১ ফেব্রুয়ারি থেকে অতিরিক্ত সার্চ চার্জ: এবার মরার উপর খাড়ার ঘা ॥ ইয়েলো ট্যাক্সি শিল্প ধ্বংসের পাঁয়তারা

ঠিকানা রিপোর্ট: নিউইয়র্ক সিটির ট্রেন এবং বাস সার্ভিস ছাড়া বলতে গেলে একমাত্র বাহন ছিলো ইয়েলো ট্যাক্সি। প্রয়োজনীয়তার কারণে ইয়েলো ট্যাক্সি নিউইয়র্ক সিটিতে এক সময় অনেকটা শিল্প হিসাবে গড়ে ওঠে। ইয়েলো ট্যাক্সির এমন চাহিদা ছিলো যে, অনেকে গ্যারেজে গিয়ে ট্যাক্সি না পেয়ে ফিরে আসতেন। আবার মেডেলিয়ানের দামও ছিলো আকাশ চুম্বি। গত কয়েক বছর ধরে বিশেষ করে উবার, জুনো, লিফ্টসহ অন্যান্য গাড়ি রাস্তায় নামার কারণে ইয়েলো ট্যাক্সি সার্ভিসে ধস নামে। জীবন যাত্রার মান রক্ষা করতে না পেরে বেশ কয়েকজন ইয়েলো ট্যাক্সি ড্রাইভার আত্মহত্যাও করেন। তারপরেও অবস্থার যেন পরিবর্তন হয়নি। যারা শেষ সময়ে মেডেলিয়ান ক্রয় করেছেন সেই মেডেলিয়ান এখন তাদের জন্য গলার ফাঁস হয়ে দেখা দিয়েছে। ব্যবসা মন্দের কারণে তারা মেডেলিয়ানের কিস্তির অর্থও দিতে পারছেন না। আবার মেডেলিয়ান বিক্রিও করতে পারছেন না। অন্যদিকে উবার, জুনো, লিফটসহ অন্যান্য গাড়ি রাস্তায় নামার কারণে অনেক ইয়েলো ট্যাক্সি ডাইভার নিজেরা গাড়ি ক্রয় করে উবারসহ অন্যান্য গাড়ি চালানো শুরু করেছেন। যে কারণে ইয়েলো ট্যাক্সির ড্রাইভারের সংকটও দেখা দেয়।
বর্তমানে নিউইয়র্ক সিটিতে প্রায় ৫০ হাজার ড্রাইভার রয়েছেন। যার মধ্যে প্রায় ১৪ হাজার ইয়েলো ট্যাক্সি ড্রাইভার। প্রতিদিন প্রায় ১০ হাজার ড্রাইভার কাজ করছেন। ৫০ হাজার ড্রাইভারের মধ্যে ৭০% ড্রাইভার মুসলমান এবং প্রায় ২০% ড্রাইভার বাংলাদেশী। ২০১৮ সালের শেষের দিকে নিউইয়র্ক সিটির গভর্নও এন্ড্রু কুমো ইয়েলেঅ ট্যাক্সির উপর নতুন চার্স চার্জ ধার্য্য করেন। এই অতিরিক্ত সার্চ চার্জের বিরুদ্ধে নিউইয়র্ক ট্যাক্সি ওয়াকার্স এলায়েন্স এবং ২ জন মেডেলিয়ান মালিক কুইন্স কোর্টে মামলা করেছিলেন গত ২০ ডিসেম্বর। মামলা গ্রহণের সময় মাননীয় আদালত ইনজেনশন জারি করেন যাতে করে অতিরিক্ত সার্চ চার্র্জ যোগ করা না হয়। বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, মামলাটি এখনো চলছে। মামলার আরেক শুনানী অনুষ্ঠিত হয় গত ৩১ জানুয়ারি। সেই সময় মাননীয় আদালত তার ইনজেশন তুলে নেয়। ফলে ১ ফেব্রুয়ারি থেকে ইয়েলো ট্যাক্সিতে অতিরিক্ত চার্জ চার্স চালু হয়। মামলার পরবর্তী শুনানী অনুষ্ঠিত হবে আগামী ২১ ফেব্রুয়ারি। যদিও মামলার বাদীরা মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত অতিরিক্ত চার্স চার্জের নিষেধাজ্ঞাটি অব্যাহত রাখার রাখার আবেদন করেছিলেন কিন্তু মাননীয় আদালত তা আমলে নেননি। যে কারণে ১ ফেব্রুয়ারি থেকে অতিরিক্ত চার্স চার্জ চালু হয়েছে। অতিরিক্ত সার্চ চার্জ অনুযায়ী এখন একজন ইয়েলো ট্যাক্সির যাত্রীতে গাড়িতে উঠলেই ভাড়া ছাড়া পে করতে হবে (রাস আওয়ার ছাড়া) ৫.৮০ ডলার। যা আগে পে করা হতো ৩.৩০ ডলার। রাস আওয়ারে এই অর্থেও পরিমাণ দাঁড়াবে ৬.৮০ ডলার। রাত ৮টা পর ৬.৩০ ডলর। রাস আওয়ার হচ্ছে সোমবার থেকে শুক্রবার বিকেল ৪টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত। অন্যদিকে উবারসহ অন্যান্য গাড়ির জন্য এই চার্জ হচ্ছে মাত্র ২.৭৫ ডলার। আবার উবার এক্সের জন্য মাত্র .৭৫ ডলার। নিউইয়র্ক ট্যাক্সি এলায়েন্সের কর্মকর্তা মোহাম্মদ টিপু সুলতান ঠিকানাকে জানান, নিউইয়র্ক সিটির গভর্নর এন্ড্রু কুমো আসলে চান না, নিউইয়র্কে ইয়েলো ট্যাক্সি ইন্ড্রাস্টি থাকুক। তিনি ইয়েলো ট্যাক্সিকে ধ্বংস করার পাঁয়তারা করছেন। তা না হলে বার বার ইয়েলো ট্যাক্সির উপর সার্চ চার্জ লাগাতেন না। তিনি বলেন, এটা আমাদের উপর মরার উপর খাড়ার ঘা। ইয়েলো ট্যাক্সির উপর সার্চ চার্জ লাগিয়ে বাস্তবিক অর্থে উবারসহ অন্যান্য অন্যান্য গাড়ি চালকদের উৎসাহিত করছেন।
এ নিয়ে গত ১৪ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় নিউইয়র্ক ট্যাক্সি এলায়েন্সের উদ্যোগে জ্যাকসন হাইটসের পালকি পার্টি সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। মোহাম্মদ টিপু সুলতানের পরিচালনায় সংবাদ সম্মেলনে ভৈরবী দেশাইসহ ট্যাক্সি এলায়েন্সের অন্যান্য কর্মকর্তরাও উপস্থিত ছিলেন। তারা বলেন, ২০১৪ সাল থেকে ইয়েলো ট্যাক্সির ড্রাইভারদের আয় কমেছে প্রায় ৪০%। বছরে এমটিএকে দেয়া হচ্ছে প্রায় ১ বিলিয়ন ডলার। তারা বলেন, অতিরিক্ত চার্স চার্জের কারণে আগামীতে ইয়েলো ট্যাক্সিও আয় আরো ৩০% কমে যাবার সম্ভাবনা রয়েছে। তারা ইয়েলো ট্যাক্সি ইন্ড্রাস্ট্রিকে রক্ষা করার স্বার্থে সব ইয়েলো ট্যাক্সির সংগঠন এবং বাংলাদেশী কম্যুনিটিকে এগিয়ে আসার আহবান জানান। সেই ট্যাক্সি ড্রাইভারদের এই আন্দোলনে সম্পৃক্ত হবার আহবান জানান।