ঠিকানা অনলাইন : ফুটবল বিশ্বকাপ যেন এক আক্ষেপের নাম দক্ষিণ এশিয়ানদের জন্য। কারণ এর আগের ২১ আসরে কোনোটিতেই অংশগ্রহণের সুযোগ মেলেনি এই অঞ্চলের কোনো দেশের। অথচ ১৯৫০ বিশ্বকাপে খেলার সুযোগ পেয়েও তা হেলায় হারায় ভারত। মূলত এআইএফএফ কর্তাদের উদাসীনতা আর বুট পরে খেলার অনভ্যস্ততাই এর বড় কারণ।
তখনও তাবৎ দুনিয়ায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ধ্বংসযজ্ঞ৷ এরই মধ্যে সবাইকে এক সুতোয় বাঁধতে বিশ্বকাপ আয়োজনে উঠেপড়ে লাগে ফিফা৷ কিন্তু বিপত্তিটা অন্যখানে৷ বিশ্বযুদ্ধের ধকলে নাকাল ইউরোপ অসম্মতি জানায় স্বাগতিক হতে৷ তবে আগ্রহ প্রকাশ করে ব্রাজিল৷ অগত্যা বাধ্য হয়েই ফিফার সায়৷ সালটা ১৯৫০৷
ঠিক হয় আগের আসরের শিরোপাজয়ী ইতালি ও স্বাগতিক ব্রাজিল ছাড়াও যেখানে অংশ নেবে ইউরোপের ৭, আমেরিকার ৬ ও এশিয়ার ১ দল৷ এশিয়া থেকে বাছাই পর্বে ফিলিপাইন, বার্মা, ইন্দোনেশিয়ার সঙ্গে ডাক পায় ভারতও৷ কিন্তু বাকি তিন দল অংশ নিতে না চাইলে সরাসরি বিশ্বকাপে জায়গা মেলে ভারতের৷
অধিনায়ক শৈলেন মান্নার নেতৃত্বে টিম ইন্ডিয়া তখন ডার্ক হর্স৷ ৪৮ অলিম্পিকে খালি পায়ে খেলে নির্ধারিত সময়ে তারা রুখে দিয়েছিল ফ্রান্সকে৷ কিন্তু বিশ্বকাপের মাহাত্ম্য তখনও অনুধাবন করতে পারেনি এআইএফএফ কর্তারা৷
তারা নীতিগতভাবে সিদ্ধান্ত নেয় বিশ্বকাপে অংশগ্রহণ না করার৷ এর পেছনে যুক্তি হিসেবে বলা হয় জাহাজ ভাড়া, অনুশীলনের সময় কম থাকা, বিদেশি মুদ্রার পরিমান কম থাকা এবং টানা সমুদ্রযাত্রা করে ব্রাজিলে যাওয়া৷ যদিও চাউর করা হয় বুট পায়ে খেলার অনভ্যস্ততার কথা৷ কারণ ভারতীয় দলের সবাই তখন খেলত খালি পায়ে৷
স্বাগতিক ব্রাজিল তখন প্রস্তাব দেয় পুরো খরচ বহন করার৷ কিন্তু তাতে সায় মেলেনি এআইএফএফ এর৷ ফলে বাধ্য হয়েই ১৩ দল নিয়েই বিশ্বকাপ আয়োজন করে তারা৷ নতুন করে সাজাতে হয় ফিকশ্চার৷ কারণ তুরস্ক আর স্কটল্যান্ডও শেষ পর্যন্ত অংশ নেয়নি এই আসরে৷
তবে সুযোগ পেয়েও ভারতের বিশ্বকাপে অংশগ্রহণ না করার ফল ছিল সূদুরপ্রসারী৷ যেই বিশ্বকাপে তারা অংশ নিলে আজ হয়তো বদলে যেতো গোটা দক্ষিণ এশিয়ার ফুটবল৷ যে ঢেউ হয়তো আছরে পড়তো বঙ্গভূমিতেও৷
ঠিকানা/এসআর