
ফারুক আজম :
স্বাধীনতা, তোমার বয়স অর্ধশত বছরেরও বেশি
রক্ত পায়ে হেঁটে হেঁটে কতটা পথ পার হয়ে গেল
চড়াই-উতরাই, দিগন্তের পর দিগন্ত অতিক্রম করে
ঝড়ক্ষুব্ধ উত্তাল সমুদ্র পেরিয়ে তুমি ‘পসাইডন’।
তোমার সঙ্গে আমার অনেক স্মৃতি সে কি শুধু সেদিনের?
আমরা দুই ব্যাকুল প্রেমিক-প্রেমিকা দীর্ঘশ্বাসে ভেসে ভেসে
হাজারো বাধা রোমিও-জুলিয়েট, যেমন কিউপিড-সাইকি
সেই প্রচণ্ড ভালোবাসার কাছে ঘূর্ণিঝড়ে উড়ে অন্তরায়।
জেনেছি মৃত্যু কত তুচ্ছ, তার বিকট ভঙ্গি, হুংকার
ছিনিয়ে নিয়ে গেছে হাত, পা, চোখ, ঝাঁঝরা বুক
হাতে নিয়েছি এসএলআর গোলাপ যেমন
গ্রেনেড, ফুলের তোড়া দিয়েছি ছুড়ে শত্রুর দিকে।
যুদ্ধ মানে নিষ্ঠুরতা, যুদ্ধ মানে মার না হয় মর
যুদ্ধ ঘটায় কারা? কোন চক্রের পাশা খেলা বাদুড়ের?
কার আগ্রাসনী অভিলাষে? কে নিহত করে ধবল পায়রা?
প্রজ্বলিত হৃদয় জানে, মাকে রক্ষা করার মতো পবিত্র শপথ কিছু নাই।
ট্রিগারে আঙুল চেপে সারি সারি লাশের বীভৎস গন্ধে গিয়েছি হেঁটে
মাঠের পর মাঠ, কখনো হামাগুড়ি দিয়ে, কখনো পুকুরে ডুব দিয়ে
নগরের রাজপথে অকস্মাৎ বোমায় উড়িয়ে দিয়ে শত্রুর জিপ
ভয়ানক ক্রোধ, শপথ, প্রেম মিশে গেছে লবণাক্ত স্বেদে লোহিত কণায়।
আমার সেই আহত, অঙ্গহীন শরীরের তুমিই করেছ শুশ্রƒষা
তোমারই প্রভূত সেবায় অপত্যস্নেহে সারিয়েছ সৈনিকের ক্ষত
সেই লাশ ছড়ানো মাঠে এখন নবীন ধানের হিল্লোল,
সেই পুকুরে এখন শাপলার হাসি।
স্বাধীনতা, আমরা ক্রমাগত হারিয়ে যাচ্ছি,
মিশে যাব ধুলোর মাঝে ধুলো হাড়ের সঙ্গে হাড়,
প্রত্যহ ভোরের তবু আলো কি বুলিয়ে দেবে না শান্তির প্রলেপ?
তন্দ্রা ঝেড়ে জেগে উঠবে না আজকের শিশু পরম্পরায়?
স্বাধীনতা, তোমার বয়স নেই, দিনপঞ্জিকায় তুমি বাধা নও
তোমার মুখে পড়েনি কোনো কালের ছাপ
তুমি চির যৌবনের, উদ্যমের, তুমিই প্রেরণার
যুগে যুগে সব তরুণ-তরুণীর তুমিই প্রথম সূর্য ॥