রাজধানী ডেস্ক : ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণে হাতিরঝিল এখন বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ প্রকল্পের বাস্তবায়ন আটকে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। অর্থায়নসহ নানা বিষয়ের সুরাহার পর মূল কাজ শুরুর দিকে যাচ্ছিল প্রকল্পটি। কিন্তু হাতিরঝিলের পানিতে উড়াল সড়কের র্যাম্প স্থাপনের নিষেধাজ্ঞায় থমকে গেছে কার্যক্রম। এ কারণে প্রকল্পের বুয়েট লিংক নির্মাণে বিপত্তি দেখা দিয়েছে। এ নিয়ে সিদ্ধান্ত পেতে দেরি হলে ক্ষতিপূরণ চাইতে পারে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানও। তা ছাড়া বিলম্বের কারণে ব্যয় বৃদ্ধির শঙ্কাও দেখা দিয়েছে। হাতিরঝিলের সৌন্দর্য রক্ষায় পানিতে র্যাম্প বসাতে বাধা রয়েছে সরকারের পক্ষ থেকে। কিন্তু নির্মাতা প্রতিষ্ঠান থেকে দফায় দফায় জানানো হচ্ছে বিকল্প পথ নেই। একই বিষয়ে সেতু কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে ফের অবগতির পর ‘আর কোনো পথ না থাকায় হাতিরঝিল পরিহারের সুযোগ নেই’ বলে সর্বশেষ চিঠিতে জানিয়ে দিয়েছে বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান ইতালির-থাই কোম্পানি। এ ব্যাপারে করণীয় নির্ধারণে প্রধান কার্যালয়কে জানানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সেতু বিভাগ। একই সঙ্গে ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষকে (ডিটিসিএ) চিঠি দেওয়ার কথা রয়েছে। এ ছাড়া নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের প্রস্তাবিত সংশোধিত নকশা এক্সপার্ট কমিটির আহ্বায়ক ড. জামিলুর রেজা চৌধুরী এবং হাতিরঝিল বাস্তবায়নের তৎকালীন এসডব্লিউওর (ওয়েস্ট) মহাপরিচালকের সামনে উপস্থাপনের পরিকল্পনা নিয়েছে সেতু কর্তৃপক্ষ।
এ বিষয়ে প্রকল্প পরিচালক কাজী মো. ফেরদৌস একটি জাতীয় দৈনিককে বলেন, উড়াল সড়ক নির্মাণের কাজ এগিয়ে চলছে। তবে হাতিরঝিলের একটা অংশের ব্যাপারে সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছি। আশা করি এর সমাধান হয়ে যাবে।
সেতু বিভাগ সূত্র জানিয়েছে, পিপিপির আওতায় বাস্তবায়নাধীন উড়াল সড়কটি নির্মাণের কথা হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক পর্যন্ত। ২০১১ সালে নেওয়া এ প্রকল্পের মূল কাজ করা যাচ্ছে না অর্থায়ন, ডিজাইনসহ নানাবিধ কারণে। অবশ্য এর আগে দু-দফা ডিজাইন পরিবর্তন হয়েছে। তবে নতুন করে অ্যালাইনমেন্ট পরিবর্তনের সুযোগ নেই বলে মত দিচ্ছে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার। পানিতে র্যাম্প না দিয়ে রি-ডিজাইন করতে গত ফেব্রুয়ারিতে অনুরোধ করে প্রকল্প কর্তৃপক্ষ।
এ পরিপ্রেক্ষিতে ঠিকাদাররা জানিয়েছে, ভূমি অধিগ্রহণ বাদ দিয়ে সীমিত জায়গায় অ্যালাইনমেন্ট ডিজাইন করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে বেশির ভাগ র্যাম্প কারভেচারে (বক্রতা) ডিজাইন করা। সোজা অংশ খুবই কম। আগে মূল ডিজাইনে ৫৫টি কলাম পানির মধ্যে এবং ৪৯টি কলাম ব্যাংক অ্যান্ড সাইড সোপে ছিল। পরে তা সংশোধন করে ৫০টি কলাম পানির মধ্যে এবং ৪৯টি পাড়ে রেখে ডিজাইন করা হয়। এতে করে হাতিরঝিলের ওয়াটার রিটেনশন ক্যাপাসিটি (পানির ধারণক্ষমতা) অক্ষুণœ রেখে লিংক নির্মাণ করা সম্ভব বলে দাবি করছে বিনিয়োগকারীরা। তাদের যুক্তি, কলাম এবং ফুটিংয়ের জন্য যে পরিমাণ পানির সক্ষমতা ক্ষতিগ্রস্ত হবে, তার সমপরিমাণ আয়তনের জায়গা খনন করে হাতিরঝিলের সক্ষমতা বাড়ানো হবে। অধিকন্তু পিলারের জন্য ভরাট এলাকায় সৌন্দর্য বর্ধন করা যেতে পারে। তবে এ প্রস্তাবের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত দিতে পারছে না সেতু বিভাগ। কারণ উড়াল সড়কের পিলারে হাতিরঝিলের যেন ক্ষতি না হয়, এ নিয়ে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে অনেকবার। ঐকমত্যে পৌঁছানো যায়নি। বিষয়টি গড়ায় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় পর্যন্ত। নির্মাতারা সোনারগাঁও-বুয়েট লিংক নিয়ে বলা হয়, পিলার হাতিরঝিলের দক্ষিণ দিকের পানিতে পড়বে। পিলার পরিহারের সুযোগ নেই। এ লিংকটির জন্য অন্য কোনো বিকল্প অ্যালাইনমেন্ট পাওয়া যায়নি। এ লিংকটি বাদ দিতে নারাজ নির্মাতারা। তাদের বক্তব্য হচ্ছে ওই লিংক বাদ দিলে প্রকল্পের ট্রাফিক ফোরকাস্টের ওপর প্রভাব পড়বে। মানে তাদের টোল বাবদ আয়ে প্রভাব পড়বে। সে ক্ষেত্রে চুক্তি সংশোধন করা লাগতে পারে।