
পবিত্র রমজান শেষ হলো। ঈদুল ফিতরের আনন্দ-উৎসবও শেষ। ইতিমধ্যে দেশবাসী নতুন রাষ্ট্রপতিও পেয়েছেন। শপথ গ্রহণ শেষে নতুন রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন দায়িত্ব পালনও শুরু করে দিয়েছেন। বিদায় নিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ আবদুল হামিদ। দুই মেয়াদে তিনি সুনামের সঙ্গেই দায়িত্ব পালন শেষে বিদায় নিলেন।
এত সব পরিবর্তনের মাঝেও দেশের রাজনৈতিক পরিবেশে কোনো পরিবর্তন ঘটেছে বলে মনে হয় না। আওয়ামী লীগের সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জাতির জন্য একটা বড় চমক, বাংলাদেশের ২২তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিনের নিয়োগ। নতুন রাষ্ট্রপতি নিয়ে যখন বুদ্ধিজীবী সমাজ, দলীয় বড় বড় নেতা, শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ সার্কেলের লোকজনের ধারণায় নতুন রাষ্ট্রপতি হিসেবে অনেকের নাম নিয়েই জল্পনা-কল্পনা চলছিল, সে সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এই নিয়োগ ছিল জাতির জন্য অবশ্যই খুব বড় একটা চমক।
জনাব সাহাবুদ্দিনের নিয়োগ নিয়ে অনেকে অনেক কথা বলেছেন। অনেকে অনেক সংশয় ব্যক্ত করেছেন। ইতিমধ্যে তিনি শপথ নিলেন। এবার সত্যি সত্যি নতুন রাষ্ট্রপতির চমক দেখানোর পালা। তাঁর কর্ম দিয়ে, তাঁর নিষ্ঠা ও আন্তরিকতা দিয়ে কাজ করে তিনি তাঁর মেধা ও প্রজ্ঞার পরিচয় দেবেন এবং সংশয়বাদীদের সব সংশয়ও দূর করবেন বলে আমাদের বিশ্বাস। জনাব সাহাবুদ্দিন আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে সব সময় যুক্ত থাকলেও তিনি মূলত সরকারি চাকরিতেই জীবন কাটিয়েছেন। তবে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় সব সময়ই দৃঢ় ছিলেন। জাতির জনককে যখন ঘাতকেরা নির্মমভাবে হত্যা করে তাঁর প্রিয়তমা স্ত্রী, পুত্র ও পুত্রবধূসহ; এমনকি শিশুপুত্র রাসেলকে পর্যন্ত ঘাতকেরা হত্যা করে, তখন আওয়ামী লীগের অনেক বড় বড় নেতা আত্মরক্ষায় ব্যস্ত; সেই সময় পাবনা জেলা শহর থেকে সেই হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদ জানিয়ে জেল পর্যন্ত খেটেছেন জনাব সাহাবুদ্দিন।
সে কারণেই তাঁর আদর্শিক দৃঢ়তা দিয়ে তিনি বাংলাদেশের জটিল রাজনীতির জট ছাড়িয়ে তাকে রাজনীতির গণতান্ত্রিক ধারায় নিয়ে আসতে সক্ষম হবেন বলে দেশ ও প্রবাসের বহু মানুষই মনে করেন। নতুন রাষ্ট্রপতির সামনে বহুবিধ চ্যালেঞ্জ। দুর্নীতি, রাজনীতির ময়দানে অস্থিরতা, সহিংসতা, বাজার অস্থিরতাসহ সামনে দ্বাদশ সংসদীয় নির্বাচন। সেই নির্বাচন নিয়ে কঠিন চ্যালেঞ্জ। ২০১৪, ২০১৮’র নির্বাচনী ফল প্রত্যাখ্যানের ঘটনা ঘটে। অনেকেই অনেক রকম যোগ-বিয়োগের হিসাব মেলাতে ব্যস্ত। বিএনপি ইতিমধ্যেই ঘোষণা করেছে, দাবি না মিটলে নির্বাচনে আসবে না। নতুন রাষ্ট্রপতির কাছে সব মহলই এমন একটা চমক আশা করছেন, তিনি সব দল-মতের মানুষকে নিয়ে একটি সর্বাত্মক অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন উপহার দিয়ে তাঁর নিয়োগের চেয়েও বড় চমক দেখাবেন দেশবাসীকে।
দেশবাসীর এই প্রত্যাশা পূরণ হোক। নতুন রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিন সফল হোন রাষ্ট্র পরিচালনায়। নির্বাচিত হওয়ার পর জাতি তাঁর কাছে যে দলনিরপেক্ষ, পক্ষপাতহীন ভূমিকা আশা করেন, সে ক্ষেত্রেও তিনি সফল হবেন। দেশবাসী তাঁর সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করে।