১৭ ডিসেম্বর ঢাকায় সম্মেলন করতে চায় হেফাজত

ঠিকানা অনলাইন : কারাবন্দি নেতাকর্মীদের মুক্তি এবং ২০১৩ সাল থেকে এ পর্যন্ত হওয়া সব মামলা প্রত্যাহারের জন্য প্রধানমন্ত্রী বরাবর চিঠি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কট্টরপন্থি ধর্মীয় সংগঠন হেফাজতে ইসলাম।

সোমবার হাটহাজারীর দারুল উলুম মঈনুল ইসলাম মাদ্রাসায় হেফাজতে ইসলামের আমির মুহিবুল্লাহ বাবুনগরীর সভাপতিত্বে কেন্দ্রীয় কমিটির এক সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়।

সংগঠনের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ঢাকায় ১৭ ডিসেম্বর ‘উলামা-মাশায়েখ সম্মেলন’ করারও সিদ্ধান্ত হয়েছে সভায়। সেই সম্মেলনেও অন্যতম দাবি থাকবে ২০১৩ সাল থেকে হওয়া সব মামলা প্রত্যাহার।

রাতে হেফাজতের যুগ্ম সচিব মুহিউদ্দীন রব্বানী বলেন, ‘বৈঠকে কারাবন্দি হেফাজত নেতাকর্মীদের মুক্তি এবং ২০১৩ সাল থেকে আজ পর্যন্ত হওয়া সব মামলা প্রত্যাহারের জন্য প্রধানমন্ত্রী বরাবর আমিরে হেফাজতের পক্ষ থেকে চিঠি দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।’

কখন চিঠি দেয়া হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এখনো সময় নির্ধারণ করা হয়নি। তবে দ্রুতই যোগাযোগ করে আমিরের পক্ষ থেকে মহাসচিব আল্লামা শায়েখ সাজিদুর রহমান চিঠি নিয়ে যাবেন বলে সিদ্ধান্ত হয়েছে।’

১৭ ডিসেম্বরের সম্মেলনের বিষয়ে প্রশ্ন করলে মুহিউদ্দীন রব্বানী বলেন, ‘অনেকদিন আমাদের কোনো কর্মসূচি নেই। তাই সম্মেলন আয়োজন করা হয়েছে। আমাদের যেসব পুরনো দাবি আছে, তা তো সবাই জানেন। সেগুলো থাকবে। পাশাপাশি ২০১৩ থেকে এখন পর্যন্ত হওয়া মামলাগুলো প্রত্যাহার অন্যতম দাবি।’

অন্য এক প্রশ্নের জবাবে মুহিউদ্দীন রব্বানী বলেন, ‘আমাদের হাজারের উপর নেতাকর্মী গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। যেমন ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় প্রায় সাতশজন গ্রেপ্তার হন। তাদের মধ্যে ৩০ জনের মত এখনো জামিন পাননি। ঢাকা ও চট্টগ্রামের বেশিরভাগ নেতাকর্মী আইনি প্রক্রিয়ায় জামিনে মুক্তি পেয়েছেন।’

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়- ‘ব্যক্তি উদ্যোগে জাতীয় পর্যায়ের যে কোনো কাজে’ হেফাজতের পদ-পদবী ব্যবহার না করার জন্য সংগঠনের আমির বৈঠকে সবাইকে সতর্ক করেন।

সোমবারের বৈঠকে হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় ও ঢাকা মহানগর কমিটি সম্প্রসারণ করা হয়। এছাড়া মাওলানা তাজুল ইসলামকে আহ্বায়ক এবং মাওলানা মাওলানা লোকমান হাকিমকে সদস্য সচিব করে চট্টগ্রাম মহানগরে ১৭ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি করা হয়।

বিভিন্ন জেলায় কমিটি গঠন করার জন্য মহাসচিব আল্লামা সাজিদুর রহমানকে প্রধান করে পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট উপকমিটি গঠন করা হয়। ওই কমিটির সদস্যরা হলেন- মুহিউদ্দীন রাব্বানী, মীর ইদরীস, আব্দুল কাইয়ুম, সোবহানী ও কেফায়াতুল্লাহ আজহারী।

হেফাজতে ইসলামের মহাসচিব শায়েখ সাজিদুর রহমান, সিনিয়র নায়েবে আমির মুহাম্মদ ইয়াহইয়া, নায়েবে আমির সালাউদ্দিন নানুপুরী, আব্দুল আউয়াল, জসিম উদ্দিন, ফুরকানুল্লাহ খলিল, মাহমুদুল হাসান ফতেহপুরী, জহুরুল ইসলাম, মুহিউদ্দিন রব্বানী, মীর ইদরীস, মোহাম্মদ আলী, আব্দুল কাইয়্যুম সুবাহানী সোমবারের বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।

নারী উন্নয়ন নীতি ও শিক্ষা নীতির বিরোধিতা করে ২০১০ সালে গড়ে উঠেছিল কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক সংগঠন হেফাজতে ইসলাম। তবে যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে গণজাগরণ আন্দোলনের পাল্টায় রাজপথে নেমে সংগঠনটি বেশি পরিচিতি পায়।

শাহবাগের আন্দোলনের বিপরীতে ব্লগারদের শাস্তির দাবিতে ২০১৩ সালের ৫ মে মতিঝিলে সমাবেশ ডেকে ব্যাপক তাণ্ডব চালায় সংগঠনটি। শাপলা চত্বর থেকে প্রেস ক্লাব পর্যন্ত এলাকায় গাছ উপড়ে ফেলে তারা, দোকান-পাট, গাড়ি পুড়িয়ে দেয়, বিভিন্ন ভবনে ভাঙচুর চালায়।

পরে যৌথ অভিযান চালিয়ে তাদের মতিঝিল থেকে সরাতে হয়। সে সময় সারা দেশে ৮৩টি মামলা হয়েছিল হেফাজতের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে।

এরপর বেশ কয়েক বছর নিষ্ক্রিয় থাকা হেফাজতের নেতারা মহামারীর মধ্যে ২০২০ সালের শেষ দিকে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য স্থাপনের বিরোধিতায় সরব হন। ২০২১ সালের মার্চে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীরা অনুষ্ঠানে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সফরের বিরোধিতায় কর্মসূচি নিয়ে ফের রাজপথে নামে ধর্মভিত্তিক দলটি।

তাদের বিক্ষোভ ও হরতালের কর্মসূচি থেকে কয়েকদিনে পুলিশের সঙ্গে সংঘাতে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও চট্টগ্রামে সংঘাত-সহিংসতায় ডজন খানেক প্রাণহানি ঘটে। এরমধ্যে ব্রাহ্মণবাড়িয়া, চট্টগ্রামের হাটহাজারীর ঘটনার সঙ্গে শাপলা মতিঝিলের ঘটনার মিল দেখা যায়। হাটহাজারী ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বিভিন্ন সরকারি স্থাপনা, পুলিশ ফাঁড়ি, রেল স্টেশন ভাংচুর ও আগুন দেওয়া হয়।

সে সময় ব্রাহ্মণবাড়িয়াসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে মোট ১৫১টি মামলা হয়, আসামি করা হয় হেফাজতের সোয়া তিন হাজার নেতাকর্মীকে। সাবেক যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হকসহ বেশ কয়েকজন শীর্ষ নেতা গ্রেপ্তার হন। বেরিয়ে আসে চাঞ্চল্যকর বিভিন্ন তথ্য।

গোয়েন্দা পুলিশের তরফ থেকে বলা হয়, হেফাজতে ইসলাম নাশকতার মাধ্যমে রাষ্ট্রক্ষমতা দখলের ষড়যন্ত্র করেছিল। আর সংগঠনটিতে বিদেশ থেকেও অর্থ আসত।

ঠিকানা/এসআর