হাতিরঝিলে পুলিশ হেফাজতে আসামির মৃত্যু, দুই পুলিশ সদস্য বরখাস্ত

ছবি সংগৃহীত

ঠিকানা অনলাইন : ঢাকা মহানগর (ডিএমপি) পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের হাতিরঝিল থানা হেফাজতে থাকা চুরির মামলার এক আসামির মৃত্যু হয়েছে। নিহত আসামির স্বজনেরা পুলিশের নির্যাতনে মৃত্যুর অভিযোগ করছেন।

নিহত ব্যক্তির নাম রুম্মন শেখ ওরফে সুমন (২৭)। তিনি পিওরইট ওয়াটার ফিল্টার কোম্পানিতে ডেলিভারি ম্যান হিসেবে কাজ করতেন।

খবর পাওয়ার পর বিক্ষুব্ধ স্বজনেরা হাতিরঝিল থানার সামনে বিক্ষোভ করেন। এতে থানার পার্শ্ববর্তী সড়কে যানজটের সৃষ্টি হয়। পরে মরদেহ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের মর্গে পাঠায় পুলিশ। বিকেল ৫টার দিকে মরদেহের ময়নাতদন্ত করা হয়।

এ ঘটনায় দুই পুলিশ সদস্যকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগ আনা হয়েছে তাদের বিরুদ্ধে। তারা হলেন হাতিরঝিল থানার ডিউটি অফিসার এসআই হেমায়েত হোসেন ও কনস্টেবল মো. জাকারিয়া। এ ছাড়া এ ঘটনায় একটি তদন্ত কমিটিও গঠন করা হয়েছে। এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন তেজগাঁও বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) আজিমুল হক।

থানা সূত্রে জানা গেছে, গত ১৩ আগস্ট সুমনের বিরুদ্ধে ৫৩ লাখ টাকা আত্মসাৎ ও প্রমাণ লোপাট করতে একই প্রতিষ্ঠানে থাকা সিসিটিভি ক্যামেরার হার্ডডিস্ক চুরির অভিযোগে মামলা করা হয়। মামলাটির তদন্ত করছেন হাতিরঝিল থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আদনান বীন আজাদ। গত ১৯ আগস্ট তিনিই সুমনকে বাসা থেকে গ্রেপ্তার করেন।

এটি আত্মহত্যা নয়, পুলিশের অবহেলা ও হত্যা উল্লেখ করে সুমনের শ্যালক সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘আমার ভাইকে গত শুক্রবার (১৯ আগস্ট) সকাল ১০টার দিকে থানার পুলিশ ও তার অফিসের ম্যানেজার অফিসে যাওয়ার কথা বলে নিয়ে আসে। আমরা তখন বলি, আজ শুক্রবার অফিস বন্ধ। কিন্তু তারা শোনে নাই। পরে পুলিশ আমার ভাইকে থানায় এনে আটকে রাখে। আমরা দেখা করতে এলে দেখা করতে দেয়নি। আজ সকালে ভাইয়ের জন্য পরোটা, ডিম, ভাজি কিনে নিয়ে আসি। তখনো আমাদের দেখা করতে দেওয়া হয়নি। দুপুর ১২টার দিকে আমাদের বলা হয় আদালতে পাঠানো হয়েছে। কিন্তু আদালতে গিয়ে দেখি বন্ধ।’

সাইফুল বলেন, ‘পরে থানায় যোগাযোগ করা হলে তারা বলে, সুমন অসুস্থ। ঢাকা মেডিকেলের জরুরি বিভাগে আছে। সেখানে গিয়েও দেখি নাই। পরে নানা নাটকীয়তা শেষে বিকেল ৪টার দিকে জানানো হয়, আমার ভাই থানার ভেতরে আত্মহত্যা করেছে। লাশ সোহরাওয়ার্দী মর্গে আছে। ময়নাতদন্ত শেষে এখন মরদেহ বুঝিয়ে দেওয়া নিয়েও নাটক করছে পুলিশ। থানা থেকে বলছে, লাশ রামপুরায় নেওয়া যাবে না। সরাসরি গ্রামে নিয়ে যেতে হবে।’

সাইফুল অভিযোগ করে বলেন, ‘আমার ভাই রাত ৩টা ২৮ মিনিট পর্যন্ত জীবিত ছিল। এরপর কী হয়েছে, সে বিষয় কিছু বলছে না পুলিশ। থানা পুলিশ অন্যায়ভাবে নির্যাতন করে ভাইকে মেরেছে। আমার ভাই ওই অফিসে চাকরি ছেড়ে দিতে চাওয়াই কাল হলো! অফিসের লোকজনের সহযোগিতায় পুলিশ এমন কাজ করল। আমার ভাইয়ের কোনো দোষ ছিল না।’

সুমন স্ত্রী জান্নাতকে নিয়ে রামপুরা হাইস্কুল গলিতে একটি ফ্ল্যাটে ভাড়া থাকতেন। গত ১৯ আগস্ট সেই বাসা থেকেই তাকে ধরে নিয়ে যায় হাতিরঝিল থানা পুলিশ।

এদিকে থানায় আসামির মৃত্যুর অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তেজগাঁও বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) আজিমুল হক বলেন, ‘রাজধানী হাতিরঝিল থানায় চুরির মামলার গ্রেপ্তার আসামি সুমন শেখ আত্মহত্যার ঘটনায় পুলিশের দুই সদস্যকে দায়িত্বে অবহেলার দায়ে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।’

ঠিকানা/এনআই