
ঠিকানা ডেস্ক : অরাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব মহৈশ্বর্যশালী প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প একের পর এক নানা কেলেঙ্কারির নাগ-নাগিনীর সাত প্যাচে জড়িয়ে যাচ্ছেন। সীমান্ত প্রাচির নির্মাণের জন্য প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প প্রস্তাবিত ২৫ বিলিয়ন ডলারের বরাদ্দ ৬০-৩৯ ভোটে নাকচ হওয়ার পর ১৮ লাখ ড্রীমারের ভাগ্য সুপ্রসন্নকারী অভিবাসন সংশ্লিষ্ট আইনটিও প্রয়োজনীয় ৬০ ভোটের অভাবে সিনেটে মুখ থুবড়ে পড়েছে। ড্রীমারদের নাগরিকত্বের সুযোগ সৃষ্টিকারী বিলটির সপক্ষে ৫৪ এবং বিপক্ষে ৪৫ ভোটের কারণে তা সিনেটে অনুমোদন পায়নি। আর ইতোমধ্যে মরার উপর খাড়ার ঘার মত সর্বাপেক্ষা আলোড়ন সৃষ্টিকারী ফেডারেলের প্রতিবেদনটি ট্রাম্পের বিশ্বাসযোগ্যতার মর্মমূলে সজোরে আঘাত হেনেছে।
১৭ ফেব্রæয়ারি প্রকাশিত দ্য জাস্টিস ডিপার্টমেন্টের প্রতিবেদনে ভøাদিমির পুতিনের একেবারে ঘনিষ্ঠ ১ বন্ধুসহ সর্বমোট রাশিয়ার ১৩ জন প্রভাবশালী ব্যক্তির ২০১৬ সালে অনুষ্ঠিত আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে হস্তক্ষেপের সুস্পষ্ট বর্ণনা রয়েছে। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয় যে ডেমক্র্যাটিক দলীয় সাবেক ফার্স্ট লেডী ও সিনেটর হিলারী রডহাম ক্লিন্টকে ধরাশায়ী এবং ট্রাম্পের বিজয় ছিনিয়ে আনার জন্য অভিযুক্ত ক্রেমলিনের এ সকল প্রভাবশালী ব্যক্তি ন্যাক্কারজনক ভ‚মিকায় অবতীর্ণ হয়েছিল। জাস্টিস ডিপার্টমেন্টের তোলপাড় সৃষ্টিকারী উক্ত প্রতিবেদনে বলা হয় যে ফেইসবুক, ইন্সটাগ্রাম এবং টুইটারের সোস্যাল মিডিয়ায় ভূয়া পরিচিতিতে অ্যাকাউন্ট খুলে ২০১৪ সাল থেকেই প্রেসিডেন্ট নির্বাচনকে প্রভাবিত করার জন্য ৮০ জনেরও বেশি রাশিয়ান দিন-রাত কাজ শুরু করেন।
অ্যাকাউন্টগুলো দেখলে মনে হবে যে তৃনমূল পর্যায়ের সাধারণ কোন আমেরিকান অ্যাক্টিভিস্ট এ সকল অ্যাকাউন্ট খুলেছেন। তবে এগুলোর মুখ্য উদ্দেশ্য ছিল জাতীয় গণতন্ত্রে ব্যাঘাত সৃষ্টি করা, বর্ণবৈষম্যকে উস্কে দেয়া ও রাজনৈতিক বীজ বপন করা। ডেপুটী এটর্নী জেনারেল রড রসেনস্টীন সাংবাদিকদের বলেন, অভীষ্ট লক্ষ অর্জনের স্বার্থে অভিযুক্তরা তথ্য বিভ্রান্তির মাধ্যমে সাধারণভাবে আমেরিকান নির্বাচন পদ্ধতি এবং প্রার্থীদের বিশ্বাসযোগ্যতায় ফাটল ধরিয়ে বলতে গেলে আমেরিকার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছিল। অত্যন্ত রূঢ় কন্ঠে রসেনস্টীন বলেন, কোন অব¯াতেই আমরা এ সকল ষড়যন্ত্রকারীদের চক্রান্তকে সফল হতে দিতে পারিনা। তিনি আরও বলেন, এ মামলাটি আমাদের আবারও স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে যে ইন্টারনেটে মানুষের চেহারা দেখে তার অন্তর্নিহিত মনোবৃত্তি সম্পর্কে সঠিক ধারণা করা যায় না।
রসেনস্টীন বলেন, রাশিয়ানরাদের সাথে সংযুক্ত কোন আমেরিকানই জ্ঞাতসারে এ সকল অপারেশন সম্পর্কে অবগত ছিল না। রসেনস্টীন জোর দিয়ে বলেন, স্পেশাল কাউন্সেল রবার্ট মুলারের তদন্ত কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে। মুলার স্বাক্ষরিত ৩৭ পৃষ্ঠার প্রতিবেদনটিতে ৩টি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ৮ কাউন্ট অভিযোগও রয়েছে।
২০১৬ সালের মধ্যভাগের শুরু থেকে অভিযুক্তরা হিলারীর বিরুদ্ধে এবং ট্রাম্পের সমর্থনে নির্বাচনী কর্মকান্ড শুরু করেছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে। ফেডারেল কর্মকর্তাগণ জানান, কনকর্ড ক্যাটারিং কোম্পানীর মাধ্যমে পুটিনস চেফ’ নামে পরিচিত ইয়েভগেনি ভিক্টরোভিচ প্রিগোজহিন নামের রাশিয়ান অলিগ্যারক (শাসকরা) নির্বাচনী কর্মকান্ডের সাথে জড়িত ব্যক্তিদের মাসে ১.২৫ মিলিয়ন ডলার প্রদান করত। জানা যায়, ৫৬ বছর বয়স্ক প্রিগোজহিন এবং কনকর্ড ক্যাটারিং এবং কনকর্ড ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড কন্সাল্টিং নামক প্রিগোজহিনের অন্য কোম্পানীকেও অভিযুক্ত করা হয়েছে।
এছাড়া ২০১৬ সালের ২৯ মে প্রিগোজহিনের জন্ম তারিখ উপলক্ষে হোয়াইট হাউজের সামনে দাঁড়িয়ে হ্যাপী বার্থ ডে ডীয়ার বস বলার জন্য একজন আমেরিকানকে রাশিয়ানরা ভাড়া করেছিল বলেও ফেডারেল কর্মকর্তাগণ জানান। প্রিগোজহিন রাশিয়ান মিডিয়াকে বলেছিলÑ আমেরিকানরা বাস্তবিকই আবেগপ্রবণ জাতি। তারা যা দেখতে চায়, তা তারা দেখে। আমি তাদেরকে অত্যধিক সম্মান করি। যদি তারা ডেভিল বা শয়তানকে দেখতে চান- তবে তারা তাকে দেখতে পারেন।
এছাড়া র্যালীতে অংশগ্রহণের সময় ফ্ল্যাটবেড ট্রাকের উপর খাচার ভেতরে রাখা কয়েদী পোশাক পরিহিতা হিলারী হিসেবে প্রদর্শনের জন্য একজন ক্লুবিহীন আমেরিকানকে ভাড়া করার অভিযোগও আনয়ন করা হয়েছে। সামাজিক মিডিয়ায় তারা বø্যাকটিভিস্ট, ইউনাইটেড মুসলিমস অব আমেরিকা এবং আর্মী অব জেসাস এ ধরনের নামে তারা পৃষ্ঠা তৈরি করেছিল যা ক্লিন্টনের বিরুদ্ধে ক্রোধোদ্দীপক মিথ্যা তথ্য পরিবেশন করত। উদাহরণ স্বরূপ: দ্য ইউনাইটেড মুসলিম পৃষ্ঠায় হিলারীর বিরুদ্ধে শরীয়া আইনের প্রতি আনুক‚ল্য প্রদর্শনের কথা বলা হয়েছে।
ওক বø্যাকস নামের অপর পৃষ্ঠায় আফ্রিকান-আমেরিকানদের ভোট না দেয়ার অনুরোধ জানানো হয়েছিল। আর এটি গণভোটে ডেমক্র্যাটদের স্বার্থকে আঘাত করেছিল।
একনজরে প্রতারিত প্রচারণার ধরন : তথ্য বিভ্রান্তি শুরু হয়েছিল ২০১৪ সালের এপ্রিলে এবং ২০১৬ সালের নভেম্বরে নির্বাচন পর্যন্ত এটি চালু ছিল।
ওয়াশিয়ার সেন্ট পিটসবার্গের ইন্টারনেট রিসার্চ এজেন্সী কর্তৃক ক্যাম্পেইন পরিচালিত হত। গ্রাফিক, সার্চ-ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন, ডাটা বিশ্লেষণ, ফাইন্যান্স এবং তথ্য প্রযুক্তির কাজে ৮০ জনেরও বেশি লোককে নিয়োগ দেয়া হয়েছিল। ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বর নাগাদ মাসিক ব্যয় ১.২৫ মিলিয়ন অতিক্রম করেছিল।
১৩ ব্যক্তি এবং ৩টি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানকে অভিযুক্ত করা হয়েছে।
কর্পোরেশনকে অর্থের যোগান দেয়ায় কনকর্ড ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড কন্সাল্টিং এবং কনকর্ড ক্যাটারিংসহ নিজের নিয়ন্ত্রণাধীন কোম্পানীগুলো ব্যবহার করার জন্য ইয়েভগেনলী প্রিগজহিনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। তাকে পুটিনের চেফ বলা হয়। কারণ পুতিন এবং বিদেশী নেতৃবর্গের মধ্যকার অনুষ্ঠানে তার রেস্টুরেন্ট নৈশ ভোজ পরিবেশন করত।
একজন সন্দেহমুক্ত অ্যাক্টিভিস্ট রাশিয়ানদে উপদেশ দিয়েছিল যে কলোরাডো, ভার্জিনিয়া এবং ফ্লোরিডার মত পার্পল স্টেট নামে কথিত স্টেটগুলোতে তাদের কর্মকান্ডের উপর আলোকসম্পাত করা তাদের উচিত।
ইউটিউব, ফেইসবুক, ইন্সটাগ্রাম এবং টুইটারে আমেরিকানদের চোরাই পরিচিতি (স্টোলেন আইডেনটিটিজ) ব্যবহার করে রাশিয়ানরা ভুল তথ্য পরিবেশনা করে হাজার হাজার অনুসারীকে তাদের ভ‚য়া অ্যাকাউন্টে আকৃষ্ট করেছিল। সে সকল অ্যাকাউন্টকে বলা হত সিকিউরড বর্ডারস অ্যান্ড ইউনাইটেড মুসলিমস ফর আমেরিকা। প্রাপ্ত তথ্যানুসারে টেনেসি জিওপি নামের একটি অ্যাকাউন্টেরর অনুসারীর সংখ্যা ১ লাখ ছাড়িয়ে গিয়েছিল।
প্রসেকিউটরগণ দাবি করেন যে সাধারণ খরচ এবং ফেইসবুক বিজ্ঞাপন খরিদের ব্যয় মিটাতে অর্থ ¯ানান্তরের জন্য পেপাল ব্যবহার করা হত। প্রসেকিউটরগণ আরও জানান, পেপালের সিকিউরিটি ব্যব¯াকে বাইপাশে সাহায্য করতে ভ‚য়া পরিচিতি ব্যবহার করে অ্যাকাউন্টগুলো খোলা হয়েছিল।
রাশিয়ান ভুল তথ্যদাতা বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ দেয়া হয়েছিল (রাশিয়ানদের সমর্থিত স্যান্ডারস এবং ট্রাম্প ছাড়া) হিলারীসহ সকল প্রার্থীর সমালোচনায় সময়ের সর্বাত্মক সদ্ব্যবহার করতে।
রাশিয়ানদের কেনা সামাজিক মিডিয়ার অনেকগুলোর মুখ্য অভিপ্রায় ছিল সংখ্যালঘু ভোটারদের ভোটাধিকার প্রয়োগে নিরুৎসাহিত করা। ২০১৪ সালের ২৪ মে এবং ২০১৬ সালের ৩ নভেম্বরের একটি বিজ্ঞাপনে বলা হয়েছিল: হিলারী ক্লিন্টন কালোদের ভোট চান না।
নির্বাচনের কয়েক দিন আগে বø্যাকটিভিস্ট অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে রাশিয়ানদের কেনা একটি বিজ্ঞাপনে বলা হয়েছিল: শান্তিকে বাছাই করুন এবং জিল স্টিনের পক্ষে ভোট দিন। আমাকে বিশ্বাস করুন, এ ভোট বিফলে যাবেনা।
নির্বাচনের পর ১২ নভেম্বর নিউইয়র্ক সিটির র্যালীসহ রাশিয়ানরা ট্রাম্পের সমর্থনে এবং বিরুদ্ধে অনেকগুলো র্যালীর আয়োজন করেছিল। ২০১৬ সালের আগস্টে ফ্লোরিডার ওয়েস্ট পাম বীচের র্যালীতে ফ্ল্যাটবেড ট্রাকের উপর একটি খাঁচা তৈরি করার এবং কারাগারের ইউনিফরম পরিহিতা হিলারী ক্লিন্টনের অবয়বধারী সাজতে একজন লোক নিয়োগের অর্থ রাশিয়ানরা পরিশোধ করেছিল।
আমেরিকানরা জ্ঞাত অংশগ্রহণকারী (নুইং পার্টিসিপ্যান্ট) ছিল এ ধরনের কোন অভিযোগ নেই।