দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম বৃহৎ প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন কেন্দ্র হালদা নদীর সাম্প্রতিক দূষণকে স্মরণকালের ভয়াবহ হিসেবে উল্লেখ করেছে হালদা নদী রক্ষা কমিটি।
শুক্রবার (২৯ জুন) চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে কমিটির সভাপতি ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রাণিবিদ্যা বিভাগের শিক্ষক মনজুরুল কিবরিয়া হালদা নদীর চিত্র তুলে ধরেন।
টানা কয়েক দিনের অতিবৃষ্টি ও পাহড়ি ঢলের কারণে শিল্পবর্জ্য মিশে দূষিত হচ্ছে হালদা। আশপাশের বসতিতে এ শিল্পবর্জ্য ঢুকে পড়ায় পুকুরের মাছ মরে যাচ্ছে, ফসলী জমি নষ্ট হচ্ছে বলে জানান হালদা রক্ষা আন্দোলনকারীরা।
উদ্বেগ প্রকাশ করে মনজুরুল কিবরিয়া বলেন, গত ১৯ জুন রাত থেকে এই দূষণ শুরু হয়। এরপরের দুইদিন হালদা এবং এর অববাহিকার বিলগুলোতে ব্যাপক হারে মাছ মরে ভেসে উঠেছে।
নদীর বিভিন্ন অংশের পানির নমুনা সংগ্রহ করার পর তা পরীক্ষা করে অক্সিজেনের মাত্রা কম ও অ্যামোনিয়ার মাত্রা ভয়াবহ হারে বেশি পাওয়ার কথা জানান তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, প্রতি লিটার পানিতে স্বাভাবিকভাবে দ্রবীভূত অক্সিজেনের পরিমাণ থাকে অন্তত পাঁচ মিলিগ্রাম। কিন্তু সংগ্রহ করা পানির নমুনায় অক্সিজেনের মাত্রা পাওয়া গেছে শূন্য দশমিক ২১ থেকে এক দশমিক শূন্য মিলিগ্রাম পর্যন্ত। আর হালদার পাশের খন্দকিয়া খালে দ্রবীভূত অ্যামোনিয়া পরিমাণ স্বাভবিকের চেয়ে ১০০ গুণ বেশি।
দ্রবীভূত অক্সিজেন কমার পাশাপাশি ও অ্যামোনিয়ার বিষক্রিয়াই হালদা নদীতে মাছ মারা যাওয়ার অন্যতম কারণ বলে মনে করছে মনজুরুল কিবরিয়া।
তিনি বলেন, নানা রকম দূষণের পরও এ বছর হালদা নদীতে রেকর্ড পরিমাণ ডিম সংগ্রহ হওয়ায় মানুষের মনে আশার সঞ্চার হয়েছিল। কিন্তু তার তিন মাসের মাথায় এ দূষণ ভয়াবহ বিপর্যয় ঘটিয়েছে; মানুষ এখন উদ্বিগ্ন।
হালদা নদী রক্ষা কমিটির এই সংবাদ সম্মেলনে সম্মিলিত মতামত গ্রহণের মাধ্যমে দূষণ ও বিপর্যয়ের সঠিক কারণ উদঘাটন ও হালদাবান্ধব সিদ্ধান্ত গ্রহণের দাবি জানানো হয়।
এর আগে গত শনিবার মদুনঘাটে হালদা পাড়ে এক মানববন্ধনে বিভিন্ন সংগঠনের পাশাপাশি এলাকার মানুষও হালদা নদীর পাশাপাশি সংযুক্ত সাতটি খাল দূষণমুক্ত করার দাবি জানায়।
বিভিন্ন সরকারি সংস্থা, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় হালদা রিভার রিসার্স ল্যাররেটরি ও বিশেষজ্ঞদের সহযোগিতায় হালদা রক্ষা কমিটি গত ২১ থেকে ২৫ জুন নদীর বিভিন্ন অংশের পানির নমুনা সংগ্রহ ও মৃত মাছ সংগ্রহ করে।
তাদের পর্যবেক্ষণের ভিত্তিতে সংবাদ সম্মেলনে হালদায় দূষণের চারটি সম্ভাব্য চারটি উৎসের কথা তুলে ধরেন মনজুরুল।
হালদা নদী রক্ষার স্বার্থে আবাসিক এলাকার বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য এসটিপি স্থাপন করা ছাড়াও ‘বামনশাহী খাল পুনঃখনন করে অনন্যার মাস্টার ড্রেনেজ সিস্টেমকে বামনশাহী ও কুয়াইশ খাল থেকে বিচ্ছিন্ন করার কথা বলা হয় সুপারিশে।
অন্যদের মধ্যে হালদা রক্ষা কমিটির উপদেষ্টা সাংবাদিক শামসুল হক হায়দারী, সহ-সভাপতি চৌধুরী ফরিদ, সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আলী, রেজা মুজাম্মেল, আমিন মুন্নাসি সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।