হাজিদের উপর ৮৮৯ কোটি টাকার ভ্যাট

সৌদি থেকে ৪-৫ হাজার রোহিঙ্গা ফেরত আসছে

নিজস্ব প্রতিনিধি : হজযাত্রীদের স্বার্থে খরচ মাথাপিছু ১০ হাজার টাকা করে কমানোর ঘোষণা ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের মধ্যে আশার সঞ্চার করেছিল। কিন্তু বাস্তবে খরচ কমছে না। বরং ২৫ হাজার টাকা করে বাড়ছে। বাস সার্ভিস, জমজম পানি, অতিরিক্ত সার্ভিস, মক্কা, মিনা ও আরাফায় নাশতা, খাবার, তাঁবুতে ম্যাট্রেস, বিছানার চাদর, বালিশ, কম্বল সরবরাহ, ওয়াটার কুলার স্থাপন, মিনা-আরাফা ও আরাফা-মুজদালিফা-জামারা ট্রেনভাড়া, জেদ্দা বিমানবন্দর থেকে মক্কা যাওয়ার সময় হাজিদের খাবার সরবরাহ, লাগেজ পরিবহন, স্থানীয় সার্ভিস চার্জ, হজযাত্রীদের কল্যাণ তহবিল, প্রশিক্ষণ ফি, খাওয়া খরচ, হজ গাইড ব্যয়-হজ ব্যবস্থাপনার প্রতিটি ক্ষেত্রে ভ্যাট আরোপ করা হয়েছে। এ সিদ্ধান্ত সৌদি কর্তৃপক্ষের। ভ্যাট বাবদ যে ২৫ হাজার টাকা আসবে, তার পুরোটাই হাজিদের বহন করতে হবে। ভ্যাট বাবদ বাড়তি এ অর্থ নেবে সৌদি সরকার। এতে বিমানের ভাড়া ১০ হাজার টাকা করে কমানোর পরও ভ্যাটের বোঝা হজযাত্রীদের ঘাড়েই পড়বে।
ধর্ম মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, গত হজে সর্বমোট খরচ পড়ে ৩ লাখ ৯৭ হাজার ৯২৯ টাকা। এবারের হজে তা বেড়ে দাঁড়াবে ৪ লাখ টাকার ওপর। অপর একটি ক্যাটাগরিতে মোট ব্যয় ছিল ৩ লাখ ৩১ হাজার ৩৫৯ টাকা। এবার আরো ২৫ হাজার টাকা বাড়ছে। বিমান ভাড়া ১০ হাজার টাকা কমালেও মোট খরচ বাড়ছেই। এবার হজে যাবেন ১ লাখ ২৭ হাজার ১৭৮ জন। এদের মধ্যে ১ লাখ ২০ হাজার জন যাবেন বেসরকারি হজ এজেন্সিগুলোর মাধ্যমে। এই এজেন্সিগুলোর হজ-বাণিজ্যের শিকার হয়ে আসছেন হাজিরা। এদের অবৈধ কার্যক্রম বন্ধে ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয় প্রতিবছরই দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলে আসছে। কিন্তু বাস্তবে কোনো বছরেই তা হয়নি। উল্টো প্রতিবছরই এজেন্সির সংখ্যা বাড়ানো হচ্ছে। বেসরকারি এজেন্সির সংখ্যা বেড়ে ১ হাজার ৪০০টিতে উন্নীত হয়েছে। গত হজে ব্যাপক অনিয়ম, হাজিদের হয়রানি করার অভিযোগ ছিল তিন শতাধিক এজেন্সির বিরুদ্ধে। কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা বলতে জরিমানা, সাময়িকভাবে কার্যক্রম স্থগিত রাখা হয় মাত্র ৭০টি এজেন্সির বিরুদ্ধে। এসব এজেন্সি এবার আবার হজ-বাণিজ্যে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছে। এসব এজেন্সিই রোহিঙ্গাদের হজের নামে সৌদি আরবে পাঠায়। হজ ক্যাম্প থেকে এবং ওমরাহ হজের নামে বিভিন্ন সময়ে তারা সৌদি আরবে যায়। এ পর্যন্ত কত সংখ্যক রোহিঙ্গা বাংলাদেশ থেকে বাংলাদেশি পাসপোর্টধারী হিসেবে সৌদি আরব পাড়ি দিয়েছে, তার কোনো তথ্য সরকারের হাতে নেই। তবে এ সংখ্যা নয় থেকে দশ হাজারও হতে পারে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন। সৌদি কর্তৃপক্ষ মক্কা-মদিনাসহ বিভিন্ন শহরে অভিযান চালাচ্ছে। জানা যায়, এ পর্যন্ত কত সংখ্যক রোহিঙ্গা বাংলাদেশ থেকে বাংলাদেশি পাসপোর্টধারী হিসেবে সৌদি আরব পাড়ি দিয়েছে তার কোনো তথ্য সরকারের হাতে নেই। সৌদি কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে বাংলাদেশ সরকারের কাছে তথ্য চেয়েছে। তবে এ সংখ্যা ৪ থেকে ৫ হাজারও হতে পারে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন। সৌদি কর্তৃপক্ষ মক্কা-মদিনাসহ বিভিন্ন শহরে অভিযান চালাচ্ছে। জানা যায়, এ পর্যন্ত এক হাজারের বেশি রোহিঙ্গাকে আটক করা হয়েছে। রোহিঙ্গারা সেখানে সামাজিক-আইনশৃঙ্খলা সমস্যার সৃষ্টি করছে। তারা বিভিন্ন শহরে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে। সৌদি কর্তৃপক্ষ রোহিঙ্গাদের আর্থিক সহায়তার নীতি নিয়েছিল। সেখান থেকে অন্য দেশে যাওয়ার সুযোগও অনেকে করে নেয়। সৌদি কর্তৃপক্ষ সম্প্রতি রোহিঙ্গাদের আর্থিক সহায়তা প্রদান বন্ধ করে দিয়েছে। তারা রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে ফেরত পাঠাচ্ছে। এ পর্যন্ত প্রায় ৩৫০ জনকে ফেরত পাঠানো হয়েছে। আগামী কয়েক মাসের মধ্যে কয়েক হাজার রোহিঙ্গাকে ফেরত পাঠানো হবে বলে জানা যায়।