নিজস্ব প্রতিনিধি : ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়ে এখন দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকা। ঋণখেলাপির সংখ্যাও দ্বিগুণের বেশি বেড়ে হয়েছে ২ লাখ ৮৫ হাজার। বিপুল পরিমাণ খেলাপি হলেও তা আদায়ে সরকার কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেয়নি। কেবল বলা হয়েছে, খেলাপি ঋণের পরিমাণ আর বাড়তে দেওয়া হবে না। বিষয়-সম্পদ বাজেয়াপ্ত করা, বিচারপ্রক্রিয়ায় দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি কার্যকরের মতো কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। তেমন কিছু ভাবাও হচ্ছে না। বড় বড় ঋণখেলাপিরা নিজেরাই ব্যাংকের পরিচালক এবং এদের পেছনে রাজনীতিক শক্তি রয়েছে। যে কারণে ব্যাংকগুলোও অসহায়। ব্যাংকগুলোর উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের গভীর যোগসাজশ রয়েছে ঋণখেলাপিদের সঙ্গে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের ক্রেডিট ইনফরমেশন ব্যুরো সূত্রে জানা গেছে, ২০১৪ সাল পর্যন্ত দেশে ঋণখেলাপির সংখ্যা ছিল ১ লাখ ৩০ হাজার। চলতি বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত ঋণখেলাপির সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ২ লাখ ৮৫ হাজার জন। পাঁচ বছরে নতুন ঋণখেলাপি হয়েছেন প্রায় দেড় লাখ। এদের মধ্যে গত বছরের জুন থেকে চলতি অর্থবছরের জানুয়ারি পর্যন্ত নতুন ঋণখেলাপি তালিকাভুক্ত হয়েছে ৫০ হাজারের বেশি।
জানা যায়, বিশাল অঙ্কের ঋণখেলাপির সংখ্যা ও খেলাপি ঋণের পরিমাণ বিপুলভাবে বেড়ে চললেও তা আদায়ের কার্যকর ব্যবস্থার অনুপস্থিতি অর্থনীতির জন্য মারাত্মক। এ অবস্থা আরো অবনতির দিকেই যাচ্ছে। এই ঋণের বড় অংশ আদায় অযোগ্য, কুঋণে পরিণত হয়েছে। বড় বড় ঋণখেলাপির নামও প্রকাশ করা হচ্ছে না। নাম প্রকাশে আদালত থেকে নিষেধাজ্ঞা থাকায় ঋণখেলাপিরা ঋণ পরিশোধে আগ্রহী হচ্ছে না। বড় বড় ঋণখেলাপিসহ ঋণখেলাপিদের কাছ থেকে পাওনা আদায়ের অন্যতম পথ তাদের বিষয়-সম্পদ বাজেয়াপ্ত করা। সরকারের এক সাবেক উপদেষ্টার সহযোগিতায় হল-মার্ক
গ্রুপ , সোনালী ব্যাংকসহ ২৫টি ব্যাংক থেকে পাঁচ হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়ে খেলাপি হয়। বিসমিল্লাহ গ্রুপ ৬ হাজার কোটি টাকা, সানমুন গ্রুপ ২ হাজার ৪০০ কোটি টাকা, ক্রিসেন্ট লেদার ৫ হাজার কোটি টাকার ঋণ খেলাপি হয়। ঋণের বড় অংশ বিদেশে পাচার করার অভিযোগ রয়েছে।
ব্যাংক কর্তৃপক্ষ বারবার তাগিদ দেওয়া এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে নামেমাত্র মামলা দায়ের করেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকসহ সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলোর শৈথিল্য, ঋণগ্রহীতাদের সহযোগিতার অভিযোগ থাকার পরও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। ব্যাংকগুলোর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা, কর্মচারীদের অনেকেই বিদেশে পাড়ি জমিয়েছেন। বড় বড় ঋণখেলাপিদের বিষয়-সম্পদ জব্দ করে নিলামে বিক্রির ব্যবস্থা করা হয়নি। তাদের বিচারের মুখোমুখি করা হয়নি। এর ফলে খেলাপি ঋণগ্রহীতারা উৎসাহিত হচ্ছে। খেলাপি ঋণের পরিমাণও বেড়ে চলেছে।