নিজস্ব প্রতিনিধি : আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে ১৪ দলীয় জোটের শরিক দলগুলোকে তাদের বর্তমান নির্বাচনী আসনগুলো আগামী নির্বাচনেও তাদের জন্যই রাখার নিশ্চয়তা দেয়া হয়েছে। বরং কোনো কোনো দলকে এক বা একাধিক আসন দেয়ার আভাস দেয়া হয়েছে। শরিক যে কয়টি দল যোগ্য প্রার্থী থাকার পরও মনোনয়ন বঞ্চিত ছিল তাদের বিষয়ে বিবেচনার আশ্বাস দেয়া হয়েছে। আওয়ামী লীগ ও ১৪ দলের শরিক দুটি দলের শীর্ষস্থানীয় সূত্রে এ খবর জানা গেছে। বৃহত্তর দলীয় ও জোটগত স্বার্থে কোনো দলের শীর্ষস্থানীয় নেতার নাম প্রকাশ না করার একান্ত অনুরোধ জানানো হয়েছে।
নির্বাচনের এখনো এক বছরের মতো সময় বাকি থাকার পরও ক্ষমতাসীন দল থেকে আসন ভাগাভাগি নিয়ে তাড়াহুড়া কেন করা হচ্ছে তা নিয়ে শরিক দলগুলোর মধ্যে প্রশ্ন উঠেছে। শরিকদের প্রধান প্রতিপক্ষ বিএনপির বিরুদ্ধে সোচ্চার ও ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনে সম্পৃক্ত করাই এর মুখ্য উদ্দেশ হতে পারে। তারা এ-ও মনে করেন আওয়ামী লীগ তাদের প্রতারিত বা কোনরকম ছল-চাতুরির আশ্রয় নেবে না। আদর্শিক মিত্রদের তারা দূরে ঠেলবে না বিদ্যমান বাস্তবতায়। এদিকে বিএনপিও তার সমমনাদের নিয়ে সরকারবিরোধী ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন শুরু করার প্রস্তুতি নিচ্ছে। তাদের আন্দোলন নিয়ে সরকার ভীত না হলেও জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে এর গুরুত্ব নেই এমন নয়। বিশেষ করে বিএনপি তা বহির্বিশ্বে গুরুত্বের সাথে তুলে ধরার যথাযথ ব্যবস্থা নেবে।
আওয়ামী লীগও তাদের পরিকল্পনা সফল না হতে নানাভাবে প্রক্রিয়া চালাচ্ছে। বিশেষ করে তাদের জোটের শরিকদের সম্পৃক্ত না করার তৎপরতা চালানো হচ্ছে। নেতৃত্বহীন বিএনপির পক্ষে আন্দোলন কতটা সফল করা সম্ভব তা নিয়ে শরিকদের মধ্যেও হিসাব-নিকাশ চলছে। ইসলামী দলগুলোকে দূরে রাখার প্রয়োজনীয় অপ্রকাশ্য তৎপরতা চালাচ্ছে সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থা। বিএনপির বেশ কয়েকজন শীর্ষস্থানীয় নেতাসহ তাদের জোটের শরিক দলগুলোর কোনো কোনো নেতাকে নির্বাচনে ছাড় দেয়া হবে তা নিয়েও চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট নেতাদের সবকিছুই অবগত রাখা হয়েছে। আন্দোলনও নির্বাচন প্রশ্নে তাদের ভূমিকা কি হয় তা দেখার বিষয়।
১৪ দলের শরিকদের মধ্যে রাশেদ খান মেননের ওয়ার্কার্স পার্টি, হাসানুল হক ইনুর জাসদ, গণ আজাদী লীগ, শরিফ নুরুল আম্বিয়ার বাংলাদেশ জাসদ, ন্যাপ এবং জাতীয় পার্টি (জেপি) নেতাদের মধ্যে হতাশা ও অসন্তোষ রয়েছে। কারও কারও মধ্যে ক্ষোভও রয়েছে। আম্বিয়ার বাংলাদেশ জাসদ ১৪ দল থেকে বেরিয়ে গেছে। শরিক নুরুল আম্বিয়ার প্রতিপক্ষ জাসদের হাসানুল হক ইনু। তারা আম্বিয়ার নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ জাসদকে খুব একটা অগ্রসর হতে দেয়ার বিরোধী। ইনু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি পরম বিশ্বস্ততা দেখালেও রাজনৈতিক কারণে আম্বিয়া শেখ হাসিনার অপরিহার্য প্রয়োজনীয়তার কথাও অনুভব করেন। শেখ হাসিনাও আম্বিয়াকে দূরে ঠেলতে চান না। তাঁকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চলছে। সাম্যবাদী নেতা দিলীপ বড়ুয়াকে মন্ত্রিসভায় স্থান দেয়া হয়েছিল চীনের অনুরোধে। তাঁর দলের এক বা একাধিক নেতাকেও তিনি সংসদ সদস্য হিসেবে আনতে আগ্রহী। কিন্তু সাম্যবাদী দল যোগ্য, জনপ্রিয় তেমন কোন নেতাকেই দেখাতে পারছেন না। কিন্তু সাম্যবাদী দল যোগ্য, জনপ্রিয় তেমন কোন নেতাকেই দেখাতে পারছেন না। ন্যাপ মোজাফফরের নেত্রী ও অধ্যাপক মোজাফরের স্ত্রী আমেনা আহমদকে সংরক্ষিত আসনে এমপি করা হয়েছিল। নির্বাচনে তাদের কাউকে প্রার্থী করা হয়নি। জেপিকে দুটি আসন দেয়া হলেও তারা আরও দুটি আসন চায়। বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি, হাসানুল হক ইনুর জাসদ আরও দুটি আসন চায়। এসব আসনে যোগ্য, জনপ্রিয় থাকার কথাও তারা আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারক পর্যায়ে জানান। গণ আজাদী লীগ এবারে আর বঞ্চিত হতে রাজি নয়। তারা দুটি আসন চায়।
শরিক দলগুলোর হতাশা, অসন্তোষ দূর করার আশ্বাস দেয়া হয়েছে। তারা যতসংখ্যক আসনে ১৪ দলীয় জোটগত মনোনয়ন চাচ্ছেন তা না হলে অন্তত বাড়তি একটি করে আসন সংশ্লিষ্ট প্রত্যেক দলকে দেয়া হবে। আগামীতে শরিকদের যথাযথ মূল্যায়ন ও মন্ত্রিসভায় নেয়ার সম্ভাবনার কথাও শীর্ষ পর্যায়ে ভাবনায় রযেছে। শরিকদের যে সংসদ সদস্য রয়েছেন তাদের ব্যক্তিগত জনপ্রিয়তা সরেজমিন যাচাই করতেও দলগুলোর শীর্ষস্থানীয় নেতাদের জানানো হয়েছে। আওয়ামী লীগের নিজস্ব প্রতিবেদন এবং গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর গোপন প্রতিবেদনও দলগুলোর শীর্ষ নেতাদের একান্তে অবহিত করা হবে। সরকারি মহল থেকে জানান হয়েছে যে, বিএনপি সময়মতোই নির্বাচনে অংশ নেয়ার কথা ঘোষণা করবে। গোপনে তারা প্রস্তুতিও নিচ্ছেন। ১৪ দল আগামী জানুয়ারিতেই শরিক দলগুলোর সাথে প্রার্থিতা নিয়ে অনানুষ্ঠানিক আলোচনা করবে। সে অনুযায়ী সংশ্লিষ্টদের প্রস্তুতি নিতে বলা হবে। সরকারিভাবে সংশ্লিষ্ট নির্বাচনী এলাকার উন্নয়ন কাজও করা হবে।