ঠিকানা অনলাইন : করোনা মহামারির কারণে দুই বছর বিরতির পর আগামী ১৩ জানুয়ারি শুক্রবার শুরু হতে যাচ্ছে তাবলিগ জামাতের মুসল্লিদের বার্ষিক আয়োজন বিশ্ব ইজতেমা। বরাবরের মতো গাজীপুরের টঙ্গীতে তুরাগ নদের তীরে অনুষ্ঠিত হবে বিশ্ব ইজতেমার আসর।
ইজতেমার প্রথম পর্ব চলবে ১৩ জানুয়ারি থেকে ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত। এতে মাওলানা জোবায়ের গ্রুপের মুসল্লিরা অংশগ্রহণ করবেন। চার দিন বিরতির পর ২০ জানুয়ারি শুরু হবে ইজতেমার দ্বিতীয় পর্ব। এতে অংশগ্রহণ করবেন ওয়াসিফুল গ্রুপের মুসল্লিরা। ইজতেমার দ্বিতীয় পর্ব শেষ হবে ২২ জানুয়ারি।
তুরাগ তীরের প্রায় ১৬০ একর জমিতে ইজতেমা ময়দানে চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। আগত মুসল্লিরা স্বেচ্ছাশ্রমের মাধ্যমে আয়োজনের যাবতীয় কাজ করছেন। আগত অনেক মুসল্লি শীর্ষ মুরব্বিদের বিভেদ ভুলে একসঙ্গে ইজতেমার আয়োজনের দাবি করেন।
প্রতিবছরের মতো এবারও ইজতেমার নিরাপত্তায় আশপাশে অসংখ্য সিসিটিভি স্থাপন করা ও ওয়াচ টাওয়ার নির্মাণ করা হয়েছে। এ ছাড়া বিপুলসংখ্যক আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা মাঠের ভেতর ও বাইরে কাজ করছেন।
জেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী আলমগীর হোসেন মিয়া বলেন, অন্যান্য বছরের মতো সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে ইজতেমা করার জন্য প্রয়োজনীয় টয়লেট, পানি সরবরাহ এবং ওজু-গোসলের নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ৩১টি টয়লেট ভবনের মাধ্যমে পয়োনিষ্কাশনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। পানি সরবরাহ নিশ্চিত করতে পুরোনো ১৪টি ও নতুন ২টি গভীর নলকূপ থেকে পানি সরবরাহ করা হবে।
ইজতেমা সফল করার লক্ষ্যে এরই মধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ বিভিন্ন সরকারি সংস্থা, দপ্তরের সঙ্গে একাধিক বৈঠক হয়েছে। ৬ জানুয়ারি শুক্রবার বিকেলে অনুষ্ঠিত ইজতেমার প্রস্তুতির পর্যালোচনা সভায় যোগ দেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।
এ সময় তিনি ইজতেমা সফল করতে সরকারের নানা উদ্যোগের কথা তুলে ধরেন। ইতিমধ্যে ময়দানের ৯৫ ভাগ কাজ সম্পন্ন হয়েছে জানিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, দুই গ্রুপ আলাদাভাবে ইজতেমা করছে, আশা করি কোনো সমস্যা হবে না। বিদেশি মেহমানদের জন্য বিগত বছরের তুলনায় এবার আরও সুযোগ-সুবিধা বাড়ানো হয়েছে। প্রথম পর্বের ইজতেমা শেষে বিদেশি মুসল্লিদের থাকার জন্য হজ ক্যাম্পে বিশেষ ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এ ছাড়া আগত মুসল্লিদের নিরাপত্তায় পুলিশের সাইবার ইউনিটসহ র্যাব, সেনাবাহিনী থাকবে। প্রয়োজনে বিজিবি সদস্যদের প্রস্তুত রাখা হবে।
সভায় জেলা প্রশাসক আনিসুর রহমান প্রশাসনের গৃহীত ব্যবস্থা ও বাস্তবায়ন নিয়ে উপস্থাপনা পেশ করেন। এ সময় জেলা প্রশাসক বলেন, বিশ্ব ইজতেমা উপলক্ষে জেলা প্রশাসনের ৩০ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রট দায়িত্ব পালন করবেন। নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য ৪টি ১১ কেভি ফিডারের সাহায্যে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হবে। পুরো ময়দানে ৪০০টি এলইডি ফ্লাড লাইট লাগানো হয়েছে। মুসল্লিদের জন্য পুরোনো ১৪টি ও নতুন ২টি গভীর নলকূপ থেকে পানি সরবরাহ করা হবে। তুরাগ নদের ওপর সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে পাঁচটি পন্টুন ব্রিজ নির্মাণ করা হচ্ছে।
জেলা প্রশাসক আরও বলেন, ইজতেমা উপলক্ষে মুসল্লিদের যাতায়াতের সুবিধার্থে বিআরটিসি বাস সার্ভিসসহ ১০টি বিশেষ ট্রেন চলাচল করবে। ময়দানে ফায়ার সার্ভিসের ৪টি অগ্নি নির্বাপণ গাড়ি ও ৫টি অ্যাম্বুলেন্স সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন করবে। ময়দানে আগত মুসল্লিদের জন্য ১৩টি প্রবেশ পথ থাকবে। পুরো ময়দানের নিরাপত্তায় তিনটি সেক্টরে পোশাকে ও সাদা পোশাকে সাড়ে ৭ হাজার পুলিশ দায়িত্ব পালন করবেন।
সভায় মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল, ধর্ম প্রতিমন্ত্রী ফরিদুল হক খান, গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ভারপ্রাপ্ত মেয়র আসাদুর রহমান কিরণ, মহানগর পুলিশ কমিশনার মোল্যা নজরুল ইসলামসহ বিভিন্ন দপ্তর, সংস্থা ও অধিদপ্তরের প্রতিনিধি, ইজতেমার দুই পর্বের আয়োজক শীর্ষ মুরব্বিরা অংশ নেন।
ঠিকানা/এনআই