
শিতাংশু গুহ : প্লেটো নাকি বলেছিলেন, ‘মানুষ যেমন হবে, রাষ্ট্রও তেমনই হবে। মানুষের চরিত্র দ্বারাই রাষ্ট্র গড়ে ওঠে।’ বাংলাদেশকে সবাই একটি চমৎকার, ভালো রাষ্ট্র হিসেবে দেখতে চায়। সে জন্য দেশের মানুষগুলোকে তো ভালো হতে হবে, তাই না?
বঙ্গবন্ধু ‘সোনার বাংলা’ গড়তে চেয়েছিলেন। তখন বলা হয়েছিল, সোনার বাংলা গড়তে ‘সোনার মানুষ’ চাই! সোনার মানুষ ছিল না, তাই সোনার বাংলা হয়নি!
দেশবাসী যেমন দেশটিও তেমন। বাঙালি অন্যকে দোষ দিতে পারদর্শী, সবকিছুর জন্য সরকারকে দোষ দেওয়া বাঙালির স্বভাব। অথচ যিনি দোষ দিচ্ছেন, তিনি কিন্তু তার দায়িত্বটি ঠিকমতো পালন করছেন না! যেমন যৌতুক, সবাই চায় যৌতুক প্রথা বন্ধ হোক। কিন্তু হচ্ছে না, কারণ কেউ দায়িত্ব নিচ্ছেন না বা দায়িত্ব পালন করছেন না। সবাই অনুকূল স্রোতে গা ভাসিয়ে চলছেন!
দেশে ‘ঘুষ’ একটি সর্বজনীন ব্যবস্থা, কেন? কারণ প্রায় সবাই খায়! ক্ষেত্রবিশেষে খেতে না চাইলেও খেতে হয়! সরকার চাইলেও এটি বন্ধ করতে পারবে না, কারণ সমাজটা এভাবেই গড়ে উঠেছে, এটি সামাজিক দায়িত্ব। ঘুষখোরকে সবাই চেনে, কেউ ঘৃণা করে না। দেশে ৫০০ টাকার চোরকে গাছে বেঁধে পেটানো হয়, ৫ হাজার কোটি টাকার চোরকে সবাই ‘স্যার’ বলে! সুতরাং দেশে নির্বাচন নিয়ে বদনাম আছে? বলা হয়, সরকার প্রভাব খাটায়! ক্ষমতায় টিকে থাকতে যেকোনো সরকারই প্রভাব খাটাতে চাইতে পারে, কিন্তু আজ পর্যন্ত কোনো নির্বাচন কমিশন কি রুখে দাঁড়িয়েছে? ‘সেশন’ নামে ভারতের এক প্রধান নির্বাচন কমিশনারের নাম আমার মনে আছে। তিনি প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীকে পর্যন্ত কোর্টে এনে ছেড়েছেন! তাই বলছিলাম, দায়িত্ব নিতে হয়!
জানি, বলবেন, গুম হয়ে যাবেন, মিথ্যা মামলায় জেল হবে? হোক না, উচ্চ পদ যখন নিয়েছেন, উচ্চ দায়িত্বও তো নিতে হবে? কেউ কি বলবেন, বাংলাদেশে সুষ্ঠু নির্বাচন করতে গিয়ে আজ পর্যন্ত কোনো নির্বাচন কমিশনার জেল খেটেছেন বা গুম হয়েছেন বা নিহত হয়েছেন? বলছিলাম কি, ‘আসুন, আমরা আয়নায় নিজের চেহারাটা দেখি, নিজেকে প্রশ্ন করি, আমি কি সঠিক?’
প্লেটোর কথায় আসি, মানুষের চরিত্র দ্বারাই রাষ্ট্র গঠিত হয়। সুতরাং বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রটিকে জনকল্যাণমূলক রাষ্ট্র হিসেবে পেতে চাইলে নাগরিকের চরিত্র কল্যাণমূলক হতে হবে। নিজ নিজ দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করতে হবে। মানুষ ভালো হলে রাষ্ট্র ভালো হতে বাধ্য। এটিও সত্য, রাষ্ট্রব্যবস্থা এর নাগরিকদের বা সমাজকে সুন্দরভাবে পরিচালিত করতে পারে!
রাষ্ট্র যদি মানুষের নাগরিক অধিকারগুলো নিশ্চিত করে, অর্থাৎ শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বাসস্থান, জীবিকার গ্যারান্টার হয়; অধিকাংশ মানুষ এমনিতেই ভালো হয়ে যাবে। আমি কি খুব বেশি জ্ঞান দিচ্ছি? তা নয়, আমি নিজেকে দিয়ে দেখি, আমি ভালো আছি, মিথ্যা বলতে হয় না, কাউকে তেল দিতে হয় না, ঘুষ দিতে হয় না, ভালোই! বাংলাদেশে থাকলে কি তা পারতাম?
আজকাল স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার কথা শোনা যাচ্ছে। এ জন্য স্মার্ট যুবসমাজ দরকার হবে, তা কি আছে? স্বীকার করুন বা না করুন, দেশের শিক্ষাব্যবস্থার মান অতিশয় নিম্ন, তরুণসমাজ বিদেশমুখী, সামাজিক নিরাপত্তার অভাব, অনুকরণীয় আদর্শ বা ব্যক্তিত্ব নেই। সমাজের সর্বত্র ভোগ, ত্যাগের কোনো বালাই নেই। ধর্মের ঢোল পিটিয়ে, ফেসবুক-টিকটক ভিত্তিক স্মার্ট দিয়ে কি স্মার্ট দেশ গড়া সম্ভব?