হ্যারি-মেগান: রাজকীয় বেড়াজাল ভাঙার গল্প

যুক্তরাজ্যসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে এই বিয়ে টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচার করা হয়েছে। তবু গত ১৯ মের বিয়ের আয়োজন দেখতে অনেক মানুষ উইন্ডসর শহরে হাজির হয়েছিলেন। রাজপরিবারের শুভাকাক্সক্ষী ও সমর্থকরা এবং বিশ্ব মিডিয়ার কর্মীরাও জড়ো হয়েছিলেন সেখানে। ধারণা করা হচ্ছে, প্রায় এক লাখ মানুষ শহরের বিভিন্ন সড়কে ছিলেন সেদিন। ব্রিটিশ ডিজাইনার ক্লেয়ার ওয়েইট কেলারের তৈরি বিয়ের পোশাক পরে মেগান মার্কল যখন গির্জায় এসে হাজির হন, তখন শ্বশুর প্রিন্স চার্লস তার হাত ধরে তাকে বিয়ের মঞ্চ পর্যন্ত এগিয়ে নিয়ে যান। বিয়ের পর প্রিন্স হ্যারি ও মেগান মার্কলের উপাধি হবে ডিউক ও ডাচেস অব সাসেক্স। রাজকীয় বিয়েকে সামনে রেখে যুক্তরাজ্যের উন্ডসরে গিফট শপ, কোমল পানীয় দোকান ও সড়কের বিক্রেতারা ছিলেন পুরোদমে বেচাকেনায় ব্যস্ত। শহরে ছিল উৎসব উৎসব আমেজ। গিফট পণ্যে হ্যারি বা মেগানের চেহারার ছবি থাকলে তো কথাই নেই, দোকানের তাক খালি হয়ে যাচ্ছিল সেখানে।
বিয়ের কার্ডের নকশা: লন্ডনের বিখ্যাত বার্নার্ড এন্ড ওয়েস্টউড কোম্পানি প্রিন্স হ্যারি ও মেগান মার্কলের আমন্ত্রণপত্র নকশা করছে। গত শতকের আশির দশক থেকে এ প্রতিষ্ঠানটি রাজপরিবারের বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আমন্ত্রণপত্র তৈরির কাজ করে আসছিল।


বিয়ের আলোকচিত্রী: জনপ্রিয় আলোকচিত্রী অ্যালেক্সি লুবোমির্সকি প্রিন্স হ্যারি ও মেগান মার্কলের বিয়ের আনুষ্ঠানিক ছবি তুলেছেন।
বিয়েতে অতিথি যারা ছিলেন: সেন্ট জর্জেস চ্যাপেল গির্জায় ব্রিটেনের রানি এলিজাবেথ এবং ৬০০ নিমন্ত্রিত অতিথি উপস্থিতিতে তারা বিয়ের শপথবাক্য পাঠ করেন এবং আংটি বদল করেন। উইন্ডসর প্রাসাদে এই প্রথমবারের মতো সাধারণ জনগণের মধ্য থেকে ১ হাজার ২০০ ব্যক্তিকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। বিয়ের অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন আমরিকান টকশো হোস্ট অপরাহ উইনফ্রে, অভিনেতা জর্জ ক্লুনি ও তার স্ত্রী আমাল, সাবেক ফুটবল তারকা ডেভিড বেকহ্যাম ও তার স্ত্রী ভিক্টোরিয়া, টেনিস তারকা সেরেনা উইলিয়ামস ও গায়ক এল্টন জন, বলিউড অভিনেত্রী প্রিয়াংকা চোপড়া ।
বিয়ে যেখানে হয়েছিল: হ্যারি ও মেগানের বিয়ে হয়েছে উইন্ডসর ক্যাসেলের সেন্ট জর্জেস চ্যাপেলে। উইন্ডসর সবচেয়ে পুরনো ও বড় একটি দুর্গ এবং এই দুর্গেই খ্রিস্টীয় রীতিতে বিয়ে হয়েছে মেগান ও হ্যারির। হ্যারি-মেগানের রাজকীয় বিয়ের ভেনু ফুলে ফুলে সাজিয়ে তোলার দায়িত্ব পেয়েছেন লন্ডনের ফিলিপ্পা ক্র্যাডোক। তারা সাদা গোলাপ, পিওনি ও ফক্সগ্লোভস ফুলের মাধ্যমে সাজিয়ে তুলবে বিয়ের আসর। ফুলের পাশাপাশি ভেনু সাজাতে কয়েক ধরনের সুন্দর পাতাও ব্যবহার করা হবে। আর বিয়ের পর সেই ফুলগুলো সব দান করে দেওয়া হবে স্থানীয় দাতব্য প্রতিষ্ঠানে।


রাজকীয় বিয়ের নিরাপত্তা: টেমস ভ্যালি পুলিশ ও লন্ডনের মেট্রোপলিটন পুলিশ এবং ব্রিটিশ ট্রান্সপোর্ট পুলিশ রাজপরিবারের বিয়ের অনুষ্ঠানে বাড়তি নিরাপত্তা প্রদানে কাজ করেছে। প্রিন্স হ্যারি ও মেগান মার্কলের বিয়ের পুরো নিরাপত্তা নিয়ন্ত্রণ করতে উইন্ডসরের রাস্তায় টহল দিতে দেখা গেছে অস্ত্রধারী ও সাদা পোশাকের বেশ কয়েকজন পুলিশকে। পুলিশ ছাড়াও ডগ স্কোয়াডও রাখা হয়েছিল পুরো এলাকায়।
বিয়ের সাজপোশাক: ব্র্যান্ড রাফ এন্ড রুশো মেগানের পোশাকের ডিজাইন করেছেন। অবশ্য বারবেরি, এরডেম, স্টেলা ম্যাককার্টনি এবং রোলান্ড মৌরেতের নামও রয়েছে মেগানের পোশাকের ডিজাইনারের তালিকায়। পোশাকের ডিজাইন করছেন পাঁচ তরুণ নকশাকার। তারা হলেন- সিডনি ক্যাসিডি, হান্নাহ, সিডনি গ্যারেট, গ্লাডিস নাইট ও ইমিলি র্যাডফোর্থ। রাজকীয় কয়েকটি পোশাকের সমন্বয় করে পোশাকটি তৈরি করা হয়েছে। রাজপরিবারের ঐতিহ্যবাহী গয়না পরেন মেগান। ডায়নার মৃত্যুর আগে নিজের গয়না দুই পুত্রবধূর জন্য রেখে গেছেন।
বিয়ের খরচ: বিয়ের কেক, ফুল, কুশনকভার থেকে শুরু করে যাবতীয় প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের কেনাকাটা করা হয়। এই বিয়ে দেখতে অন্তত এক লাখ লোক উইন্ডসরে হাজির হন। এত অতিথি এত উৎসুক মানুষের নিরাপত্তার জন্য ব্যাপক পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছিল। এ জন্য বিয়ের নিরাপত্তা খাতে খরচ হয় সবচেয়ে বেশি। তবে ব্রিটিশ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এই হিসাব জানায়নি। কিন্তু ডিউক এন্ড ডাচেস অব কেমব্রিজের বিয়েতে (প্রিন্স চার্লসের বড় ছেলে প্রিন্স উইলিয়াম এবং ক্যাথরিন) নিরাপত্তা বাবদ মেট্রোপলিটন পুলিশ (জনগণের করের অর্থ) প্রায় ৬৪ লাখ পাউন্ড খরচ করেছিল। তথ্য অধিকার আইনে এই হিসাব প্রেস এ্যাসোসিয়েশনের কাছে প্রকাশ করা হয়েছিল। বিয়ের অনুষ্ঠানে কত খরচ হবে কেনসিংটন প্যালেসও বলেনি। যুক্তরাজ্যে ব্রাইডবুক নামে একটি ওয়েবসাইটের হিসাবে বিয়েতে খরচ হতে পারে প্রায় সোয়া তিনশ কোটি পাউন্ড। এর মধ্যে নিরাপত্তার খরচও রয়েছে। তাদের হিসাবে, কেকের পেছনে খরচ হবে ৫০ হাজার পাউন্ড, ফুলের জন্য এক লাখ ১০ হাজার পাউন্ড, খাওয়া-দাওয়া বাবদ প্রায় তিন লাখ পাউন্ড ইত্যাদি ইত্যাদি। আন্তর্জাতিক মিডিয়া বলছে, বিয়ের হল ভাড়ার জন্য খরচ হয় সাড়ে তিন লাখ পাউন্ড। খাওয়া-দাওয়ায় আরও প্রায় তিন লাখ পাউন্ড। পানীয়ের পেছনে দুই লাখ। পোশাকে তিন লাখ। ফুলের জন্য এক লাখের বেশি। কেকের পেছনে ৫০ হাজার। গানবাজনার জন্য আরও তিন লাখ। চুল সাজানো ও মেকআপ ১০ হাজার। এবং বিয়ের আংটি ৬ হাজার পাউন্ড।