ময়ে বাংলাদেশের উন্নয়ন প্রত্যক্ষ করবে। এই অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে আগামী নির্বাচনেও আওয়ামী লীগকে ভোট দিতে দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানান জয়।
স্যাটেলাইট আগে ঘুরুক, তখন দেখা যাবে : ফখরুল
বাংলাদেশের প্রথম কৃত্রিম উপগ্রহ বঙ্গবন্ধু-১-এর সফল উৎক্ষেপণে প্রতিক্রিয়া জানায়নি বিএনপি। তবে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, স্যাটেলাইট কর্মক্ষম হওয়ার পর তারা প্রতিক্রিয়া জানাবেন। তিনি কৃত্রিম উপগ্রহের মালিকানা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। বিএনপি মহাসচিব বলেন, দুই ব্যক্তির হাতে স্যাটেলাইটের মালিকানা চলে গেছে। স্যাটেলাইট আগে ঘুরুক, আবর্তন করুক পৃথিবী, পরিক্রমা করুক; তখন দেখা যাবে। ১২ মে শনিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ড্যাব) আয়োজিত প্রতিবাদ সভায় মির্জা ফখরুল বলেন, দুজনের কাছ থেকে স্যাটেলাইটের সুবিধা কিনতে হবে।
বিদেশি গণমাধ্যমে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট:
বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১-এর উৎক্ষেপণের খবরটি গুরুত্বের সঙ্গে প্রচার করেছে বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় গণমাধ্যমগুলো। ১১ মে শুক্রবার রাতে সফলভাবে উৎক্ষেপণ করা হয় বাংলাদেশের প্রথম কৃত্রিম উপগ্রহ। বিবিসি, সিএনএন, এবিসি, এনডিটিভি, সিএনবিসি, জাপান টাইমস, রয়টার্সসহ বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ গণমাধ্যমগুলোতে জায়গা করে নিয়েছে খবরটি। বিবিসির খবরে বলা হয়, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ নিয়ে স্পেসএক্সের ফ্যালকন-৯ নভোযানের এই যাত্রাটি ছিল ক্যালিফোর্নিয়াভিত্তিক রকেট কোম্পানিটির এখন পর্যন্ত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উৎক্ষেপণ। কোনো রকম সার্ভিসিং ছাড়াই অন্তত ১০ বার উৎক্ষেপণ করা যাবে ব্লক-৫ কে। এএফপির খবরে বলা হয়, অত্যাধুনিক ফ্যালকন-৯ রকেটে চড়েই আগামী ডিসেম্বরে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে নভোচারী পাঠাবে স্পেসএক্স। সিএনএনের খবরে বলা হয়, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ বাংলাদেশ ও পার্শ্ববর্তী দেশগুলোতে টিভি, ইন্টারনেট ও অন্যান্য টেলিকম সেবা প্রদান করবে। স্যাটেলাইটটি সফলভাবে উৎক্ষেপণের পর গ্রাউন্ডে সিগন্যালও এসেছে। বার্তা সংস্থা রয়টার্সের খবরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্য উদ্ধৃত করে বলা হয়, আজ আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশ ও বাঙালি জাতির জন্য একটি অত্যন্ত আনন্দ ও গৌরবের দিন। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপণের মধ্য দিয়ে আজ আমরা মহাকাশে বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করছি। এনডিটিভির খবরে বলা হয়, পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন দেশও এ স্যাটেলাইটের সেবা পেতে পারে। তুরস্কের রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা আনাদলুর খবরে বলা হয়, ১১ মে শুক্রবার সফলভাবে উৎক্ষেপণ করা হয় বাংলাদেশের প্রথম স্যাটেলাইট। বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা বঙ্গবন্ধুর নামে এই স্যাটেলাইটটির নাম রাখা হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি দেশের টেলিযোগাযোগ খাতের জন্য একটি মাইলফলক।
বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটে দুর্নীতি কত?
বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট প্রকল্পে ব্যয়ের পূর্ণাঙ্গ হিসাব প্রকাশের দাবি জানিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেছেন, ‘স্যাটেলাইট মহাকাশে পরিভ্রমণ করবে। এতে আমরা গর্বিত। কিন্তু আমরা জানতে চাই, এই প্রকল্পে কত অর্থ অপচয় ও দুর্নীতি হয়েছে? মওদুদ বলেন, আমাদের দাবি হবে, সরকারকে জানাতে হবে যে এই প্রকল্পে কত টাকা খরচ হয়েছে এবং কীভাবে খরচ হয়েছে। কাদের মাধ্যমে খরচ হয়েছে। কাদের এই চুক্তি দেওয়া হয়েছিল। কত টাকায় চুক্তি দেওয়া হয়েছিল। পরিপূর্ণ মনিটরিং করার জন্য যে তত্ত্বাবধায়ক করা প্রয়োজন, সেটা করা হয়েছে কি না? এগুলো দেশের মানুষের জানার অধিকার আছে বলে আমি মনে করি। ১৩ মে দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবে এক প্রতিবাদসভায় তিনি এসব কথা বলেন।