ঠিকানা রিপোর্ট: বাংলাদেশে চলমান কোটা সংস্কার আন্দোলনের প্রতি সমর্থন জানিয়েছে নিউইয়র্কে বসবাসরত ছাত্রছাত্রীবৃন্দ। সেই সাথে তারা আন্দোলনকারীদের উপর ছাত্রলীগ এবং পুলিশের নগ্ন হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন। তারা আরো বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কোটা সংস্কার থাকবে না বলে মহান জাতীয় সংসদে বলেছিলেন, এখন তিনি তার কথা পরিবর্তন করছেন কেন? কারা এর পেছনে ইন্ধন দিচ্ছেন? অবিলম্বে কোটা সংস্কার করার আহবান জানিয়েছেন ছাত্রছাত্রীবৃন্দ। সেই সাথে আহতদের চিকিৎসা দেয়ারও আহ্বান জানান।
গত ৭ জুলাই বিকেলে জ্যাকসন হাইটসের ড্রাইভার সিটি প্লাজায় এই প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ সমাবেশের আয়োজন করা হয়। এই আয়োজনে ছিলো না কোন সংগঠনের নাম। যারা আয়োজন করেছেন তারা সকলেই ছাত্রছাত্রী। তারা কোন রাজনৈতিক দলের সদস্যও নন। তারা বলেন, আমরা সবাই ছাত্র। এদের মধ্যে অনেকেই এখনো লেখাপড়া করছেন, আবার কেউবা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে লেখাপড়া শেষ করে এসেছেন, কেউ বা নতুন করে কলেজে ভর্তি হয়েছেন। তাদের পুরো আয়োজনটি ছিলো একেবারেই ভিন্ন। তারা নিজেরা কালিকলম নিয়ে পোস্টার এবং ব্যানার লিখেছেন। ব্যতিক্রমী এই বিক্ষোভ সমাবেশে ছিলো না কোন সভাপতি বা কোন পরিচালক। তারা ব্যানার এবং ফেস্টুন নিয়ে ড্রাইভার সিটি প্লাজায় অবস্থান করেন এবং ঘুরে ঘুরে দেশাত্মবোধক সঙ্গীত পরিবেশন করেন।
বিক্ষোভ সমাবেশে তারা বলেন, আমরা বাংলাদেশে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের প্রতি সমর্থন জানাতেই এখানে এসেছি। সেই সাথে আন্দোলনকারীদের উপর ছাত্রলীগ এবং পুলিশের হামলার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। আমরা চাই কোটা সংস্কার করা হোক। কারণ সরকারি চাকরিতে যদি ৫৭% কোটায় নিয়োগ দেয়া হয়, তাহলে মেধাবি ছাত্রছাত্রীদের অবস্থান কোথায়? কারা দেশকে মেধাশূণ্য করার ষড়যন্ত্র করছে? তারা আরো বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মহান জাতীয় সংসদে দাঁড়িয়ে বলেছিলেন কোন কোটা থাকবে না। কিন্তু আজকে কেন তিনি তাঁর অবস্থান থেকে সরে গেলেন? এবং কেন মিথ্যার আশ্রয় নিলেন? কারা এর পেছনে ইন্ধন জোগাচ্ছে। তারা ক্ষোভের সাথে বলেন, প্রতিবাদ করা যে কোন নাগরিকের গণতান্ত্রিক অধিকার। সেই অধিকার কেন কেড়ে নেয়া হচ্ছে? আন্দোলনকারীদের উপর কেন ছাত্রলীগ এবং পুলিশ হামলা করবেন? তারা আরো বলেন, এখন দেখা যাচ্ছে প্রধানমন্ত্রীর কাছে মেধার চেয়ে হাতুড়ি লীগ অনেক প্রিয়। যে কারণে হাতুড়ি সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না। উল্টো যাদের হাতুড়ি দিয়ে অমানুষের মত পিটিয়ে জীবনের জন্য পঙ্গু করে দেয়া হচ্ছে তাদের চিকিৎসা না দিয়ে হাসপাতাল থেকে বের করে দেয়া হচ্ছে। কোন সভ্য সমাজ বা দেশে এটা হতে পারে না। আমরা পরিষ্কারভাবে বলতে চাই, কোটার সংস্কার করতে হবে, আহতদের সুচিকিৎসা এবং ক্ষতিপূরণ দিতে হবে সেই সাথে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীদের আইনের আওতায় আনতে হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স করা তনু বলেন, আমরা কোটা সংস্কারকারীদের সাথে একাত্মতা ঘোষণা করতে এবং তাদের উপর বর্বরোচিত হামলার প্রতিবাদ জানাতে এসেছি। ঠিকানার এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, একজন ছাত্র হিসাবে এই বর্বরোচিত হামলার প্রতিবাদ জানাতে এসেছি। মধ্যযুগীয় কায়দায় যেভাবে হাতুড়ি দিয়ে, লাঠি দিয়ে পিটিয়ে ছাত্রদের আহত করা হচ্ছে এবং ছাত্রীদের লাঞ্ছিত করা হচ্ছে, তা দেখে কোন সচেতন মানুষ ঘরে বসে থাকতে পারে না, আমরাও পারিনি।
ছাত্রছাত্রীরা প্রতিবাদ সমাবেশে বিভিন্ন ধরনের প্লেকার্ড নিয়ে আসে। সেই ফেস্টুনের ভাষা ছিলো- ‘হাতুড়ি সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াও বাংলাদেশ, হাতুড়িই শক্তি নাকি কলমই শক্তি- প্রশ্ন এখন বাংলাদেশে, সভা- সমাবেশ করা আমার রাজনৈতিক অধিকার, স্বাধীনতা হীনতায় কে বাঁচিতে চায় হে, হাতুড়িই শেষ কথা নয়, যদিও দূরে আছি বেশ, তবুও তোমারেই ভালবাসি বাংলাদেশ, বাংলাদেশ তুমি কান্দো কেন, কেন চেয়ে আছ মা মুখ পানে, ধরা যাবে না, ছোঁয়া যাবে না, বলা যাবে না কথা, রক্ত দিয়ে কিনলাম আজব স্বাধীনতা, আবার তোরা মানুষ হ, আবার জাগবে মানুষ, মানুষ জাগবে ফের’ ইত্যাদি।
এদিকে গত ৮ জুলাই বিকেলে জ্যাকসন হাইটসের ডাইভার সিটি প্লাজায় কোট সংস্কার আন্দোলনকারীদের উপর হামলার প্রতিবাদে এবং সমর্থন জানিয়ে আরেকটি বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশ ইন আমেরিকা, মুক্তফোরাম ও ভয়েস ফর ভিসিআরবি’র আয়োজনে এই বিক্ষোভ সমাবেশে সাংবাদিক, ছাত্রছাত্রী এবং সর্বস্তরের লোকজন অংশগ্রহণ করেন। বিক্ষোভ সমাবেশে কোটা সংস্কার আন্দোলনে ছাত্রছাত্রীদের উপর হামলার নিন্দা জানানো হয় এবং তাদের দাবির প্রতি সমর্থন জানানো হয়। বিক্ষোভ সমাবেশে নেতৃবৃন্দ বলেন, কোটা সংস্কার এখন সময়ের দাবি। প্রধানমন্ত্রী নিজেই কোটা থাকবে না আশ্বাস দিয়েছেন। তাহলে এখন কেন তাদের উপর ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা এবং পুলিশ বাহিনী হামলা করছে। তারা আরো বলেন, প্রধানমন্ত্রীর এখন উচিত হাতুড়ি সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া কিন্তু তা না করে নিরাপরাদ ছাত্রছাত্রীদের কেন গ্রেফতার করা হচ্ছে, রিমান্ডে নেয়া হচ্ছে। বিক্ষোভ সমাবেশে যারা অংশগ্রহণ করেন তারা হাতে করে বিভিন্ন ধরনের প্লেকার্ড নিয়ে আসেন। যার মধ্যে লিখা ছিলো- কোটা পদ্ধতির সংস্কার করুন, মানুষের কথা বলার অধিকার ফেরত দিন, আটক ছাত্রছাত্রীদের মুক্তি চাই, রাষ্ট্রের দুর্বৃত্তায়ন বন্ধ হোক, মানবিক বাংলাদেশ চাই, জন্মভূমি নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন, বিচার ছাড়া মানুষ হত্যা বন্ধ কর, হাতুড়ি সন্ত্রাস নিপাত যাক, বাক স্বাধীনতা রক্ষা পাক, রাষ্ট্রীয় বাহিনীর দলীয়করণ বন্ধ কর, জেগে ওঠো বাংলাদেশ, অধিকার রক্ষা কর।
বিক্ষোভ সমাবেশে অংশগ্রহণ করেন সাংবাদিক মনির হায়দার, মনোয়রুল ইসলাম, মনিজা হায়দার, সাহেদ আহমেদ, মোহাম্মদ সেলিম, গিয়াস উদ্দিন প্রমুখ।