ঠিকানা রিপোর্ট : জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৭তম অধিবেশনে যোগ দিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা লন্ডন থেকে নিউইয়র্ক পৌঁছেছেন। স্থানীয় সময় ১৯ সেপ্টেম্বর সোমবার রাত ১০টা ২৫ মিনিটে প্রধানমন্ত্রীকে বহনকারী বাংলাদেশ বিমানের একটি চার্টার্ড ফ্লাইট নিউ ইয়র্কের জন এফ. কেনেডি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে।
বিমানবন্দরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভ্যর্থনা জানান জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি মুহাম্মদ আব্দুল মুহিত এবং ওয়াশিংটনে বাংলাদেশের নবনিযুক্ত রাষ্ট্্রদূত মোহাম্মদ ইমরান। এছাড়া প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানাতে বিমানবন্দরে হাজির হয়েছিলেন যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের শত শত নেতা-কর্মী। এয়ারপোর্ট থেকে মোটর শোভাযাত্রা সহকারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিউইয়র্কের অভিজাত হোটেল লোট প্যালেসে নিয়ে যাওয়া হয়। জাতিসংঘের অধিবেশন চলাকালে প্রধানমন্ত্রী এই হোটেলেই অবস্থান করবেন।
ব্রিটেনের রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের শেষকৃত্যানুষ্ঠানে যোগ দিতে গত ১৫ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার লন্ডনের উদ্দেশে ঢাকা ছেড়ে যান প্রধানমন্ত্রী। লন্ডনে যাত্রাবিরতি এবং রানির শেষকৃত্যানুষ্ঠান শেষে ১৯ সেপ্টেম্বর সোমবার স্থানীয় সময় রাত আটটায় প্রধানমন্ত্রীকে বহনকারী ফ্লাইট লন্ডনের স্ট্যানস্টেড আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ত্যাগ করে।

জাতিসংঘে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশনের প্রেস উইং জানায়, ২০ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার জাতিসংঘ সদর দফতরের ট্রাস্টিশিপ কাউন্সিলে সাধারণ পরিষদের সভাপতি কাসাবা কোরোসি আহূত ইউএনজিএ প্ল্যাটফর্ম অফ উইমেন লিডারর্স-এর উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে অংশ নেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একই দিন জাতিসংঘ মহাসচিবের ট্রান্সফর্মিং এডুকেশন সামিটে সম্প্রচারিত একটি ভিডিও রেকর্ডিংয়ে জাতীয় বিবৃতি দেন শেখ হাসিনা।
এছাড়া ২০ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা ইউএনএইচসিআর-এর হাইকমিশনার ফিলিপো গ্রান্ডি সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। সকালে হোটেল লোট প্যালেস নিউইয়র্ক মিটিং রুমে হাইকমিশনার ফিলিপো গ্রান্ডি সাক্ষাৎ করেন।
২১ সেপ্টেম্বর বুধবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে- বাংলাদেশ, বতসোয়ানা, স্লোভাক প্রজাতন্ত্র ও জাতিসংঘ আয়োজিত উচ্চপর্যায়ের টেকসই আবাসনবিষয়ক এক অনুষ্ঠানে যোগদান, ডব্লিউইএফের নির্বাহী পরিচালক শোয়াব ক্লাউসের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক এবং গ্লোবাল ক্রাইসিস রেসপন্স গ্রুপ চ্যাম্পিয়নস মিটিংয়েও যোগদান।

এদিন বিকালে প্রধানমন্ত্রী নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দপ্তরে পদ্মা সেতুর ওপর আলোকচিত্র প্রদর্শনী পরিদর্শন করবেন। পরে কসোভোর প্রেসিডেন্ট ভজোসা ওসমানি-সাদ্রিউ ও ইকুয়েডরের প্রেসিডেন্ট গুইলারমো লাসো মেন্ডোজার সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করবেন। প্রধানমন্ত্রী ২২ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্সের (এএমআর) ওপর একটি প্রাতরাশ বৈঠকে অংশ নেবেন। তিনি আইওএমের মহাপরিচালক আন্তোনিও ভিটোরিনোর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন।
ইউএস-বাংলাদেশ বিজনেস কাউন্সিলের সঙ্গে উচ্চপর্যায়ের একটি গোলটেবিল বৈঠকে যোগ দেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরে তিনি কম্বোডিয়ার প্রধানমন্ত্রী সামদেচ আক্কা মোহা সেনা পাদেই টেকো হুন সেন এবং আইসিসির প্রসিকিউটর নিক ক্লেগ ও করিম খানের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করবেন। ২৩ সেপ্টেম্বর শুক্রবার প্রধানমন্ত্রী জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৭তম অধিবেশনে বাংলায় ভাষণ দেবেন। ২৪ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কের এস্টোরিয়া ম্যানর হোটেলে প্রবাসী বাংলাদেশিদের নাগরিক সংবর্ধনায় ভার্চুয়াল যোগ দেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
উইমেন লিডারর্স বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় নারীদের যুক্ত করার ওপর গুরুত্ব আরোপ করে বলেছেন, যথোপযুক্ত সমাধান খুঁজে বের করা এবং তাদের অভিজ্ঞতা থেকে উপকৃত হওয়ার জন্য নেতৃত্বের দলে নারীদের থাকা গুরুত্বপূর্ণ। ২০ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার জাতিসংঘ সদর দফতরের ট্রাস্টিশিপ কাউন্সিলে সাধারণ পরিষদের সভাপতি কাসাবা কোরোসি আহূত ইউএনজিএ প্ল্যাটফর্ম অফ উইমেন লিডারর্স-এর উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে ভাষণদানকালে এই মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সঙ্কটের সময় নারীরা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তাই, সংকটের কার্যকর সমাধান খুঁজে বের করার জন্য সিদ্ধান্ত গ্রহণে নারীদের যুক্ত করা গুরুত্বপূর্ণ।’ তিনি উল্লেখ করেন, সব ধরণের গতানুগতিকতা ভেঙেএবং অদম্য সাহস এবং নেতৃত্বের দক্ষতা দেখিয়ে নারীরা প্রতিটি ক্ষেত্রে উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে। এবারের সম্মেলনের প্রতিপাদ্য হচ্ছে ‘আজকের আন্তসংযুক্ত চ্যালেঞ্জে নারী নেতাদের দ্বারা রূপান্তরমূলক সমাধান।’
শেখ হাসিনা দৃঢ়ভাবে মনে করেন, জটিল বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় মতামত বিনিময় এবং শুধুমাত্র ‘আমাদের নিজ নিজ দেশের জন্য নয়, মানবজাতির জন্য’ ইতিবাচক ফলাফল আনার লক্ষে এই নেটওয়ার্ককে (ইউএনজিএ প্ল্যাটফর্ম অব উইমেন লিডারস) ব্যবহার করার এটাই উপযুক্ত সময়।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর দেশের দৃষ্টিকোণ থেকে, তাঁরা বিশ্বব্যাপী নারী নেতৃত্বকে উৎসাহিত করার জন্য জাতিসংঘের প্রচেষ্টায় অংশগ্রহণ অব্যাহত রাখার জন্য উন্মুখ হয়ে আছেন। এ বিষয়ে তিনি তিন দফা প্রস্তাব করেন। তা হলো লিঙ্গ সমতার বিষয়ক উপদেষ্টা বোর্ডের স্থানীয়করণ, পর্যাপ্ত রাজনৈতিক ও আর্থিক উপায়ে নারী নেতৃত্বাধীন সুশীল সমাজ-সংস্থাকে লালন ও সমর্থন এবং লিঙ্গ সমতার জন্য সাধারণ এজেন্ডাকে শক্তিশালী করতে নেতৃবৃন্দের একটি শীর্ষ সম্মেলন আহ্বান তুলে ধরেন।
শেখ হাসিনা তাঁর প্রথম দফা প্রস্তাবে লিঙ্গ সমতা বিষয়ে উপদেষ্টা বোর্ড গঠনের সুপারিশ করেন। ‘এটি এখন স্থানীয়করণ করা দরকার। আমাদের সব স্তরে জেন্ডার চ্যাম্পিয়নদের প্রয়োজন, বিশেষ করে তৃণমূল স্তরে, এবং আমরা উদাহরণ সহকারে নেতৃত্ব দিতে পারি’ বলেন তিনি।
এ ছাড়াও, নারী-নেতৃত্বাধীন সুশীল সমাজ সংস্থাকে পর্যাপ্ত রাজনৈতিক ও আর্থিক উপায়ে লালন-পালন এবং সমর্থন করা প্রয়োজন, তিনি তার দ্বিতীয় দফায় বলেন, ‘এই ধরনের প্রচেষ্টাকে সমর্থন করার ক্ষেত্রে জাতিসংঘের একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে।’ সর্বশেষে তিনি লিঙ্গ সমতার জন্য তাদের সাধারণ এজেন্ডাকে শক্তিশালী করতে নেতৃবৃন্দের একটি শীর্ষ সম্মেলন আহ্বান করার লক্ষে সবাইকে আমন্ত্রণ জানান। ‘শুধু আমাদের নয়-সকল নেতাদের লিঙ্গ সমতা এবং নারীর ক্ষমতায়নের অগ্রগতির জন্য দৃঢ় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হওয়া উচিত এবং উপস্থাপন করা উচিত।’
জাতিসংঘে এডুকেশন সামিটে প্রধানমন্ত্রী : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তাঁর সরকার বাংলাদেশের শিশুদের চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের জন্য উপযুক্ত করে বিশ্ব নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে আগামী বছর থেকে একটি নতুন জাতীয় পাঠ্যক্রম চালু করতে যাচ্ছে। আমরা আমাদের শিশুদের সত্যিকারের বিশ্ব নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। ২০ সেপ্টেম্বর সোমবার স্থানীয় সময় নিউইয়র্কে জাতিসংঘ মহাসচিবের ট্রান্সফর্মিং এডুকেশন সামিটে সম্প্রচারিত একটি ভিডিও রেকর্ডিংয়ে জাতীয় বিবৃতিতে প্রধানমন্ত্রী বলেন, নতুন পাঠ্যক্রম আমাদের শিক্ষার্থীদেরকে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের জন্য প্রস্তুত করবে।
তিনি আরো বলেন, এ প্রয়াস তাদেরকে জলবায়ু সহনশীল হওয়ার বিষয়ে সচেতন করবে এবং দেশকে একটি উন্নত, জ্ঞান-ভিত্তিক অর্থনীতিতে পরিণত করতে রূপকল্প-২০৪১ বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে তাদেরকে সত্যিকারের এজেন্ট হিসেবে গড়ে তুলবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে আমরা গবেষণা ও উন্নয়নকে অগ্রাধিকার দিচ্ছি। কারিগরি শিক্ষার জন্য, আমাদের লক্ষ্য হলো আরও ভালো সংযোগ শিল্প স্থাপন করা।