ঠিকানা ডেস্ক : এবার রপ্তানি পণ্যের বিল জালিয়াতি করে বেসরকারি খাতের ৫টি প্রতিষ্ঠান সরকারি খাতের জনতা ব্যাংকের ইমামগঞ্জ শাখা থেকে প্রায় এক হাজার ১০৪ কোটি ৬২ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। এসব অর্থ ফেরত আসার সম্ভাবনা খুবই কম। জনতা ব্যাংকের কতিপয় কর্মকর্তা ও ব্যবসায়ী যোগসাজশ করে এ অনিয়ম করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এর সঙ্গে ব্যাংকের এক উপব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমডি) জড়িত বলেও তথ্য পাওয়া গেছে। এ কেলেঙ্কারির জেরে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে ২ কর্মকর্তাকে।
জানা গেছে, ২০১৭ সালে হাজারীবাগের ক্রিসেন্ট লেদার প্রোডাক্টস লিমিডেট ৪৯৯ কোটি ৭০ লাখ টাকা, রূপালী কম্পোজিট লেদারওয়্যারস লিমিটেড ৪১১ কোটি ৬৯ লাখ টাকা, ক্রিসেন্ট ট্যানারিজ লিমিটেড ১৫ কোটি ৮৪ লাখ টাকা, সাভারের রিমেক্স ফুটওয়্যার লিমিটেড ৫১৯ কোটি ৪০ লাখ এবং লেক্সকো লিমিটেড ১ কোটি ৩০ লাখ টাকার বিল জনতা ব্যাংকের কাছে বিক্রি করে সমপরিমাণ টাকা তুলে নিয়ে গেছে। বিদেশি ২১টি ক্রেতা প্রতিষ্ঠানের কাছে এসব পণ্য রপ্তানি করা হয়।
সূত্র জানায়, জালিয়াতির বিষয়টি প্রথমে বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি বিশেষ তদন্তে ধরা পড়ে। পরে এ বিষয়ে জনতা ব্যাংকে একটি চিঠি পাঠিয়ে আরও বিশদ তদন্ত ও জড়িত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এর প্রেক্ষিতে জনতা ব্যাংক এর তদন্তে নামে এবং এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার দায়ে কতিপয় কর্মকর্তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়।
জনতা ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন ৪ কর্মকর্তাকে নিয়ে গঠিত কমিটি তদন্ত শেষে গত ১৮ মার্চ ব্যবস্থাপনা পরিচালকের (এমডি) কাছে এ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন জমা দেয়। তবে হাজার কোটি টাকা অনিয়মে ব্যাংকটির শাখা এবং সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো ছাড়া আরও যারা জড়িত, তাদের চিহ্নিতকরণ ও তদারকিতে ব্যর্থতার কারণে এ বিষয়ে অধিকতর তদন্তে মাঠে নেমেছে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর।
জনতা ব্যাংকের নিজস্ব তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, গ্রাহক প্রতিষ্ঠানগুলো ও শাখা ব্যবস্থাপনার পারস্পরিক সমঝোতায় ২০১৭ সালের ২৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত ব্যাংকের ওই পরিমাণ টাকা বের করে নেয়া হয় বলে প্রতীয়মান হয়েছে। ব্যাংকটির ইমামগঞ্জ শাখা ওইসব রপ্তানি বিল ক্রয়ের ক্ষেত্রে বিদেশি ক্রেতা-প্রতিষ্ঠানের সন্তোষজনক ক্রেডিট রিপোর্ট গ্রহণ না করা, জাহাজীকরণ প্রতিষ্ঠানের এজেন্ট নয় এমন ফ্রেইট ফরোয়ার্ড প্রতিষ্ঠানের এফসিই গ্রহণ, গাইডলাইন্স ফর ফরেন এক্সচেঞ্জ ট্রানজেকশন, বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা লঙ্ঘন করে এফসিআর নেগোশিয়েবল মর্মে এলসি/সেলস কন্ট্রাক্টে উল্লেখ না থাকা সত্ত্বেও এফডিবিপি হিসেবে ঋণ প্রদান করা এবং সর্বোপরি সংশ্লিষ্ট রপ্তানি বিলের বিপরীতে স্বীকৃতি বা একসেপটেন্স ছাড়াই রপ্তানি বিল ক্রয় করার কারণে সংশ্লিষ্ট রপ্তানি মূল্য ফিরে আসার সম্ভাবনা ক্ষীণ। এতে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংকটি আবারো আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে।
প্রতিবেদন পাওয়ার আগেই বাংলাদেশ ব্যাংকের অভিযোগ পেয়ে ২০ ফেব্রুয়ারি জনতা ব্যাংকের ১৬২তম বোর্ডসভায় ব্যাংকটির ইমামগঞ্জ করপোরেট শাখার তৎকালীন শাখাপ্রধান মো. রেজাউল করিম ও মো. ইকবালকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। আর প্রতিবেদনে ইমামগঞ্জ শাখার ম্যানেজারসহ ১০ কর্মকর্তাকে দায়ি করা হয়, যারা রপ্তানি বিলের টাকা ছাড়ে নোট তৈরি, সুপারিশ, অনুমোদন ও নিরীক্ষণে জড়িত ছিলেন।
অবশ্য ক্রিসেন্ট গ্রুপের চেয়ারম্যান এম এ কাদের ৩ এপ্রিল বলেন, কোনো ধরনের অনিয়ম হয়নি। সব টাকা ফেরত আসবে।
শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. মো. শহীদুল ইসলাম আমাদের সময়কে বলেন, সহস্রাধিক কোটি টাকা মূলত বিদেশে পাচার হয়ে গেছে। এ প্রক্রিয়ায় ব্যাংক ও রপ্তানিকারী ৫টি প্রতিষ্ঠানই শুধু নয়, আরও অনেকেই জড়িত। আমরা অপরাধী সবাইকে বের করতে চাইছি। এ জন্য ব্যাংক ও অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর সব নথি তলব করা হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শন বিভাগ-২-এর অভিযোগের প্রেক্ষিতে গত ৩১ ডিসেম্বর জনতা ব্যাংকের এমডি তদন্তের নির্দেশ দেন। এর পর ব্যাংক কর্তৃপক্ষ ৪ সদস্যের একটি তদন্ত দল গঠন করে। ব্যাংকের (জিএম) মো. আরিফুর রহমান আকন্দকে প্রধান করে কমিটির অন্য তিন সদস্য হলেনÑ ডিজিএম মো. শামীম আলম কোরেশী, এজিএম মোহাম্মদ গোলাম মোস্তফা, এসও মো. গোলাম রফিক খান। ওই তদন্ত দল ইমামগঞ্জ করপোরেট শাখায় সরেজমিন কাগজপত্র ও সার্বিক বিষয়াদি পর্যালোচনা করে গত ১৮ ফেব্রুয়ারি একটি অন্তর্বর্তীকালীন তদন্ত প্রতিবেদন প্রধান কার্যালয়ে পেশ করে। তাদের পাঠানো তদন্ত প্রতিবেদনে ব্যাংকটিতে ২৪ ধরনের অনিয়মের চিত্র তুলে ধরা হয়।
তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, ব্যাংকটির নিয়ন্ত্রণকারী কার্যালয় মাসে একবার শাখাগুলো অডিট করার বিধান রয়েছে; কিন্তু ২০১৭ সালে মাত্র ২ বার সংক্ষিপ্ত পরিদর্শন করা হয়। সেসব অডিটেও হাজার কোটি টাকার অনিয়মের চিত্র তুলে ধরা হয়নি। ফলে বড় ধরনের এ জালিয়াতিতে জনতা ব্যাংক প্রধান কার্যালয়ের ফরেন ট্রেড ডিপার্টমেন্ট, ফরেন ট্রেড মনিটরিং ডিপার্টমেন্টসহ বিভাগীয় কার্যালয়ের তদারকজনিত ঘাটতির জন্য নির্বাহীগণকে দায়ী করা হয়। তারা হলেনÑ ব্যাংকটির ফরেন ট্রেড ডিভিশনের তৎকালীন মহাব্যবস্থাপক (জিএম) মো. ফখরুল আলম, যিনি বর্তমানে উপ-মহাব্যবস্থাপক (ডিএমডি) হিসেবে ট্রেজারি, ফরেন ট্রেড ডিভিশনে কর্মরত রয়েছেন। ডিজিএম (এফটিডি) কাজী রইস উদ্দিন আহমেদ। তৎকালীন ফরেন ট্রেড মনিটরিং বিভাগের ডিজিএম একেএম আসাদুজ্জামান, যিনি বর্তমানে ডিজিএম হিসেবে প্রধান শাখার মানবসম্পদ বিভাগে কর্মরত।
তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী, রপ্তানি বিল কেনার ক্ষেত্রে প্রচলিত নিয়ম মানা হয়নি। যে ব্যাংকের মাধ্যমে রপ্তানি করা হয়েছে, তাদের কাছ থেকে বিলের সত্যতা সম্পর্কে নিশ্চিত হয়নি ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান টাকা দিতে পারবে কিনাÑ সে ব্যাপারেও কোনো খোঁজখবর নেয়নি ব্যাংক। এ ছাড়া যেসব দেশে রপ্তানি হয়েছে ওইসব দেশের ব্যাংকে রপ্তানির এলসি না খুলে খোলা হয়েছে অন্য দেশে।
আলোচ্য পণ্য রপ্তানির মধ্যে গত ১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ৩৪৩ কোটি ৩১ লাখ টাকা রপ্তানিমূল্য ফেরত এসেছে। অবশিষ্ট ১১০৪ কোটি ৬২ লাখ টাকা প্রত্যাবাসন বা ফেরত পাওয়ার বিষয়ে সম্ভাবনা ক্ষীণ মনে করছে জনতা ব্যাংক। প্রথম তিনটি প্রতিষ্ঠান ক্রিসেন্ট গ্রুপের। পণ্য রপ্তানি প্রক্রিয়ায় জাহাজি দলিল উপস্থাপন করা হলে ইমামগঞ্জ করপোরেট শাখা ত্রুটিপূর্ণ রপ্তানি দলিল থাকা সত্ত্বেও কোনো ধরনের যাচাই-বাছাই না করে ক্রমাগতভাবে রপ্তানি দলিলগুলো ক্রয় অব্যাহত রাখে। এসব অনিয়মের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- রপ্তানির এলসি ইস্যুর ক্ষেত্রে ব্যাংকটি প্রথম শ্রেণি বা আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন এবং আর্থিক সঙ্গতি বিশ্লেষণে গ্রহণযোগ্য কিনা তা ব্যাংকার্স বা অন্য কোনোভাবে শাখা কর্তৃক যাচাই করা হয়নি।
বৈদেশিক ক্রেতা হংকং, থাইল্যান্ড, সংযুক্ত আরব আমিরাত, লন্ডন হলেও এলসি ইস্যু করা হয় পশ্চিম আফ্রিকাভুক্ত দেশ গাম্বিয়ার এক্সিওস ক্রেডিট ব্যাংক লিমিটেডের ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও গাম্বিয়া, ইউরোপের দেশ অস্ট্রিয়ার ব্যাংক উইন্টার থেকে। এলসির তৃতীয় পক্ষ নন-নিউজিল্যান্ডের ব্যাংকিং সংস্থা ট্রেড অ্যান্ড মার্চেন্ট ট্রাস্ট কোম্পানি লিমিটেড থেকে কোনো ধরনের দায়ভার ও দায়-দায়িত্ব ছাড়াই ‘যমুনা ব্যাংক, ঢাকা’ বরাবর সংশ্লিষ্ট এলসিগুলো প্রেরণ করা হয়। আবার যমুনা ব্যাংক ওই এলসিগুলো জনতা ব্যাংক লিমিটেড ইমামগঞ্জ করপোরেট শাখা বরাবর প্রেরণ করে। এ ক্ষেত্রে তারা সতর্কতামূলক পরামর্শও উল্লেখ করে।
অন্যদিকে রোমানিয়ার সলেইল চার্টার্ড ব্যাংক থেকে ইস্যুকৃত রপ্তানি এলসিগুলো তৃতীয়পক্ষ নন-ব্রাজিলের ব্যাংকিং সংস্থা সতর্কতামূলক পরামর্শ উল্লেখ করে ঢাকার সাউথইস্ট ব্যাংক লিমিটেড বরাবরে পাঠানো হলে ওই ব্যাংক এলসিগুলো জনতা ব্যাংক ইমামগঞ্জ করপোরেট শাখা বরাবর প্রেরণ করে। কিন্তু কোনো ক্ষেত্রে এসব সতর্কতা আমলে নেয়নি জনতা ব্যাংক।
ওই রপ্তানি এলসি ইস্যুকারী ব্যাংকগুলো জনতা ব্যাংক লিমিটেড বা বাংলাদেশের কোনো তফসিলি ব্যাংকের ফরেন করেসপনডেন্ট না হওয়া এবং শাখা কর্তৃক অ্যাডভাইসিং ব্যাংকের সঙ্গে যোগাযোগ করে ইস্যুকৃত রপ্তানি এলসির অ্যাডভাইসিং ব্যাংক কর্মকর্তার স্বাক্ষর যাচাই না করে ব্যাংকগুলোর রপ্তানি বিল গ্রহণ ও তার বিপরীত বিল ক্রয় করে বিলমূল্য পরিশোধ করে। যে কারণে এখন এগুলো আদায় অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী অনিয়মে বলা হয়, ১৯৯৫ সালের রপ্তানি আইনে বলা আছে ত্রুটিপূর্ণ রপ্তানি বিল কোনো অবস্থাতেই ক্রয় করা যাবে না। এর পরও ওই নির্দেশনা লঙ্ঘন করে শাখা কর্তৃক ক্রটিপূর্ণ বিল ক্রয় করা হয়। ডেফার্ড বিলের ক্ষেত্রে বিল অব এক্সচেঞ্জের পেছনে স্ট্যাম্প আইন অনুযায়ী অ্যাডভোলেরেম স্ট্যাম্প লাগানোর নির্দেশনা থাকলেও তা লাগানো হয়নি। আমদানিকারক হিসেবে যেসব রাষ্ট্র দেখানো হয়, পণ্য সেসব দেশে নয়, রপ্তানি করা হয় অন্য দেশে। এ ক্ষেত্রে ওইসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে চুক্তির কাগজ নেই। শিপিং এজেন্টের মাধ্যমে মালামালের অবস্থান ও অবস্থা সম্পর্কে খোঁজখবর নেয়া হয়নি।
প্রতিবেদনে বলা হয়, এলসি মঞ্জুরিপত্রে ৫টি প্রতিষ্ঠানের জামানত সম্পত্তিতে মালিকের দখল, মালিকানা চেইন অব ডকুমেন্ট সঠিক, মূল্যায়ন সঠিক, সম্পত্তি জামানতের দলিল ব্যাংকের শাখায় বন্ধকী হিসেবে সংরক্ষণ এমন নির্দেশনা থাকলেও ব্যাংক এসব বিষয় উল্লেখই করেনি। বরং ব্যাংক কর্তৃপক্ষ ৫টি প্রতিষ্ঠানের আগেকার ঋণের বিষয়টি গোপন রাখে।
গোপন ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, বৈদেশিক ক্রেতার সন্তোষজনক ক্রেডিট রিপোর্ট (আন্তর্জাতিক ক্রেডিট এজেন্সি ‘ডান অ্যান্ড ব্রাডশিট’-এর মাধ্যমে গ্রহণপূর্বক ক্রেতার স্ট্যাটাস বিশ্লেষণ, মূল্য পরিশোধের সক্ষমতা) সম্পর্কে বৈদেশিক ক্রেতার ব্যাংকের মতামত সংগ্রহপূর্বক তা যাচাই না করেই রপ্তানি বিল নেগোশিয়েট/ক্রয় করা হয়েছে।
৫টি গ্রাহক প্রতিষ্ঠান কর্তৃক রপ্তানি এলসি/সেলস কন্ট্র্যাক্টের বিপরীতে ২১টি ক্রেতা প্রতিষ্ঠানের কাছে পণ্য রপ্তানি করা হয়েছে। ওই ক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে মাত্র ৩টির ক্রেডিট রিপোর্ট আন্তর্জাতিক ক্রেডিট এজেন্সির মাধ্যমে সংগ্রহ করা হয়েছে। আবার ওই ৩টি প্রতিষ্ঠানের ক্রেডিট রিপোর্টে যে তারিখ উল্লেখ করা হয়েছে, তার অনেক আগেই বায়ারদের কাছে রপ্তানিকৃত মালামালের বিপরীতে রপ্তানি বিল ক্রয় করে জনতা ব্যাংক।
এ ছাড়া বিদেশি এক প্রতিষ্ঠানের তুলার ব্যবসা সংক্রান্ত তথ্যাদি থাকলেও জনতা ব্যাংক অর্থ পরিশোধ করে চামড়া রপ্তানির। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা এড়িয়ে ক্রেতা প্রতিষ্ঠানের আর্থিক সক্ষমতা যাচাই না করেই রপ্তানি বিলগুলো ক্রয় করে জনতা ব্যাংক।
কমিটির প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, এক্সপোর্ট কন্ট্রাক্ট স্বাক্ষরবিহীন। এতে শুধু ক্রেতা-বিক্রেতার স্বাক্ষর থাকলেও এর আইনগত ভিত্তি নেই। এতে আন্তর্জাতিক শর্তাবলি সংযুক্ত করা হয়নি। গ্রাহক-প্রতিষ্ঠানের স্বাক্ষর যাচাই করা হয়নি। কোন ভিত্তিতে বৈদেশিক বাণিজ্য লেনদেন হবেÑ সে বিষয়ে গ্রাহক প্রতিষ্ঠানের পরিচালকম-লীর বোর্ড সভার রেজুলেশন নেয়া হয়নি। শিপমেন্টের কাগজপত্র গ্রহণের সময় গ্রহণকারী তাতে স্বাক্ষর করেননি। বৈদেশিক ব্যাংকে কাগজপত্র পাঠানোর কোনো নথিপত্র নেই বলে তা পাঠানো হয়েছে কিনা সেটি প্রমাণের সুযোগ নেই। শাখার ফরওয়ার্ডিং শিডিউলে সাংঘর্ষিক লেখা রয়েছে। এমনকি শাখার সংরক্ষিত নথিতে টার্মিনাল রিসিপ্টে টার্মিনাল কর্তৃপক্ষের সিল ও স্বাক্ষর নেই।
প্রতিবেদনের মতামতে বলা হয়েছে, অনিয়মে জড়িত ডিজিএম মো. রেজাউল করিম (বর্তমানে জিএম বিভাগীয় কার্যালয়, ঢাকা-দক্ষিণ), ডিজিএম মুহাম্মদ ইকবাল, একেএম আসাদুজ্জামান, এজিএম মো. আতাউর রহমান সরকার, এসপিও (ফরেন এক্সচেঞ্জ) মো. খায়রুল আমিন, মো. মাগরেব আলী, অফিসার ইনচার্জ (এক্সপোর্ট) মুহাম্মদ রুহুল আমিন, অফিসার ইনচার্জ মো. সাইদুজ্জামান, এসও (এক্সপোর্ট) মো. মনিরুজ্জামান, এসও মো. আব্দুল্লাহ আল মামুনকে তদন্ত দল লিখিতভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করে। এর মধ্যে আব্দুল্লাহ আল মামুন ওই নোট প্রস্তুত, মো. মনিরুজ্জামান পরীক্ষণ এবং শাখাপ্রধান মো. রেজাউল করিম, মুহাম্মদ ইকবাল, একেএম আসাদুজ্জামান অনুমোদন করেন। অন্যরা অর্থছাড়ের সুপারিশ করেন।
শুল্ক গোয়েন্দার তথ্য মতে, সারাদেশে জনতা ব্যাংক লিমিটেডের এতসংখ্যক শাখায় ২০১৭ সালে ব্যাংকটিতে মোট রপ্তানির পরিমাণ ছিল ১৩ হাজার ৯৯২ কোটি টাকা। এর মধ্যে ইমামগঞ্জ শাখাতেই ছিল ২ হাজার ৫৫৭ কোটি টাকা, যা পুরো ব্যাংকের ১৮ দশমিক ২৮ শতাংশ। একইভাবে ২০১৬ সালের রপ্তানির হার ছিল ১৮ দশমিক ৯৯ ও ২০১৫ সালে ১৪ দশমিক ১৭ শতাংশ।