ঠিকানা রিপোর্ট : আগে থেকেই ক্ষেত্র তৈরি করা ছিলো। এক দিকে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ এবং অঙ্গ সংগঠনের মধ্যে চরম বিরোধ। মারামারি মামলা এবং হামলা, অন্যদিকে অনুষ্ঠানে দলীয় নেতাকর্মীদের অবজ্ঞা- সব মিলিয়ে নেকতাকর্মীরা ছিলেন ক্ষুব্ধ। তার উপরে অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের ফুল দেয়ার কথা থাকলেও শেষ মুহূর্তে বাতিল করায় যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমানের উপর চরম ক্ষেপে ছিলো দল এবং অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা। যার বহি:প্রকাশ ঘটে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গণসংবর্ধনা সভায়। নেতাকর্মীরা জানান, আপনাকে জানানোর অন্য কোন কৌশল আমাদের নেই। কারণ তারাই সারাক্ষণ নেত্রীর সাথে থাকেন। আমাদের দেখা করার সুযোগ হয় না। তাছাড়া তিনি দীর্ঘদিন ধরেই সভাপতি আছেন। আমরা চাই সম্মেলন করে নেত্রী নতুন কমিটি দেবেন।
‘নো মোর সিদ্দিক’ স্লোগানে শুরু হওয়া সমাবেশের সমাপ্তি ঘটলো ‘নো মোর সিদ্দিক’ উচ্চারণের মধ্য দিয়েই। নিউইয়র্কে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ‘প্রবাসী নাগরিক সংবর্ধনা’ শীর্ষক সমাবেশের সভাপতি তথা যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমানকে সরিয়ে নতুন কমিটির দাবিতে সোচ্চার ছিলো ছিলো এ স্লোগান। এ অবস্থার অবসানে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় দফতর সম্পাদক ড. আব্দুস সোবহান গোলাপ কয়েক দফা আহবান জানিয়েছেন কিন্তু কোন লাভ হয়নি। আওয়ামী লীগের সম্পাদক মন্ডলির সদস্য শেখ সেলিমও স্লোগান না দেয়ার আহবান জানান। কিন্তু তার কথাও কেউ শুনেনি। যে কারণে প্রধানমন্ত্রী বেশ কয়েকবার ধমকও দিয়েছেন। তার ধমকেই মূলত: সবাই চুপ হয়। চুপ হলেও আবার যখন সভাপতি বক্তব্য দিতে ওঠেন- তখনো সবাই বলে ওঠেন- নো মোর সিদ্দিক, গো হোম সিদ্দিক। স্লোগানে স্লোগানে পুরো সমাবেশস্থল মুখরিত হয়ে ওঠে। এক সময় প্রধানমন্ত্রী মহা বিরক্ত হয়ে ওঠেন। প্রথমে বিষয়টি জানতে চান, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি এবং শেখ সেলিমের কাছে। তারা প্রধানমন্ত্রীকে বিষয়টি জানান। অবশেষে প্রধানমন্ত্রীর ধমকে স্লোগান বন্ধ হয়। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর সংবর্ধনা সভায় কখনো অতীতে এই ধরনের পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়নি।
উল্লেখ্য, ৩ বছরের অনুমোদিত কমিটির বয়স এখন ৭, এজন্যে মাঠ পর্যায়ের অধিকাংশই দাবি জানাচ্ছেন নতুন কমিটির।
জাতীয় সঙ্গীত সমাচার
সমাবেশের সঞ্চালক যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সামাদ আজাদের আহবানে বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনের সময় সাংস্কৃতিক সম্পাদক ও কন্ঠযোদ্ধা শহীদ হাসান বলেন, ‘অন্যান্যবার হারমোনিয়াম তবলাসহ বিভিন্ন যন্ত্রের ব্যবস্থা থাকে। এবার কিছুই নেই। তাই আমাকে খালি গলায় গাইতে হবে এবং আপনাদেরকেও কন্ঠ মেলাতে হবে।’ এভাবেই তিনি আয়োজকদের অব্যবস্থাপনার প্রতি ইঙ্গিত করেন।
অতিথিরা বিব্রত
আমন্ত্রিত অতিথিগণের বসার জন্যে তেমন কোন ব্যবস্থা নজরে পড়েনি। এজন্যে ঢাকা থেকে আসা বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের অনেকেই বিব্রতবোধ করেন। এমনকি জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন মোমেনেরও আসন হয়নি দর্শক সারিতে। ঢাকা থেকে আগত অনেক মন্ত্রী, এমপিও দর্শক সারিতে বসার স্থান পাননি। এক এমপি বসেছেন অন্য এমপির কোলে। কিন্তু মঞ্চে বসে ছিলেন যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের গুটিকতক নেতা। এ সব নেতা দুপুর থেকেই মঞ্চে বসেছিলেন। পুরো অনুষ্ঠানে সিট ছেড়ে তাদের কোথাও যেতে দেখা যায়নি। কয়েক ঘন্টা কীভাবে খাম্বার মত বসেছিলেন সেটাই অনেকের প্রশ্ন। সিট হারানোর ভয়ে কেউ বাইরেও যাননি। কিন্তু এমপিদের আসন না দিয়ে তারা কেন মঞ্চে এমন প্রশ্নও করেছেন অনেকে।
ফুুলেল শুভেচ্ছা হয়নি
শুরুতে সমাবেশের সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমান ঘোষণা করেন যে, সভাপতি শেখ হাসিনাকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানাবেন ৯ সংগঠনের নেতা-কর্মীরা। তিনি তাদের নামও ঘোষণা করেন। একেক সংগঠনের ৫ জনকে প্রস্তুত থাকারও আহবান জানান। সে অনুযায়ী সবকিছু ঠিক থাকলেও তার বাস্তবায়ন ঘটেনি। অর্থাৎ সমাবেশ আপন গতিতে শেষ হলেও শেখ হাসিনাকে ফুলেল শুভেচ্ছা প্রদানের পর্বটি বেমালুম ভুলে যান সঞ্চালক। ‘নাগরিক সংবর্ধনা’ নাম দেয়া হয়, অথচ শেখ হাসিনাকে ফুল দিয়ে অভ্যর্থনা কিংবা সংবর্ধিত করা হলো না। এমনকি নাগরিকদের কারো বক্তব্য দেয়ার সুযোগও ছিল না। সমাবেশে স্বাগত বক্তব্য দেন কেন্দ্রীয় দফতর সম্পাদক ও প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারি ড. আব্দুস সোবহান গোলাপ।
সংবাদিকরা নিজের স্বার্থ ছাড়া কিছুই বুঝে না
ঠিকানা রিপোর্ট: গত ২৩ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ কর্তৃক আয়োজিত গণসংবর্ধনা সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সাংবাদিকরা নিজের স্বার্থ ছাড়া অন্য কিছু বুঝেন না। তারা শুধু নিজের স্বার্থই বুঝেন সমাজের স্বার্থ বুঝেন না। সমাজের স্বার্থ অবশ্যই তাদের বুঝতে হবে। আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ করেছি। যে কারণে অনেকেই ফেইসবুকসহ বিভিন্ন এ্যাপস ব্যবহার করে আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা প্রচারণা চালাচ্ছে। যা আমরা দেখেছি শিশু-কিশোরদের আন্দোলনের সময়। তাদের কাঁধে ভর করে অনেকেই ষড়যন্ত্র করার চেষ্টা করেছেন। তিন দিনের মাথায় শিশুদের আন্দোলনে আমরা বুড়া খোকাদের উপস্থিতি দেখেছি। অন্যদিকে ফেইসবুক ব্যবহার করে এবং ইন্টারনেটের মাধ্যমে পর্ন ছবিসহ অন্যান্য অপরাধ করছে। যে কারণে আমরা ডিজিটাল আইন পাশ করেছি। প্রধানমন্ত্রী হিসাবে সামাজিক ব্যাধি বন্ধ করা আমার দায়িত্ব।